জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই
‘ভারত ৫৪টি অভিন্ন নদীকে মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে’
৪ মে ২০২৫ ২০:১৫ | আপডেট: ৪ মে ২০২৫ ২৩:৩৭
রংপুর: ভারত ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি যদি সঠিক সময় না দেয় তাহলে বাংলাদেশেও অনেক কিছু হিসাব-নিকাশ করবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও নদীভাঙন রোধে তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ নামে সংগঠনের আয়োজনে রংপুরে রোববার (৪ এপ্রিল) গণপদযাত্রা কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘পানি কোনো মারণাস্ত্র কিংবা যুদ্ধাস্ত্র হতে পারে না। পৃথিবীতে একমাত্র ভারত সেটি দেখিয়ে দিল পানি মারণাস্ত্র কিংবা যুদ্ধাস্ত্র হতে পারে। ৫৪টি অভিন্ন নদীকে ভারত মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কতটা অমানবিক হলে এমন কাজটা করতে পারে।’
এ সময় মির্জা আব্বাস বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম. ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘সিলেটের সুরমা কুশিয়ারা নদীর উজানে ভারত সরকার টিপাইমুখ বাঁধ দেওয়ার প্রতিবাদ করায় ইলিয়াস আলীকে প্রথমে গুম পরবর্তী সময়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এখন শঙ্কিত তিস্তার ন্যায্য হিস্যা নিয়ে কাজ করা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুকে নিয়ে চিন্তিত।’
এ সময় ভারতকে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘ভারত যদি সঠিক সময়ে বাংলাদেশকে পানি না দেয় তাহলে বাংলাদেশও অনেক হিসাব-নিকাশ করবে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা বন্দর, ট্রানজিটসহ অনেক বিষয়ে বাংলাদেশ কঠোর হবে। আমাদের তিস্তার পানি চাই, ফারাক্কার পানি চাই। দেশের যেখানে পানি দরকার, সেখানে তা দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সরকার যদি ক্ষমতায় না আসতো তাহলে অনেক আগেই তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীর বিষয়গুলো সমাধান হয়ে যেত উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘শেখ হাসিনার মতো জান্তা সরকার ক্ষমতায় না থাকলে ভারত কখনোই এমন করার সাহস পেত না।’
বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা নদীসহ বিভিন্ন নদীর যে চলমান সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সমাধান করা হবে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্যা আমরা আদায় করে ছাড়ব। এখন শুধু একটি নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষায় রয়েছে জনগণ; যে সরকার তিস্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে গুরুত্ব দেবে।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা ভারতের কাছে কিছু চাই না, শুধু পানি চাই। আমরা বকশিশ চাই না, ভিক্ষা চাই না— আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যার পানি চাই। আজ না হোক, কাল দিতে হবে। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। পূর্ববর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে এই হিসাব-নিকাশ করেনি, কারণ তারা সরকারে থাকার ইচ্ছায় ভারতকে চাপে ফেলেনি।’
গণপদযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব দুলু। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, বিএনপি নেতা এমদাদুল হক ভরসা প্রমুখ।
এদিকে গণপদযাত্রাকে কেন্দ্র করে দুপুর ১টা থেকে তিস্তা নদীবেষ্টিত বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে হাজারো মানুষ রংপুর শহরে আসতে শুরু করেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ঢল নামে। ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’— এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে শাপলা চত্বর এলাকা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষক সংগঠন, শ্রমজীবী মানুষ, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পদযাত্রাটি এক বিশাল গণআন্দোলনে রূপ নেয়। ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে নদীপারের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এতে অংশ নেন।
এর আগে ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী তিস্তাপাড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তিস্তাপারের মানুষজন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রোববার গণপদযাত্রা কর্মসূচি আয়োজন করা হলো।
সারাবাংলা/পিটিএম