মুন্সীগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রাবিরতি করা পিকনিকে আসা এম. ভি ক্যাপটেন লঞ্চে দুই নারীকে প্রকাশ্যে লঞ্চের ডেকের সামনে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
শুক্রবার (৯ মে) রাত ৮টার দিকে লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জ ঘাটে নোঙর করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভাঙচুরের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান থানা পুলিশ, নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউপিএর লোকজন।
ঘটনাস্থলে ছিলেন এমন একজন সাংবাদিক জানান, লঞ্চটি ঢাকা-লালমোহন রুটের প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। লঞ্চটির দ্বিতীয় তলার বেশ কয়েকটি কেবিনে ২০-২৫ জন কিশোর-যুবক ও দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী ছিলেন। তারা ঢাকা থেকে ওই লঞ্চের করে সারাদিন পিকনিক করে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা রঙের পোষাক পরিহিত আনুমানিক ১৫-১৭ বছর বয়সী এক নারীকে লঞ্চের একেবারে সামনের অংশে নিয়ে লাঠি দিয়ে বেপরোয়াভাবে পেটাচ্ছেন এক যুবক। এ সময় ৫০-৬০ জন বিভিন্ন বয়সী পুরুষ সেই দৃশ্য তাদের মোবাইল ফোনে ধারণ করে উল্লাস করছেন ও বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিডিওতে মারধর করতে থাকা যুবক নেহাল আহমেদ জিহাদ বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন তাদের আচরণ ও বেশভূষায় ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমণ করতে চলে আসে। আমি তাদের নিবৃত্ত করতে ভাই হিসাবে শাসন করেছি। এটা আমার করা উচিৎ হয়নি। আবার আমি এটা না করলে মানুষজন নারীদের জামাকাপড় টেনে খুলে ফেলতো। আরও বেশি হেনস্তা করতো। তাছাড়া স্থানীয়দের কাছ থেকে অন্তত ৮টি মোবাইল আমি তাদের উদ্ধার করে দিয়েছি। আমি মারধরের ঘটনায় অনুতপ্ত।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া এ ঘটনার একাধিক ভিডিওতে আরও দেখা যায়, থেমে থাকা লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় উঠে গণহারে অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ যাত্রীদের পেটাচ্ছেন ১০-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল। এ সময় তারা লঞ্চের কেবিনগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছেন এবং দরজা ভাঙার চেষ্টা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌ ভ্রমণে বের হয়ে আক্রমণের শিকার ‘এমভি ক্যাপ্টেন’ নামের লঞ্চটিতে পিকনিকের উদ্দেশ্যে আসা অন্তত ছয় জন যাত্রী মারধরে আহত হন। এর মধ্যে দুইজন অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী। তবে, তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তারা সবাই ঢাকার কামরাঙিরচর এলাকার বাসিন্দা।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল আলম জানান, সন্ধ্যার নাস্তা কেনার জন্য ৮ থেকে ১০ জন যাত্রী লঞ্চ থেকে পল্টুনে নামে। সেখানে থাকা স্থানীয়রা মাদকসেবী সন্দেহ করে তাদের পিছু নিয়ে লঞ্চে উঠার চেষ্টা করলে লঞ্চের ম্যানেজার মো. শফিক তাদের প্রবেশে বাধা দেয়। এতে উত্তেজিত লোকজন জড়ো হয়ে লঞ্চে ঢুকে ভাঙচুর, লুট ও যাত্রীদের মারপিট করেন। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজনা কমে আসে।
প্রকাশ্যে নারীদের মারধরের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফিরোজ কবির বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ঘটনাটি যেহেতু নদীতে ঘটেছে এ বিষয়ে নৌ পুলিশ ব্যবস্থা নিবে বলে শুনেছি।’
মুক্তারপুর নৌ পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের সাথে আমরাও ছিলাম। মারধরের ঘটনার পর আমরা লঞ্চটিকে অনেকদূর পর্যন্ত পাহারা দিয়ে এগিয়ে দিয়ে আসি। ভুক্তভোগীরা পরবর্তীতে মারধর ও লুটের ঘটনায় অভিযোগ করবেন বলে আমাদের জানান। শনিবার (১০ মে) সকাল পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’