সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভাতার হার, বরাদ্দ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ছে
৮ মে ২০২৫ ১৯:৪১
ঢাকা: দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার কমছে। কিন্তু বাজেটের আকার কমলেও দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভাতার হার, মোট বরাদ্দ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। তবে তুলনামূলকভাবে অন্য সময়ের চেয়ে এবার সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ছে কম।
বাজেট সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, আসন্ন বাজেটে নতুন করে ৬ লাখ ২৪ হাজার জনকে বিভিন্ন ভাতার আওতায় আনা হবে। নতুন সুবিধাভোগী অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রে এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় কম। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় নতুন ১০ লাখ ২৬ হাজার জনকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
সূত্র মতে, অন্যদিকে আসন্ন বাজেটে সব ধরনের ভাতা সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বাড়িয়ে ভাতার হার ৬৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। বাজেটে ১২ ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিপরীতে মোট বরাদ্দ থাকছে ১৯ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নতুন অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে।
জানা যায়, আগামী বাজেটে ৯৯ হাজার জন যুক্ত করে ৬১ লাখ বৃদ্ধকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হবে। এতে বরাদ্দ থাকছে ৪ হাজার ৭৯১ কোটি ৩১ লাখ টাকা, চলতি বাজেটে বরাদ্দ আছে ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এ কর্মসূচিতে ভাতার অঙ্ক ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিধবা ভাতাভোগীতে নতুন যুক্ত হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার জন। এতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ২৭ লাখ ৭৫ হাজার জন থেকে বেড়ে ২৯ লাখে উন্নীত হবে। অর্থ বরাদ্দ থাকছে ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৮৪৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এবার ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী ভাতার কার্যক্রমও বাড়ছে। উপকারভোগীর সংখ্যা ৩২ লাখ ৩৪ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩৪ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে। ভাতার হার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে এ খাতে ৩ হাজার ৩২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সূত্রমতে, মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজে দরিদ্র মাকে ভাতা দেওয়া হয়। আগামী অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে ১ লাখ ১৫ হাজার ৯২০ জনকে নতুন করে যুক্ত করা হবে। এতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৭ লাখ ৭১ হাজার ২০০ জন। তাদের ভাতার অঙ্ক ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।
এদিকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ঘিরে দুর্নীতি, অপচয় ও প্রকৃত সুবিধাভোগী শনাক্ত করার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের অভিযোগ শোনা যায়।
সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ সম্প্রতি বলেছেন, ‘শুধু অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সফল হবে না। সামাজিক সুরক্ষা খাতে দুর্নীতি বড় বাধা, ফলে শক্তিশালী তদারকি প্রয়োজন। এ খাতে উপকারভোগীদের তালিকায় দুর্নীতি আছে। ড্যাশবোর্ড তৈরি হলে সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচিগুলোর কার্যক্রম জোরালো নজরদারির মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশে ৩৩ লাখ বয়স্ক ও ২৫ লাখ বিধবা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভাতা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক ও ৩৩ শতাংশ বিধবা ভাতা পাওয়ার অনুপযোগী হওয়া সত্ত্বেও তারা নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন। এতে করে তাদের পেছনে বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে প্রায় ১৫ লাখ বয়স্ক ও বিধবাকে ভাতার আওতায় আনা সম্ভব।
সারাবাংলা/আরএস