ঢাকা: বিচারের নামে অবিচার করে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার পুরোপুরি সাজানো ছিল। আইন সংশোধন, ট্রাইব্যুনাল গঠনও ছিল পূর্বপরিকল্পিত। যার ফলে জামায়াত নেতাদের সবাই সংঘবদ্ধ অন্যায়-অবচারের শিকার হয়েছেন। যা সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার লেখা ব্রোকেন ড্রিম বইয়ে উঠে এসেছে।
আদালত থেকে বেরিয়ে শিশির মনির বলেন, আপিল বিভাগ এটিএম আজহারকে খালাস দিলে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের যে নমুনা এই দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই কলঙ্ক থেকে বিচার বিভাগ আংশিক মুক্ত হবে। আমরা মনে করি জামায়াতে ইসলামী যে নজিরবিহীন নির্যাতন ও নিপিড়নের মধ্যে পার করেছে এই রায়ের মধ্য দিয়ে সবার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার হবে।
তিনি বলেন, ১৮ বছরের ইন্টার মিডিয়েটে পড়ুয়া ছাত্রকে কমান্ডার বানিয়ে সাজা দিয়েছিল। অযৌক্তিক সাক্ষ-প্রমাণের ভিত্তিতে এটিএম আজহারকে সাজা দেওয়া হয়েছে। আপিল বিভাগ এটিএম আজহারকে খালাস দেবেন বলে আমরা আশাবাদী।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের রায় আগামী ২৭ মে ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ দিন ধার্য করন।
চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এটিএম আজহারকে আপিলের অনুমতি দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। মানবতাবিরোধী অপরাধের এটিই প্রথম কোনো মামলা, যে মামলায় রিভিউ থেকে মূল আপিল শুনানির অনুমতি দিলেন সর্বোচ্চ আদালত।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান এটিএম আজহার। এছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ ও ৬ নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়। আর ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।
ওই দিন আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী (প্রয়াত) খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন (প্রয়াত) অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের রিভিউ চেয়ে একই বছরের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে সংশ্লিষ্ট আবেদন করেছিলেন এই জামায়াত নেতা। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার ওই আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।