ফরিদপুর: ফরিদপুরে মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দেড়লাখ টাকায় বিক্রি হওয়া আলোচিত সেই শিশু তানহাকে উদ্ধার করেছে র্যাব।
সোমবার সকাল ১১ টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ফরিদপুর র্যাব ক্যাম্পের সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) শামীম হাসান সরদার। এদিন বিকেলে নির্বাহী আদালতের বিচারক সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফজলে রাব্বী শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এর আগে, এক বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব কর্মকর্তা জানান, নগরকান্দা থানার রামপাশা এলাকায় পপি বেগমের (৩৭) সঙ্গে তার স্বামী মো. কাইয়ুম বিশ্বাস (৪০) এর খোলা তালাক হয় এবং তার মেয়ে তানহা আক্তার (৮ মাস)’কে কাইয়ুম বিশ্বাস জোর করে রেখে দেয়। পরবর্তীতে পপি বেগম তার মেয়েকে আনতে গেলে তার সাবেক স্বামী তার তানহাকে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পপি বেগম মেয়ে শিশুকে উদ্ধারের নিমিত্তে আদালতে মামলা করেন।
তিনি আরও জানান, তল্লাশি পরোয়ানামূলে শিশু কন্যা তানহাকে রোববার বিকেলে ফরিদপুরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে নগরকান্দা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, শিশুটিকে ফিরে পেতে গত বছরের ডিসেম্বরে ফরিদপুর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা করেন শিশুটির মা পপি বেগম। তবে মামলায় সন্তান বিক্রির বিষয়টি উল্লেখ না থাকলেও জোড়পূর্বক আটকে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় এবং ফিরে পেতে আর্জি জানানো হয়। এরপর শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল সার্স ওয়ারেন্টের মাধ্যমে শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য নগরকান্দা থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয় আদালত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নগরকান্দা থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক ইরানুল ইসলাম জানান, র্যাবের মাধ্যমে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন জানান, বিকেলে নির্বাহী আদালতের বিচারক উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে তার জন্মদাতা মায়ের কোলে ফেরত দিয়েন। এই আদেশে আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি।’
সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফজলে রাব্বী জানান, নিখোঁজ শিশুটিকে উদ্ধার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। শিশুটির মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উদ্ধার করা ৮মাসের বাচ্চাকে তার জন্মদাতা মায়ের দেয়া হয়। আগামী ২ জুন ধার্য তারিখে এবিষয়ে চুড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে।
দীর্ঘ পাঁচ মাস পরে তানহা আক্তারের মা পপি বেগম বাচ্চাকে কোলে পেয়ে আবেগে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আজ তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরতে পেরে বুকটা জুড়িয়ে গেছে। তবে এতোদিন আমার বাচ্চাকে যারা কেড়ে নিয়ে অন্যাত্রে রেখে দিয়েছিল তাদের বিচার চাই। আর আগামীতে যেন কোন হয়রানি ছাড়া বাচ্চাকে কে লালন পালন করতে পারি তিনি সেই দাবি জানায়।
উল্লেখ্য, তিন বছর আগে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের হান্নান সরদারের মেয়ে পপি বেগমের সাথে পাশ্ববর্তী ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার রামপাশা গ্রামের কাইয়ুম বিশ্বাসের সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো এবং স্বামী ও ননদ মিতা বেগম বিভিন্ন সময় তাকে নির্যাতন করতে থাকে। এর মাঝে তাদের একটি মেয়ে শিশুর জন্ম হয়। পরবর্তীতে গত পাঁচ মাস আগে কলহের জের ধরে তালাক হয়। তালাকের পরে শিশু তানহাকে জোড় করে রেখে দেওয়া হয়।