আসছে বাজেটের সিগারেটের মূল্যস্তর ৪টি থেকে কমিয়ে ৩টি করার প্রস্তাব
৭ মে ২০২৫ ১৬:০৬ | আপডেট: ৭ মে ২০২৫ ২২:৪৭
ঢাকা: আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের মূল্যস্তর চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব করেছে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর কর্মীরা। তারা বলছেন নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে এই সংস্কার করা হলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে। একই সঙ্গে বাড়বে রাজস্ব আয়।
বুধবার (৭ মে) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রজ্ঞার অঙ্গ সংগঠন এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মা’র মতবিনিময় সভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য তামাক কর প্রস্তাব, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের অগ্রগতি ও করণীয় এবং তামাক নিয়ন্ত্রণের অন্যান্য সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বাজেটে তাদের প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমানে যে সিগারেটের চার মূল্য স্তর রয়েছে, সেটা তিন স্তরে নিয়ে আসা হবে। যেমন নিম্ন ও মধ্য মূল্য স্তর সিগারেটের দাম বর্তমানে যথাক্রমে দশ শলাকার দাম ৬০ ও ৮০ ছিল। সেটা বাড়িয়ে ৯০ টাকা করার অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর উচ্চতর সিগারেটের মূল্য ১৪০ টাকা অপরিবর্তিত রেখে প্রিমিয়াম স্তর ১৮৫ বাড়িয়ে ১৯০ টাকা অর্থাৎ এখানেও ৬৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন বিড়িতে অভিন্ন করভার (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫ শতাংশ) প্রচলন করা, ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
আবার ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য জর্দা এবং গুলের কর ও দাম বাড়ার করার ক্ষেত্রে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এবং সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।
প্রস্তাব অনুযায়ী, যদি সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তাদের সুপারিশ অনুযায়ী তামাকপণ্যের বিদ্যমান কর ব্যবস্থা সংস্কার করে তাহলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ হবে; প্রায় ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং প্রায় ১৭ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। দীর্ঘমেয়াদে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫৮ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৭৯ তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে অর্থাৎ ২০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হবে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।
প্রস্তাবের যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে তারা বলছেন, নিম্ন ও মধ্যম স্তর একত্রিকরণ কর কাঠামোয় দক্ষতা বাড়াবে প্রস্তাবিত একত্রিকরণ কর ব্যবস্থায় জটিলতা কমাবে এবং প্রশাসনের সুবিধা বাড়াবে। বর্তমানে সিগারেটে চারটি মূল্যন্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম) থাকায় তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করে না। বিশেষ করে নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তা যে কোন একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ পায়। সিগারেট বাজারের সিংহভাগ এই দুই স্তরের দখলে রয়েছে। এই দুটি স্তরকে একত্রিত করে দাম ৯০ টাকা নির্ধারণ করা হলে স্বল্প আয়ের ধূমপায়ী ধূমপান ছাড়তে বিশেষভাবে উৎসাহিত হবে। একইসাথে তরুণ প্রজন্ম ধূমপান শুরু করতেও নিরুৎসাহিত হবে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে খানাপ্রতি মাসিক গড় আয় বেড়েছে ১০৩ শতাংশ, মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৯৩ শতাংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ হারে। এ সব কিছুই তামাকপণ্যকে আরও সহজলভ্য করেছে। বিশেষ করে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম মূল্যস্ফীতি ও মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে না বাড়ায় এটি আরও সস্তা হয়েছে। অতীতে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটে দাম বৃদ্ধি বিড়ির ব্যবহার বৃদ্ধিতে তেমন কোন ভূমিকা রাখেনি। বিগত পাঁচ বছরে নিম্নস্তরের সিগারেটের বিক্রি অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকলেও বিড়ির বিক্রি ক্রমশ কমেছে। এ থেকে বোঝা যায়, ধূমপায়ীরা সিগারেট ছেড়ে বিড়ি বেছে নেওয়ার চেয়ে বিড়ির পরিবর্তে সিগারেট বেছে নিতেই বেশি আগ্রহী।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে বদ্ধপরিকর। এসব লক্ষ্য অর্জনে তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধি হচ্ছে একটি ব্যয়-সাশ্রয়ী পদক্ষেপ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত সিগারেট কর সংস্কার একটি সুস্থ জাতি গঠনে অবদান রাখার পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্যখাত ও উন্নয়ন অগ্রাধিকারসমূহে অর্থায়ন এবং টেকসই কর ব্যবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অতিরিক্ত অর্থের যোগান দিবে।
সারাবাংলা/জেআর/এমপি