Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অস্ট্রেলিয়ায় প্রধানমন্ত্রী, আ’লীগ ব্যস্ত আয়োজনে বিএনপি প্রতিবাদে


২৭ এপ্রিল ২০১৮ ১১:৩৭

ড. শাখাওয়াৎ নয়ন, সিডনি থেকে

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অস্ট্রেলিয়া সফর উপলক্ষ্যে সিডনিসহ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে, আওয়ামীলীগ ঘরানার বিভিন্ন অংগসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যারপরনাই উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে বিএনপি-জামায়াত ইসলামীর নেতা-কর্মীদের মধ্যেও প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কিংবা আরো বেশি কিছু করার প্রস্তুতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী তিনদিনের সরকারি সফরে শুক্রবার সকালে (২৭ এপ্রিল) থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমানে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এসে পৌছান। তিনি সিডনিতে ‘গ্লোবাল সামিট অন উইমেন’ সম্মেলনে যোগ দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন’ বাংলাদেশে নারী শিক্ষার প্রসার এবং নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে এই সম্মাননা দিচ্ছে। শুক্রবার তিনি সিডনির আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠেয় এক অনুষ্ঠানে ভিয়েতনামের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাই নগক থিন এবং কসোভোর সাবেক প্রেসিডেন্ট অ্যাতিফেত জাহজাগার সাথে গ্লোবাল উইমেন’স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৮ গ্রহণ করবেন। এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং জাতীয় উন্নয়নের মূলধারায় নারীদের সম্পৃক্তকরণে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরবেন।

আগামীকাল শনিবার (২৮ এপ্রিল) অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এরই মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস অস্ট্রেলিয়ার

প্রধানমন্ত্রী ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন সিডনিতে স্থাপিত বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্যে পুস্পস্তাবক অর্পণ করবেন এবং ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় হোটেল সোফিটেল-এ একটি নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছর পর শেখ হাসিনার সিডনি সফরকে কেন্দ্র করে আওয়ামী ঘরানার সকল সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এত বড় একটি নাগরিক সংবর্ধনায় সোফিটেল হোটেলের হলরুমের ৮০০ আসনও যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। কারণ হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা প্রিয় নেত্রীকে এক নজর দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আসন সংখ্যার সীমাবদ্ধতার কারণে কাকে প্রবেশপত্র দেয়া হবে আর কাকে দেয়া হবে না?- এই সমস্যায় আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা যখন তখন বাক-বিতণ্ডায়ও জড়িয়ে পড়ছেন।

নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য শেখ শামিমুল হকের নেতৃত্ব সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্টিয়ারিং কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ব্যারিস্টার সিরাজুল হক, ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন, ড. মাসুদুল হক, ড. শামস রহমান, ডাঃ আয়াজ চৌধুরী এবং প্রদ্যুত সিং চুন্নু। স্টিয়ারিং কমিটি নিয়ে শুরুতে বিভিন্ন রকম জোরালো আপত্তি উঠলেও, আস্তে আস্তে প্রতিবাদের ঝড় দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে  নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের খরচপাতির কারণ দেখিয়ে আওয়ামীলীগের কোনো কোনো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগও পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দেয়ার সুযোগ, প্রধামন্ত্রীর সাথে ছবি তোলার সুযোগ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে বেশুমার টাকা-পয়সা লেনদেনের খবর, সিডনির বাঙালিপাড়াখ্যাত লাকেম্বায় মুখরোচক গল্পের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

চাঁদাবাজি প্রসংগে শেখ শামীমুল হক বলেন, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ব্যয় হবে একুশ হাজার ডলার। তাই সাত সদস্য বিশিস্ট স্টিয়ারিং কমিটির প্রত্যেকে তিন হাজার ডলার করে কন্ট্রিবিউট করবে। স্টিয়ারিং কমিটির মিটিং-এ আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, এখানে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির সুযোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

ব্যারিস্টার সিরাজুল হক বলেন, ‘এসব কথা কাল্পনিক। ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য এসব কথা প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া রাজনৈতিক দল সব সময়ই কর্মীদের চাঁদার টাকায়ই চলে। সেটা যার যার সামর্থ অনুযায়ী কন্ট্রিবিউট করে, কোনো ধরনের জোর-জবরদস্তি নেই’। আওয়ামীলীগের মধ্যে বিভক্তি কিংবা মতানৈক্য প্রসংগে ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন বলেন, ‘আমাদের নিজেদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব যা-ই থাকুক না কেন, নেত্রীর প্রশ্নে কোনো বিভেদ নেই। সন্তানদের মধ্যে মনমালিন্য থাকতেই পারে, কিন্তু মায়ের ব্যাপারে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, আমরা ঐক্যবদ্ধ।’

অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর সিডনি সফর উপলক্ষ্যে কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে। প্রধানমন্ত্রী যে হোটেলে থাকবেন তার সামনে, সিডনির আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে এবং যেখানে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হবে তার সামনে বিক্ষোভ দেখাবে দলটি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, অস্ট্রেলিয়ার সহসভাপতি জনাব ফজলুল হক শফিক বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দূর্নীতি এবং স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করবো। উক্ত বিক্ষোভ কর্মসুচিতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে কিংবা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য চাওয়া হবে।’

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ফরেন এফেয়ার্স কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রাশেদুল হক বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। শান্তিপুর্ণ উপায়ে বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করবে। অস্ট্রেলিয়ান আইন-কানুনের কোনো ধরনের ব্যতয় ঘটে, এমন কোনো কিছুই করবে না।’

উল্লেখ্য, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন নেতা জানান, অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রভাবশালী টিভি চ্যানেলের সাথে তারা লিয়াজো করার চেস্টা করছেন; যাতে উক্ত চ্যানেলের কোনো একজন ডাকসাইটে সাংবাদিককে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করা হয়।

সারাবাংলা/এসএন/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর