Thursday 05 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনিশ্চয়তা ‘কেটেছে’, শপথের অপেক্ষায় শাহাদাত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:০৩ | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:২৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠা এক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোটে বিজয়ী দেখিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করা হয়েছিল। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছিল ৫২ হাজার ৪৮৯।

নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে রেজাউল করিমসহ নয়জনকে বিবাদী করে মামলা করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির তৎকালীন আহবায়ক শাহাদাত হোসেন। নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণ পাওয়ায় গত ১ অক্টোবর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

আদালতের রায়ের সাতদিন পর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন অপেক্ষা শুধু শপথের। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নগরপিতা’র চেয়ারে বসবেন শাহাদাত, যাকে চসিক নির্বাচনের পর থেকে দলের নেতাকর্মীরা ‘জনতার মেয়র’ হিসেবে অভিহিত করে আসছিলেন।

নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় শপথের আয়োজন করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাবার পর শপথের ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা আছে কি না, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের কাছে মতামত চাওয়া হয়। সোমবার (১৪ অক্টোবর) আইন মন্ত্রণালয় থেকে শপথের পক্ষে মতামত পাঠানো হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। এখন আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতি শেষ করে দুই-তিনদিনের মধ্যেই শপথের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। এরপর যে কোনো মুহুর্তে মেয়রের দায়িত্ব নিতে পারবেন শাহাদাত হোসেন।

বিজ্ঞাপন

আদালত শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণার পর থেকে এ সংক্রান্ত অগ্রগতি নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একাধিক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। তাদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মতামত পাওয়ায় শাহাদাত হোসেনকে শপথ পড়ানোর ক্ষেত্রে আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি শুনেছি, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগ শপথের পক্ষে মতামত দিয়েছে। এখন আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। শপথের দিন নির্ধারণ হলে অবশ্যই সেটি আমাদের জানানো হবে। সে অনুযায়ী আমাদর আনুষাঙ্গিক কিছু কাজ থাকে। সেগুলোর প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। এছাড়া আমরা নতুন মেয়রকে রিসিভ করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’

আইন মন্ত্রণালয় শপথের পক্ষে মতামত দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর তথ্য পৌঁছেছে শাহাদাত হোসেনের কাছেও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের গেজেট হওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে মতামত চেয়ে সেটি আবার আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে পূজার ছুটি শুরু হওয়ায় একটু বিলম্ব হয়েছে। আজ (সোমবার) বিকেলে আইন মন্ত্রণালয় তাদের লিখিত মতামত পাঠিয়ে দিয়েছে। বলা যেতে পারে, শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের আগে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কাজ হয়ে গেছে। আর কোনো অনিশ্চয়তা দেখছি না।’

চলতি সপ্তাহের মধ্যেই অর্থাৎ সরকারি ছুটি শুরুর আগে আগামী তিনদিনের মধ্যে শপথের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে পারে বলে আশা করছেন শাহাদাত হোসেন।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। ১৭ আগস্ট স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ সংশোধন করে সরকার। ১৯ আগস্ট সংশোধিত আইন অনুযায়ী, রেজাউল করিম চৌধুরীসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়।

একইদিন সরকারি কর্মকর্তাদের সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

‘নিজে শুদ্ধ হও, অপরকে শুদ্ধ করো’

২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের প্রথম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আইন অনুযায়ী, প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ। সে হিসেবে ২০২৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, চলতি অক্টোবরে শপথ নিলে শাহাদাত হোসেনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ হবে ১৬ মাস। যদি পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে তিন মাস আগে তাকে পদ ছাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে মেয়াদ হবে ১৩ মাস।

যেটুকু সময় পাবেন, তাতে চট্টগ্রামবাসীকে সচেতন করার ক্ষেত্রে, মানুষ যাতে এ শহরকে নিজের শহর মনে করে, সেই প্রচারণা ও কর্মকাণ্ডের ওপর সর্বোচ্চ জোর দেবেন বলে জানিয়েছেন ডা. শাহাদাত হোসেন।

সারাবাংলা’র সঙ্গে আলাপে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি সিটি – এটা আমার নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। এটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। সিটি করপোরেশনের নিয়মিত কিছু কাজ আছে, সেগুলোর পাশাপাশি এখন ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে, জলাবদ্ধতা একটা বিষয় তো আছেই, এসব রুটিন ওয়ার্ক তো থাকবেই।’

নিজে বদলাও, অপরকে বদলে দাও/ নিজে শুদ্ধ হও, অপরকে শুদ্ধ করো – নগরজুড়ে এমন প্রচারণা শুরু করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণসচেতনতা তৈরির একটা কর্মসূচি, এটাকে আমি খুব বেশি প্রায়োরিটি দিচ্ছি। এটা আমি জোরেশোরে শুরু করবো। এ শহর আমার একার নয়, শহরে যারা বসবাস করেন এটা সবার শহর। এ শহরকে ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি হিসেবে আমি একা গড়তে পারবো না, সবাই মিলে গড়তে পারবো। এটা মানুষকে বুঝতে হবে, বোঝাতে হবে। সবার মধ্যে এ উপলব্ধিটা আসতে হবে যে, এটা আমার প্রাণের শহর। এ শহরে আমি নিজে শুদ্ধ হবো, অপরকে শুদ্ধ করবো।’

চট্টগ্রামে বিএনপির সুশিক্ষিত, সজ্জন নেতা হিসেবে পরিচিত পেশায় চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘স্নেহভাজন’ হিসেবে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনি আলোচিত। ২০০৮ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তরুণ নেতা শাহাদাত শীর্ষ বিভিন্ন পদে থেকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রতিকূল সময়ে ২০১০ সালে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে সভাপতি ও ডা. শাহাদাত হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করে দিয়েছিল কেন্দ্র। ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট সেই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি ও আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। পরের বছর ২৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।

২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর আবার সেই কমিটিও ভেঙ্গে দেয়া হয়। তবে শাহাদাতকে আহবায়ক এবং বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। সাড়ে তিনবছর পর গত ১৩ জুন সেই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরশাদ উল্লাহকে আহবায়ক ও নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করে গত ৬ জুলাই দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র।

এরপর চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দৃশ্যপট থেকে শাহাদাত কিছুটা আড়ালে গেলেও আদালতের রায়ে মেয়র ঘোষিত হওয়ার পর থেকে তিনি আবারও রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন।

সারাবাংলা/আরডি/এসআর

‘নিজে শুদ্ধ হও অপরকে শুদ্ধ করো’ চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়র ঘোষণা শপথের অপেক্ষা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর