Wednesday 14 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আ.লীগ আমলে দম্ভোক্তি দেখানো পুলিশ কর্মকর্তারা কে কোথায়

উজ্জল জিসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ মে ২০২৫ ১০:১৩

ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলের পতন ঘটে। ওইদিনই পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে প্রথম সারির নেতাকর্মী এমপি-মন্ত্রীরাও পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশে কর্মরত দম্ভোক্তি দেখানো কর্মকর্তারাও গা ঢাকা দেন। এদের মধ্যে অবশ্য কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আবার কেউ দেশেই লুকিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে দেশের ভেতরে থাকা অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ আমলের ১৫ বছরে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা দম্ভোক্তি দেখাতেন তাদের মধ্যে অন্যতম সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকার অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার, অ্যাডিশনাল ডিআইজি মেহেদি হাসান, অ্যাডিশনাল ডিআইজি নুরুন্নবী চৌধুরী, অ্যাডিশনাল ডিআইজি সঞ্জীব চক্রবর্তী, ডিআইজি জাহাঙ্গীর হোসেন মাতব্বর, অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাসুদ আলম, ডিআইজি নুরুল ইসলাম, ডিআইজি মোল্লা নজরুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

আরও ছিলেন- অ্যাডিশনাল ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান, ‍যুগ্ম কমিশনার মশিউর রহমান, অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাশরুকুর রহমান খালেদ, অ্যাডিশনাল ডিআইজি সাজ্জাদুর রহমান, অ্যাডিশনাল ডিআইজি আনিসুর রহমান, অ্যাডিশনাল ডিআইজি ইলিয়াস শরীফ, ডিআইজি কৃঞ্চ পদ রায়, অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার, ডিআইজি আব্দুল বাতেন, ডিআইজি মোজাম্মেল হক, পুলিশ সুপার শাহজাহান সাজু, পুলিশ সুপার রিফাত শামীম, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার সরকার, অ্যাডিশনাল ডিআইজি সুদীপ কুমার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহেল কাফি ও এডিসি নাজমুল ইসলাম সুমন।

এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দম্ভোক্তি দেখাতেন পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ। তিনি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের আগেই গ্রেফতারের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে দুর্নীতিসংক্রান্ত নিউজ প্রকাশিত হতে থাকে। ফলে তিনি পালিয়ে যান। সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তারা তিনজনই এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, ডিআইজি জাহাঙ্গীর হোসেন মাতব্বর, ডিআইজি নুরুল ইসলাম, ডিআইজি মোল্লা নজরুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকার, অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার, অ্যাডিশনাল ডিআইজি মেহেদি হাসান, অ্যাডিশনাল ডিআইজি নুরুন্নবী চৌধুরী, অ্যাডিশনাল ডিআইজি সঞ্জীব চক্রবর্তী, অ্যাডিশনাল ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাসুদ আলম ৫ আগস্টের পর পুলিশে আর যোগ দেননি।

পুলিশ সদর দফতর থেকে বারবার যোগদানের জন্য বলা হলেও তারা সাড়া দেননি। পুলিশের খাতায় তারা এখন পলাতক। এর মধ্যে অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকার উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। জানা গেছে, বাকিদের মধ্যে কেউ ভারতে, কেউ মালয়শিয়ায় আবার কেউ দুবাইয়ে গা ঢাকা দিয়ে আছেন।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মশিউর রহমানকে (ডিবিতে কর্মরত ছিলেন) রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় গণহত্যার মামলায় ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে আশুলিয়া থানায় গুলি করে হত্যার পর পুলিশ ভ্যানে লাশ পোড়ানোর মামলায় আশুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহেল কাফিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতার দেখিয়েছে। এছাড়া, সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এডিসি নাজমুল ইসলাম সুমনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। যেকোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাশরুকুর রহমান খালেদ, অ্যাডিশনাল ডিআইজি সাজ্জাদুর রহমান, অ্যাডিশনাল ডিআইজি আনিসুর রহমান, অ্যাডিশনাল ডিআইজি ইলিয়াস শরীফ পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছেন বর্তমানে। এর আগে তাদের বদলি করে বিভিন্ন জেলায় পদায়ন করা হয়। সেখানেও তারা যোগদান না করায় পরে তাদের বরখাস্ত করা হয়। পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার ও চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন কমিশনার কৃঞ্চ পদ রায় ৫ আগস্ট থেকেই লাপাত্তা। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, তারা দু’জনই ভারতে পালিয়ে আছেন।

খুলনা মেট্টোপলিটন কমিশনার (ডিআইজি) মোজাম্মেল হক, রংপুরের পুলিশ সুপার শাহজাহান সাজু, গুলশানের বিভাগের উপকমিশনার (পুলিশ সুপার) রিফাত শামীম, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার সরকার ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি সুদীপ কুমারকে প্রথমে বদলি ও পরবর্তীতে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে তারাও বর্তমানে পলাতক।

এর বাইরে ঢাকায় কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দম্ভোক্তিকারীদের মধ্যে ছিলেন এডিসি হারুন অর রশিদ। যিনি নারী পুলিশ কর্মকর্তা এডিসি সানজিদা কাণ্ডে ফেঁসে যান। শাহবাগ থেকে প্রেসক্লাব, পল্টন থেকে রমনা সব জায়গায় তিনি ছিলেন খলনায়কের ভূমিকায়। বিরোধী নেতাকর্মীদের পেটানো, সাংবাদিক নির্যাতন এমনকি শিক্ষকদের পেঠানোতেও তিনি ছিলেন ওস্তাদ। তিনি হয়ে উঠেছিলেন আরেক হারুন (ডিবি হারুন)। এদের পাশাপাশি ঢাকা কাঁপাতেন বেনজীর, আসাদুজ্জামান, ডিবির হারুন, ডিএমপির বিপ্লব, মেহেদি, নুরুন্নবী, মশিউর, রাজীব, ‍জুয়েল রানা, সঞ্জীব চক্রবর্তী এবং ওসিদের মধ্যে ফরমান, মাজহারুল, মশিউর, মনিরুল ইসলাম ও আবুল হাসান অন্যতম।

৫ আগস্টের পর গত ৮ মাসে ছোট বড় মিলে অন্তত কয়েকশ’ আন্দোলন হয়েছে ঢাকা মহানগরীতে। এ সব আন্দোলন পুলিশ ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। পুলিশের দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে পুলিশ একপেশে আচরণ করেছে। ফলে জনগণ পুলিশের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। আন্দোলন পরবর্তী সময়ে পুলিশবিহীন কেমন চলে তা বোঝা গেছে। মানুষ বুঝতে শুরু করেছে যে, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাগবেই- যা আস্তে আস্তে পূরণ হচ্ছে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ ও সমাজের জন্য যে পুলিশ দরকার, তা চিন্তা করছে মানুষ।

পলাতক পুলিশ সদস্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি মিডিয়া) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ডিএমপিতে কর্মরত বিভিন্ন লেভেলের কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা মেনে নিয়ে সবাই কাজ করছে। পুলিশের মধ্যে মনোবলের কিছুটা ঘাটতি আছে। তবে তা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে। নানানভাবে পুলিশ সদস্যদের বোঝানো হচ্ছে। ফলে পরিবর্তন আসবে বলেই আশা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা পুলিশে যোগ দেননি বা পলাতক রয়েছেন- তাদের বিষয়ে আদালত যা সিদ্ধান্ত নেবে তা মেনেই পুলিশ কাজ করবে। এছাড়া, পুলিশকে পুরোপুরি অ্যাকটিভ করতে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। অপরাধ করলে আইন অনুযায়ী আদালতে সবার বিচার হবে- এটাই নিয়ম।’

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

আওয়ামী লীগ কে কোথায় দম্ভোক্তি পুলিশ কর্মকর্তারা