Tuesday 13 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নারী সংস্কার কমিশন
নারীদের অবহেলার অভিযোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন ‘ট্রেডিশনাল শি’র

ঢাবি করেস্পন্ডেন্ট
১৪ মে ২০২৫ ০০:১১ | আপডেট: ১৪ মে ২০২৫ ০০:১২

‘ট্রেশিশনাল শি’র সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: নারী সংস্কার কমিশনের ‘পক্ষপাতমূলক গঠন, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্বের ঘাটতি এবং ২০২৪ সালের আন্দোলন ও সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের উপেক্ষা’ করা হয়েছে অভিযোগ করে এ সংক্রান্ত একাধিক আপত্তি উত্থাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গঠিত নবগঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রেশিশনাল শি’।

মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ তোলেন। এ সময় সংগঠনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মিশকাতুল জান্নাত, নাদিয়া মেহজাবিন, রেজিয়া খাতুন বকুল, তাবাসসুম নুপা প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

তাদের দাবি, ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই এবং বিশ্বাসী ও সাংস্কৃতিকভাবে দৃঢ় নারীদের অংশগ্রহণ না রেখেই কমিশন গঠন করা হয়েছে। এতে গণমানুষের কণ্ঠস্বর অনুপস্থিত।

তাদের মূল অভিযোগ উপস্থাপন করে বলা হয়েছে, বিদ্যমান নারী নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিরোধ আইনের বাস্তবায়ন নয়, বরং বিতর্কিত ম্যারেটাল রেইপ আইন প্রস্তাব আনা হয়েছে, যা সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। একইসঙ্গে পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধের প্রস্তাব সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বলে তারা মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি প্রশ্ন তোলে—নারী সংস্কার কমিশন আদৌ কি সব নারীর প্রতিনিধি? তাদের দাবি, ৩১৩ পৃষ্ঠার কমিশনের প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালের নারীদের (বীরাঙ্গনা) বারবার উল্লেখ থাকলেও, ২০২৪ সালের নারী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শহিদ জননী, নির্যাতিত নারী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসন ও ট্রমা হিলিংয়ের বিষয়ে কোনো প্রস্তাবনা নেই। তারা বলেন, ‘যাদের সামর্থ্য নেই, তারা চিকিৎসা বা কাউন্সেলিং কোথায় পাবেন সেটিও স্পষ্ট নয়।’

বিজ্ঞাপন

তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, যেসব পরিবারে উপার্জনক্ষম সদস্য শহিদ হয়েছেন, সেই নারীরা এখন আর্থিক ও মানসিক সংকটে দিন কাটাচ্ছেন এটি কমিশনের বিবেচনায় আসেনি।

ধর্মীয় আইন সংস্কারের বিষয়ে কমিশনের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। অভিযোগ করা হয়, ‘নারীর প্রতি ধর্মীয় আইন জুলুম সৃষ্টি করে’—এই ভাষা ব্যবহার করে আলেম-ওলামা বা ধর্মীয় বিশিষ্টজনদের কমিশনের আলোচনায় না রাখা একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়। উদীচী, ছায়ানটের মতো সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে সংলাপ হলেও কোনো ধর্মীয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়নি।

কমিশনের প্রতিবেদনের ৪১-৪৫ নম্বর পৃষ্ঠায় পাহাড়ি গোষ্ঠীর নিজস্ব আইন ও বিচারব্যবস্থাকে মূলধারার সঙ্গে সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে, যেখানে গোত্রভিত্তিক আইন প্রয়োগের সুপারিশ রয়েছে। এ বিষয়ে তারা প্রশ্ন তুলে বলছেন, ‘তাহলে মুসলমানদের ধর্মীয় আইনকে কেন সিভিল আইনের অধীনে আনা হবে? ’

তাদের অভিযোগ, প্রতিবেদনে একটি ইউনিফর্ম সিভিল কোর্ট গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও অভিভাবকত্ব বিষয়ে সব ধর্মের নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের ধর্মীয় বৈচিত্র্য ও সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

কমিশনের প্রতিবেদনে অন্যান্য আইন মডেল অনুসরণের প্রস্তাব রয়েছে উল্লেখ করে তারা প্রশ্ন তোলেন— এই মডেলগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটা প্রযোজ্য?

উত্তরাধিকার সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, কেউ চাইলে ধর্মীয় বা সিভিল আইনের মধ্যে যেকোনো একটিকে অনুসরণ করতে পারবেন। কিন্তু এক পরিবারের দুই সন্তান যদি দুই আইনে উত্তরাধিকার দাবি করেন, তখন এর সমাধান কিভাবে হবে?— প্রশ্ন তোলেন সংগঠনটির সদস্যরা।

সারাবাংলা/কেকে/পিটিএম

অবহেলা ট্রেডিশনাল শি নারী সংস্কার কমিশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর