Monday 12 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাবেক রাষ্ট্রপতির বিদেশযাত্রায় যাদের দায়ী করছে ইমিগ্রেশন

উজ্জল জিসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ মে ২০২৫ ২২:০২ | আপডেট: ১২ মে ২০২৫ ০২:০৫

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গত ৭ মে দিবাগত মধ্যরাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে থাইল্যান্ড যান। তার সঙ্গে ছিলেন পুত্র রিয়াদ আহমেদ ও শ্যালক ডা. আ ন ম নওশাদ খান। তারা কীভাবে ইমিগ্রেশন শেষ করে দেশ ছাড়লেন তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে দেশজুড়ে।

পুলিশ অধিদফতর থেকে জানা যায়, সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশ ছাড়ার ঘটনায় ৮ মে ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) তাহসিনা আরিফকে প্রত্যাহার এবং এসবির সহকারী উপপরিদর্শক মো. সোলায়মান এবং কিশোরগঞ্জে আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আজহারুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকেও প্রত্যাহার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কর্তব্যে অবহেলা করেছেন ও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তাই তাদের কাউকে বরখাস্ত ও কাউকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ৭ মে দিবাগত রাত ১১টার দিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে হাজির হন। এ সময় তার পরনে ছিল লুঙ্গি, শার্ট আর মুখে ছিল মাস্ক। তার সঙ্গে ছিলেন পুত্র রিয়ান আহমেদ ও শ্যালক ডা. নওশাদ খান। তারা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানান, চিকিৎসার জন্য জরুরিভাবে থাইল্যান্ডে যাচ্ছেন।

এরপর তাদের অপেক্ষমাণ রেখে ইমিগ্রেশন পুলিশ তৎপর হয়। বিষয়টি ইমিগ্রেশনের দায়িত্বরতরা বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ওসিকে অবহিত করেন। ইমিগ্রেশন ওসি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) তাহসিনা আরিফ বিষয়টি ইমিগ্রেশন এসবির অ্যাডিশনাল ডিআইজিকে অবহিত করেন। এর পর রাত ৩টার দিকে ডিআইজি ইমিগ্রেশনের নির্দেশে ফের অ্যাডিশনাল ডিআইজি ইমিগ্রেশন ওসিকে ফোন করে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ইমিগ্রেশন সম্পন্নের নির্দেশন দেন। এরপর ইমিগ্রেশনের পক্ষ থেকে আবদুল হামিদ তার ছেলে ও শ্যালকের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন এসবির পাশাপাশি দেশের আরও দুটি বৃহৎ গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করেন। ওই দু’টি গোয়েন্দা সংস্থার একজন সহাকরী পরিচালক এবং একজন জিএসও সাবেক রাষ্ট্রপতি বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি অবহিত হন। তারা স্ব স্ব উইংয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। ইমিগ্রেশন পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের মতো গোয়েন্দা সংস্থা দু’টির ঊর্ধ্বতনরাও হামিদের বিদেশ যাত্রার ব্যাপারে কোনো আপত্তি না করায় রাত ৩টার দিকে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হয়। এর পর সাবেক রাষ্ট্রপতি ব্যাংককগামী থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান।

এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত এসবি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুলের অবহেলার কারণেই সাবেক রাষ্ট্রপতি দেশ ছেড়েছেন। গোলাম রসুল মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সাবেক রাষ্ট্রপতির বিদেশযাত্রায় কোনো প্রকার বাধা দেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এসবি চিফ হয়েও কেন তিনি একজন হত্যা মামলার আসামিকে ইমিগ্রেশনে আটকানোর নির্দেশ দিলেন না- তা নিয়ে চলছে সমালোচনা।

ঘটনার পরদিন পুলিশের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই কমিটির কাছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে জবাব দিয়েছে। সেই লিখিত জবাবে দু’টি গোয়েন্দা সংস্থার দু’জন কর্মকর্তা ও এসবি ডিআইজি ও অ্যাডিশনাল ডিআইজিকে দায়ী করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটি এ সকল কর্মকর্তার বাইরেও মূল অভিযুক্তকে খোঁজার চেষ্টা করছে।

অভিযোগ রয়েছে, এসবি প্রধান গোলাম রসুলের দুর্নীতি সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে একেবারেই প্রতিষ্ঠিত ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টের পর গোলাম রসুল পুলিশের ক্রান্তিলগ্নে সামনে আসেন এবং পুলিশ সদস্যদের অ্যাকটিভ করার চেষ্টা করেন। এর পর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বর্তমানে যে ক’জন পুলিশ কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে কাজ করছেন তার মধ্যে অন্যতম হলেন গোলাম রসুল। এই গোলাম রসুলের নির্দেশেই কিশোরগঞ্জে হত্যা মামলার আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশ ছাড়েন।

গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে আরও একটি বড় অভিযোগ হলো, হত্যা মামলার আসামি আব্দুল হামিদসহ আরও যারা আছেন তারা যেন বিমানবন্দর বা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন দিয়ে পালাতে না পারে সেজন্য এসবি প্রধান বরাবর একটি চিঠি লিখেছিলেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সেই চিঠি আমলে নেননি এসবি প্রধান। ফলে আবদুল হামিদ দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারলেন। তবে এর দায়ে অধস্তন কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার ও বরখাস্ত করা হলো।

পুলিশের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে সেই কমিটি এরই মধ্যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে এবং তা চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। তদন্ত কমিটির একজন রোববার (১১ মে) সারাবাংলাকে জানান, তদন্তে বেশ কয়েকজনের গাফলতির সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। কীভাবে কার নির্দেশে এটি হয়েছে তা বের করা হচ্ছে। আরও কারা কারা জড়িত তাদেরও বের করার চেষ্টা চলছে। খুব শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলেও জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি দেশ ছেড়ে পালানোর ঘটনায় শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আববারকে সভাপতি করে এবং বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা এবং নৌ পরিবহণ ও শ্রম-কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনকে সদস্যকে করে সরকার একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

ইমিগ্রেশন দায়ী বিদেশযাত্রা বিমানবন্দর সাবেক রাষ্ট্রপতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর