আমার কাছে ইনভেস্টর রেডি: আশিক চৌধুরী
৮ মে ২০২৫ ১৭:১৫ | আপডেট: ৮ মে ২০২৫ ১৮:৩৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো : বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানিয়েছেন, দেশে বিনিয়োগের জন্য অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রস্তুত হয়ে আছেন। তবে গ্যাস, বিদ্যুৎ অবকাঠামোসহ পর্যাপ্ত সুবিধার অভাবে এ সুযোগটা দ্রুত নেওয়া যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুরে নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও সুশীল সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার কথা বিডা চেয়ারম্যানের কাছে তুলে ধরেন।
জবাবে বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা ব্যবসা করেন, তারা অনেক চ্যালেঞ্জ ফেস করে ব্যবসা করেন। আমরা প্রবলেমগুলো সলভ করার চেষ্টা করছি। আনফরচুনেটলি গ্যাস একটা বড় সমস্যা। সাপ্লাইয়ে হিউজ প্রবলেম। এই গ্যাস সাপ্লাই নিয়ে অনেক কথাবার্তা চলছে। গতকাল এনার্জি অ্যাডভাইজার বলেছেন, পাওয়ার জেনারেশনে গ্যাস সাপ্লাই কমিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে বাড়াবেন। আমার মনে হয়, এটাই যথেষ্ঠ না, আমাদের আরও অনেককিছু করতে হবে।’
‘আমার কাছে গতকালও চাইনিজ ইনভেস্টর এসেছে। আরও তিনজন চাইনিজ ইনভেস্টর বাংলাদেশে আসার কথা বলেছেন। উনাদের প্রত্যাশা হচ্ছে যে, আমি উনাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট সাইন করবো আর ছয় থেকে বারো মাসের মধ্যে উনারা কারখানা চালু করবেন। এখন গ্যাস, ইলেকট্রিসিটি, রাস্তা- এসবের ব্যবস্থা এর মধ্যে করে দেয়ার তো অপরচুনিটি আমার কাছে নাই। আমার কাছে ইনভেস্টর রেডি, কিন্তু আমার অপরচুনিটি রেডি না আনফরচুনেটলি। আমাদের যত দ্রুত সম্ভব, এই প্রবলেমগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আশিক চৌধুরী জানিয়েছেন, শুধু চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরেই আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আসবে অন্তঃত তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ।
চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন. ‘আমার ফাইনাল পয়েন্ট হচ্ছে বিনিয়োগ। আমি লালদিয়ার চরে গিয়েছিলাম, সেখানে প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার এফডিআই আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর আমরা বে-টার্মিনালের ওখানে গেলাম। সেখানে দুইটা অপারেটরের কথা বলা হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের এক বিলিয়ন ডলার করে এনে ইনভেস্ট করার প্ল্যান আছে। এরপর আমরা এনসিটিতে গিয়েছিলাম, সেখানেও ২০০ মিলিয়ন ডলারের মতো কথাবার্তা হচ্ছে। এই যে আমরা তিন বিলিয়ন ডলারের কথা বলছি, এটা হয়তো নেক্সট তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আসতে শুরু করবে, যদি আমরা সবকিছু সাকসেসফুলি করতে পারি।’
‘কিন্তু আনফরচুনেটলি আমাদের এফডিআই নাম্বারটা কিন্তু খুব ছোট, ইক্যুইটি যেটাকে বলি, প্রতি বছর এটা এক বিলিয়ন ডলারেরও নিচে। বছরে আমরা করি ৭০০-৮০০ মিলিয়ন ডলারের মতো, সেখানে আমি তিন বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট পাচ্ছি শুধু পোর্টে। এছাড়া কর্মসংস্থানের জন্যও এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি পোর্টগুলো করতে পারি, শুধুমাত্র বে-টার্মিনালেই ২৫ হাজারের কর্মসংস্থান হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ সরকার বলেন, আগামী সরকার বলেন, আগামী পাঁচ-সাতটা সরকারের কিন্তু সবচেয়ে বড় এজেন্ডা থাকতে হবে কর্মসংস্থান। সেটাকে প্রাইমারি গোল ধরে আমাদের ডিসিশন যেদিকে, যেভাবে নেয়া দরকার, সেভাবেই নিতে হবে। পোর্টগুলোকে এফিশিয়েন্ট করলে যদি আমাদের ট্রেড বাড়ে, তাহলে এমপ্লয়মেন্ট বাড়বে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় টোটাল পোর্ট আছে সাতটা। তাদের যে হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি সেভেন পয়েন্ট সেভেন এইট মিলিয়ন টিইইউস। বাংলাদেশের ক্যাপাসিটি এখন ওয়ান পয়েন্ট থ্রি এর কাছাকাছি। ভিয়েতনামে টোটাল পোর্ট আছে ৪৪টা। তাদের ক্যাপাসিটি ৪৭ মিলিয়ন টিইইউস। আমরা বলি যে, আমরা ভিয়েতনামের সঙ্গে কম্পিটিশন করবো, কিন্তু তাদের ক্যাপাসিটি আমাদের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। কম্বোডিয়া খুবই ছোট্ট একটা দেশ, তাদের পোর্ট হচ্ছে ২৬টা।’
