আসছে বাজেটে নাও বাড়তে পারে সিগারেটের দাম
৮ মে ২০২৫ ২৩:১৬ | আপডেট: ৯ মে ২০২৫ ০০:২৩
ঢাকা: বাজেট এলেই প্রতিবছর সিগারেটের দাম বাড়ে। গেল কয়েকবছর ধরেই এমনটি হয়ে আসছে। তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এর ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে। বাজেটে এবার তামাক ও তামাকজাত পণ্যের দাম না বাড়ানোর প্রস্তাব থাকতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো দাবি করে আসছে স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় সিগারেটের দাম আরও বাড়ানো উচিত। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় দেশে সিগারেটের মূল্য সেই অর্থে বাড়েনি বলে দাবি তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার বাজেটে সিগারেটের ওপর কর না বাড়ানোর প্রস্তাব থাকতে পারে। গেল জানুয়ারিতেই অধ্যাদেশের মাধ্যমে সিগারেটে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও সিগারেটের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল। একবছরেই সিগারেটের ওপর দুইবার কর বেড়েছে। তাই এবারের বাজেটে নতুন করে সিগারেটে শুল্ক না বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার ক্ষমতচ্যুত হওয়ার পর চলতি বছরের শুরুতেই শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ায় অন্তর্বর্তী সরকার। জানুয়ারিতে বিশেষ অধ্যাদেশে ভ্যাট ও শুল্ক বসানো ওই পণ্যের তালিকায় সিগারটেও ছিল। মূলত রাজস্ব বাড়াতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছিল। জানুয়ারির ওই অধ্যাদেশে অনুযায়ী, নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়। এতে প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ করা হয়। এছাড়া, মধ্যমস্তরে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ করা হয়। উচ্চস্তরে ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। আর অতি উচ্চস্তরের সিগারেটের দাম ১৬০ টাকা থেকে ১৮৫ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়।
ওই অধ্যাদেশের আগে, খুচরা পর্যায়ে বেনসন অ্যান্ড হেজেস ব্র্যান্ডের প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম ছিল ১৮ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। গোল্ডলিফ ব্র্যান্ডের প্রতিটি শলাকার দাম ১৩ টাকা থেকে বেড়ে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ২ টাকা বেড়ে প্রতি শলাকা লাকি সিগারেটের দাম ১২ টাকা এবং স্টার ব্র্যান্ডের সিগারেট ১০ টাকা হয়েছে। এর বাইরে ডার্বি, পাইলট ও হলিউডের দাম এখন ৮ টাকা এবং রয়েলের দাম ৭ টাকা। অর্থাৎ এসব সিগারেটে দাম বেড়েছে ১ টাকা করে।
এদিকে, আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের ওপর আর কর না বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানও। এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, সিগারেটের ওপর আর কর বাড়ানো হবে না। ওই অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর হেড অব করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাবাব চৌধুরী বলেন, ‘সিগারেটের ওপর কর ও দাম বাড়ালে অপরাধীরা সুযোগ নেয়। চোরাকারবারের সুযোগ বাড়ে। এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়। রাজস্বের ৮৮ ভাগ আমাদের। আমাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করা উচিত। দাম আর বাড়াবেন না, করও বাড়াবেন না। ভোক্তাকে স্থির হতে দেন। নইলে চোরাচালান বাড়বে।’
আসন্ন বাজেটে সিগারেটে কর না বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) কোষাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তামাকজাত পণ্যের স্বাস্থ্য ঝঁকির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বিবেচনায় নিলেও সিগারেটের দাম আরও বেশি হওয়া উচিত। যেহেতু এই সরকার তরুণদের ও তরুণ প্রতিনিধি দ্বারা গঠিত, তামাকজাত পণ্যের স্বাস্থ্য ঝঁুকি থেকে দেশের তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে তামাকজাত পণ্যে কর বাড়াবে সেটিই প্রত্যাশা।’
এ বিষয়ে তামাকবিরোধী সংগঠন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি বিবেচনায়ও সিগারেটের মূল্য আরও বেশি হওয়া উচিত। সিগারেটের মতো একটি স্বাস্থ্যহানিকর পণ্যে আরও বেশি হারে কর আরোপ করা উচিত। আমরা আসন্ন বাজেটে সিগারেটের ওপর সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপ এবং মূল্যস্তর কমিয়ে তিনটিতে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছি। গায়ের মূল্যে (এমআরপি) যাতে সিগারেট বিক্রি হয়, তা নিশ্চিত করতে মনিটরিং বাড়াতে সরকারকে আমরা এ বিষয়ে জোর দিয়ে আসছি। আমরা বলে আসছি, সিগারেটের মূল্য যাতে ফ্ল্যাট রেট হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনোভাবেই যাতে খুচরা সিগারেটের মূল্য ফ্রেকশন রেটে না হয়। ১৯ টাকা হলে ১৯ টাকাই, ১৯ টাকা ১০ পয়সা কিংবা ১৮ টাকা ৫০ পয়সা নয়। কারণ দেশে যেহেতু ১০, ২০, ৫০ পয়সার প্রচলন নেই, সেহেতু বিক্রেতারা অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করেন। যেমন- বেনসন অ্যান্ড হেজেস সিগারেটের সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৮.৫০ টাকা হলেও প্রতি শলাকা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা। অথচ এই অতিরিক্ত মূল্যের ওপর সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। ফলে সরকার প্রতিবছর বড় অংকের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের দফতর সম্পাদক সৈয়দা অনন্যা রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বারবার চাইলেই একটি দ্রব্যে কর আরোপ করা যায় না, সরকারেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ, এ বছরেই তামাকপণ্যের ওপর কর বাড়িয়েছে। নিশ্চয় এ জন্য এনবিআর প্রশংসার দাবি রাখে। কারণ, এর আগে দীর্ঘদিন ধরে সিগারেটে কর বাড়েনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এনবিআরের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছিল, আসছে বাজেটে হয়তো তামাকজাত পণ্যের ওপর কর বাড়াতে পারবে না। সবসময় শুধু চাপ তৈরি করলেই হবে না, এ বিষয়গুলোও আমাদের বোঝা উচিত বলে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি। এনবিআর যদি একদমই কর না বাড়াতো তখন হয়তো আমাদের বলার ছিল। তারা তো একটি উদ্যোগ নিয়েছে, নতুন করে বাড়াতে হয়তো তাদের আরেকটু সময় দিতে হবে।’
তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর মতে, তামাক স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর একটি পণ্য। বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু এবং ১২ লাখের বেশি মানুষ বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ তামাক। তামাকজনিত রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যয় প্রতিবছর অর্থনৈতিক ক্ষতি ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এছাড়াও, তামাক উৎপাদন থেকে ব্যবহার পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম