আটকের ২৪ ঘণ্টাতেও গ্রেফতার দেখানো হয়নি বিএনপি নেতা মিজানকে
২৭ জুন ২০১৮ ০১:২৪
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: গুলশান ১-এর বাসা থেকে আটকের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরও গ্রেফতার দেখানো হয়নি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) মিজানুর রহমান মিজানকে। একইসাথে একই সময় আটক বাকি পাঁচ জনকেও গ্রেফতার দেখানো হয়নি।
আটক ব্যক্তিরা হলেন— মিজানুর রহমান মিজান, আসাদ আলী, মোহাম্মদ জিন্নাত, জুনায়েদ হোসেন ও শফিকুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর ছিদ্দিক সারাবাংলা’কে বলেন, ‘দিনভর অভিযোগের জন্য অপেক্ষা করেছি। এখনও কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আসেনি। শুনেছি আসবে।’ তবে কখন আসবে, তা তিনি বলতে পারেননি।
বিএনপির অভিযোগ, মিজানুর রহমানসহ পাঁচ জনকে সোমবার (২৫ জুন) রাত ১০টার দিকে আটক করা হয়। এরপর মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেওয়া হয়নি, আদালতেও নেওয়া হয়নি তাদের। অথচ সংবিধানের ৩৩ (২) ধারা অনুযায়ী কোনো নাগরিককে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আটক করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে তোলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে কারণে অবিলম্বে আটক ছয় জনকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
এর মধ্যে মঙ্গলবার (২৬ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মশিউর রহমান সারাবাংলা’কে বলেন, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে। এটি শেষ হলে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা করা হবে।
মঙ্গলবার রাতেই মামলা করে বুধবার (২৭ জুন) সকালের দিকে ছয় জনকে আদালতে উপস্থিত করা হবে বলে জানান মশিউর রহমান।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা মেজর (অব.) মিজান আটক, মামলা প্রক্রিয়াধীন
মিজানের ঠিকানা গুলশান-১ হলেও আসাদ আলীর বাড়ি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি, জিন্নাতের বাড়ি ঢাকার আশুলিয়া থানার কোনাপাড়া, জুনায়েদ হোসেনের বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মহাদীঘি ও শফিকুল ইসলামের বাড়ি ঢাকার আশুলিয়া থানার জিরানির কথা বলেন পুলিশ।
গোয়েন্দা সুত্রে জানা গেছে, মেজর (অব.) মিজানুর রহমান মিজান পূর্বপরিকল্পিত একটি গ্রুপ তৈরি করে গাজীপুরের নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছিলেন। তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত ভোটারদের সঙ্গে মিশে কিছু উটকো (ছোট) ঝামেলা তৈরি করে বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার করে নির্বাচন বানচালের পরিকল্পনা করছিলেন।
এজন্য মিজানের সহযোগী চার জনের ওই গ্রুপটির হাতে বিশেষভাবে তৈরি ডিভাইস সম্বলিত হাতঘড়ি দেওয়া হয়েছিল। সেই হাতঘড়ি ও ডিভাইসসহ ওই চার জনকেও আটক করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল গাজীপুরের নির্বাচনে বিতর্কিত করা। এজন্য তারা বিএনপির অনেক নেতার সঙ্গেও কথা বলেছে। তবে কোন কোন নেতার সাথে মিজান কথা বলেছেন, তা তদন্তের স্বার্থে এখনই বলতে রাজি হননি ডিবি কর্মকর্তারা। আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড পেলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে।
গুলশান থানার পুলিশের একজন এসআই নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, মিজানের নির্দেশে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় আক্তার জামান নামে বিএনপির এক ব্যক্তির টিনশেড বাড়িতে বসে ওই চারজন পরিকল্পনা করছিলেন। এ সময় তারা মিজানের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। সেই রেকর্ডও গোয়েন্দা পুলিশ উদ্ধার করেছে। গুলশান-১ এর ৮ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়ির ৬০২ নম্বর ফ্লাট থেকে মিজানকে আটকের পর আশুলিয়া থেকে বাকি চারজনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৬ জুন) দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য সারাবাংলাকে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টের অধিনে গুলশান থানায় মামলা দেওয়ার পর বিকেলে আদালতে তোলা হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/এমআই/টিআর