‘আরেকটি পরিসংখ্যন বলি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটা ইনডেক্স আছে, এটার নাম হচ্ছে কনটেইনার পোর্ট পারফরম্যান্স ইনডেক্স। পৃথিবীতে যত কনটেইনার পোর্ট আছে, তাদের পারফরম্যান্সের একটা র্যাংকিং হয়। সেখানে আমাদের চট্টগ্রাম পোর্টের র্যাংকিং হচ্ছে ৩৩৯। প্রথম যে ১০০টা পোর্ট আছে তার মধ্যে সরকারি পোর্ট হচ্ছে মাত্র তিনটা, বাকি ৯৭টা প্রাইভেট। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে উই হ্যাভ লট অ্যাবাউট টু ডু।’
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মূলনীতি হলো, আমাদের দেশে বিশ্বের সেরা পরিচালিত বন্দর থাকতে হবে। আমাদের তো আসলে ৪৪টা বন্দর করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের হয়তো ৩টা, ৫টা, ৭টা- এ কয়টা পোর্টের মধ্যে আমাদের থাকতে হবে। আমাদের যেহেতু জায়গা কম। তবে আমাদের মাস্টাপ্ল্যান আছে যে, আমরা সেভেন পয়েন্ট এইট মিলিয়ন টিইউসের দিকে চলে যাব, ৫-৭ বছরের মধ্যে, যদি আমাদের সবগুলো প্রজেক্ট সাকসেসফুল হয়, তাহলে আমরা শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছাব। যেহেতু ল্যান্ড লিমিটেড, যেহেতু আমাদের অপশনস লিমিটেড, তাহলে আমাদের বিশ্বের মধ্যে মোর অ্যাফেক্টিভ ও বেস্ট ম্যানেজমেন্ট পোর্ট গড়ে তুলতে হবে। তাহলে আমাদের ঠিকভাবে প্রতিযোগিতা যেন করতে পারি, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
‘সেজন্য যারা বেস্ট প্র্যাকটিস অন্য জায়গায় করছে, তাদের আমরা নিয়ে আসতে পারি। একইসাথে আমরা আমাদের লোকাল বিজনেসকেও সেই সার্ভিসটা দিতে পারব। অনেকসময় একটা কমপ্লেইন আসে যে, আমাদের পোর্ট থেকে এক্সপোর্টের অর্ডার ক্লায়েন্টকে ডেলিভার করতে যে সময় লাগে, ভিয়েতনাম তার চেয়ে অনেক দ্রুততার সাথে দিয়ে দেয়। সুতরাং আমাদের ভাবতে হবে যে, ফ্যাক্টরির দরজা থেকে বের হয়ে পণ্য আমরা কত তাড়াতাড়ি কাস্টমারের কাছে পৌঁছাতে পারবো। অনেক বিদেশি আছেন, যারা মাল্টিপল পোর্টের সঙ্গে বিজনেস করেন, তারা সবসময় বলেন যে, আমাদের পোর্ট আপ টু দ্যা মার্ক নয়।’
চট্টগ্রামকে ঘিরে বিশাল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যে ম্যানুফ্যাকচার করি, সেটা আসলে আমাদের ক্যাপাসিটি বা ক্যাপাবিলিটির তুলনায় কিছুই না। চট্টগ্রামে আমরা চাইনিজ একটা ইকোনমিক জোনের ঘোষণা দিয়েছি। আনোয়ারাতে একটা কোরিয়ান ইপিজেড আছে। সেখানে কিছু প্রবলেম ছিল, সেগুলো আমরা সমাধান করেছি। মীরসরাইতে আমাদের ন্যাশনাল ইকোনমিক জোন যেটা আছে, আমরা মনে করছি যে বাংলাদেশে যত ইকোনমিক জোন আছে, তার মধ্যে এটা হচ্ছে ফ্ল্যাগশিপ ইকোনমিক জোন। ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের লং টার্ম ভিশন যেটা আমাদের, সেটা কিন্তু পুরোটাই চট্টগ্রামকে ঘিরে।’
‘দুদিন আগে আমরা একটা ন্যাশনাল কমিটি গঠন করেছি, ফ্রি ট্রেড জোনের জন্য। তো সেই ন্যাশনাল কমিটি যে জায়গাগুলো ফ্রি ট্রেড জোনের জন্য দেখছে, যে দুই-তিনটা জায়গা দেখা হয়েছে, প্রত্যেকটিই চট্টগ্রামে। তো, ফ্রি জোনটাও চট্টগ্রামের কোনো একটা জায়গায় হবে। তো, আমরা বলছি যে প্রোডাকশনের মেজরিটি হবে চট্টগ্রামে। তাহলে এক্সপোর্ট এবং ইম্পোর্ট- এ দুটির কানেকটিভিটিও আমাদের চট্টগ্রামকে ঘিরেই করতে হবে। অবশ্য মংলা আছে একটা পোর্ট, প্রাইমারি কানেকটিভিটি অব বাংলাদেশ, কিন্তু এনটায়ার কানেকটিভিটিটা হবে চট্টগ্রাম।’
এসময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমপি