Sunday 04 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এখনো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হচ্ছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৪ মে ২০২৫ ১৪:২৫ | আপডেট: ৪ মে ২০২৫ ১৬:৫৫

সেমিনারে কথা বলছেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ।

‎ঢাকা: গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, সাংবাদিকরা এখনো গালাগালি ও শারীরিক হামলার শিকার হচ্ছেন, অনেকে আবার মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হচ্ছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

‎‎রোববার (৪ মে) রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ এ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে ‘ব্রেভ নিউ বাংলাদেশ: রিফর্ম রোডম্যাপ ফর প্রেস ফ্রিডম’ বা ‘সাহসী নতুন বাংলাদেশ: গণমাধ্যমের স্বাধীনতার রোডম্যাপ সংস্কার’ শীর্ষক এক সেমিনারে কামাল আহমেদ এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

এ সেমিনারে তিনি ‘সাহসী নতুন বাংলাদেশ: গণমাধ্যমের স্বাধীনতার রোডম্যাপ সংস্কার’ শীর্ষক মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

‎বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করে ইউনেসকো ঢাকা অফিস, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সুইডেন দূতাবাস।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতায় আজও বৈরী পরিবেশে টিকে থাকার লড়াই চলছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, শারীরিক ও মৌখিক হামলা এবং সামাজিক মাধ্যমে হুমকি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেলফ সেন্সরশিপও বেড়েছে। সম্প্রতি একজন উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার জেরে তিনজন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করার ঘটনায় অনলাইন ও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত বা প্রতিকার চেয়ে অনেকেই একটি স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন ও সাংবাদিক সুরক্ষা অধ্যাদেশ দ্রুত প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছেন।

‎গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘অনেকে বলছেন সংবাদমাধ্যমকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরের যে প্রস্তাব কমিশন করেছে, তা অবাস্তব। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম লাভ করতে পারছে না বা রুগ্ন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব গণমাধ্যম কোম্পানির মধ্যে যাদের হিসাব রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির দফতর থেকে পাওয়া গেছে, তার আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় দেড় ডজনের বেশি সংবাদমাধ্যম লাভজনক, যা প্রমাণ করে, এ ধরনের রূপান্তর মোটেও অযৌক্তিক নয় এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমের বিনিয়োগ বৈধ উৎস থেকে এসেছে কি না, তা জানানোর কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে কালোটাকা ব্যবহৃত হয়েছে। পরিণতিতে সংবাদমাধ্যম হয়ে উঠেছে একেকটি গোষ্ঠীর হাতিয়ার, যার মাধ্যমে তারা তাদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যকে প্রশ্নের বাইরে রাখতে বা সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে।

‎‎এ সময় প্রস্তাবিত সাংবাদিক সুরক্ষা অধ্যাদেশ এবং একটি স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠন করলে এ ধরনের ঘটনা তদন্ত ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় তা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন কামাল আহমেদ। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিসংখ্যক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে মূল সমস্যা হিসেবে অবিহিত করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের নিহত হওয়ার পরিসংখ্যান উল্লেখ করে কামাল আহমেদ বলেন, এ বছরে প্রথম চার মাসে ১৫ জন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নের তথ্য অনুসারে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে নিহত  সাংবাদিকদের সংখ্যা ২০০ জন। এই ট্র্যাজেডির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যারা নিজেদের মুক্ত সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক দাবি করেন, তারা নীরবতা পালন করছেন। শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি পরিচয়ের কারণে তাদের এই নীরবতা। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, যদি কোনো পশ্চিমা সাংবাদিকের প্রাণ হারাতো, তাহলে কী পরিমাণ ক্ষোভ ও বিক্ষোভ দেখা যেত।

তিনি বলেন, সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো পশ্চিমা দেশগুলোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির সহযোগিতায় ইসরায়েল এমন হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এআইয়ের সামরিক ব্যবহার চলছে। এমনকি আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়েও অনেক সংবাদমাধ্যম বন্ধ হতে দেখা গেছে। নতুন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি সাংবাদিকরা আরও চ্যালেঞ্জের মুখে। এই অবস্থায় এ দেশের সাংবাদিকদের আরও সাহসী হতে হবে। বৈশ্বিক বাস্তবতায় সাহসী হওয়া কঠিন হয়ে গেছে। এ মুহূর্তে গণমাধ্যম সংস্কারের চ্যালেঞ্জ অনেক কঠিন।
‎‎
সেমিনার সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় ‎সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন এএফপির ব্যুরো চিফ শেখ সাবিহা আলম, বিজেসির চেয়ারম্যান রেজয়ানুল হক রাজা এবং টাইমস মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ।

সারাবাংলা/এনএল/এনজে

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সাংবাদিক হত্যা মামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর