উদ্ভিদের রসে সাবেক সেনা কর্মকর্তার ইঞ্জিন অয়েল উদ্ভাবন!
৭ মে ২০২৫ ০৮:০০
নীলফামারী: নীলফামারীর ডিমলার বালাপাড়া ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাজী আশরাফ আলী দেশীয় উদ্ভিদের রস দিয়ে ইঞ্জিন অয়েল তৈরি করেছেন। মাঠ থেকে সংগ্রহ করা গাছগাছড়ার রস ব্যবহার করে ইঞ্জিন অয়েল তৈরি করে তা দিয়ে সফলভাবে মোটরসাইকেল চালিয়েছেন। এই উদ্ভাবন শুধু সম্ভাবনাময় উদ্যোগই নয়, বরং দেশীয় জ্বালানি শিল্পে এক নতুন দিগন্তের সূচনা।
আশরাফ আলী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটালিয়নে কর্মরত থাকাকালে ইঞ্জিন অয়েল সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করেন। অবসর গ্রহণের পর নিজ উদ্যোগে গবেষণায় মনোনিবেশ করে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় উদ্ভিদের রস থেকে ইঞ্জিন অয়েল তৈরি করতে সক্ষম হন।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা আশরাফ ইঞ্জিন অয়েল তৈরি করতে সংগ্রহ করছেন উদ্ভিদ
২০০৮ সালে এই অয়েল বাংলাদেশ জ্বালানি গবেষণা ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা করা হয়। প্রথম পরীক্ষায় অ্যাসিডের মাত্রা কিছুটা বেশি থাকলেও পরবর্তীতে রিফাইনিংয়ের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করেন তিনি এবং একই বছর তিনি এই আবিষ্কারের পেটেন্টও নেন।
স্থানীয় মোটরসাইকেল মেকানিক আনিসুর রহমান বলেন, ‘আশরাফ আলীর তৈরি ইঞ্জিন অয়েল আমি অনেকবার বিভিন্ন মোটরসাইকেলে ব্যবহার করেছি। কোনো ত্রুটি পাইনি। যদি আধুনিক যন্ত্রপাতির সহায়তায় রিফাইন করা যায়, তাহলে এটি হতে পারে বিশ্বের সেরা ইঞ্জিন অয়েল।’

তৈরি করা ইঞ্জিন অয়েল
ভেষজ মবিল ব্যবহারকারী স্থানীয় বাসিন্দা মশাহেদুল ইসলাম মানিক ও ওয়াজিবুর রহমান লেবু জানান, আশরাফ আলীর গবেষণার সময় বিভিন্ন পর্যায়ে তারা এই অয়েল ব্যবহার করেছেন। তাদের অভিজ্ঞতায়, তেলের ব্যবহারে ধোঁয়া কিছুটা বেশি হলেও ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স ভালো ছিল। তাদের মতে, আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় এই তেল আরও কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব করা সম্ভব।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) অবসরপ্রাপ্ত মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাইমুল হক বলেন, ‘ভেরেন্ডা গাছ থেকে প্রাপ্ত তেলে ইঞ্জিন অয়েলের প্রাথমিক সব গুণ রয়েছে। তবে এতে কিছু অতিরিক্ত উপাদান থাকে যা সঠিকভাবে পরিশোধন না করলে ইঞ্জিনে কার্বন জমার সম্ভাবনা থাকে।’
আশরাফ আলীর দাবি, ‘তার তৈরি ইঞ্জিন অয়েল বাজারের প্রচলিত অয়েলের তুলনায় অর্ধেকেরও কম দামে উৎপাদন করা সম্ভব। এই প্রযুক্তি বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা গেলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়, রফতানি আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

মোটরসাইকেলে ব্যবহার করা হচ্ছে উদ্ভিদের রসে তৈরি ইঞ্জিন অয়েল
নীলফামারী জেলা প্রশাসক মো. নায়িরুজ্জামান আশরাফ আলীর এই আবিষ্কার সম্পর্কে বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন। আমরা বিষয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করার উদ্যোগ নিচ্ছি।’
দেশীয় উদ্ভিদের রস থেকে তৈরি ইঞ্জিন অয়েল এখন শুধু একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার স্বপ্ন নয়, বরং এটি হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সম্ভাবনাময় খাত। সঠিক সহায়তা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই উদ্ভাবন বিশ্ববাজারে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ইঞ্জিন অয়েল হিসেবে পরিচিতি পেতে পারে।
সারাবাংলা/এসআর