Thursday 15 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫ তরুণের আত্মত্যাগ, পরিবারকে ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৫ মে ২০২৫ ২২:৪৩

অনাড়ম্বর আয়োজনে শহিদ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সঞ্চয়পত্র

পঞ্চগড়: সম্মেলন কক্ষে অনেক মানুষ। কারও চোখে অশ্রু, কারও মুখে গভীর নিরবতা। একটা টেবিলের ওপর রাখা পাঁচটি খাম—ভেতরে দেশের তরুণ পাঁচ শহিদ পরিবারের জন্য ১০ লাখ টাকা করে মোট ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।

সম্মেলন কক্ষ জুড়ে তখন শুধু একটাই অনুভব—ত্যাগের ঋণ কখনও শোধ হয় না, তবে রাষ্ট্র শ্রদ্ধা জানাতে পারে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক অনাড়ম্বর আয়োজনেই শহিদ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয় এই সঞ্চয়পত্র।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন— জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি, আন্দোলনের নেতা মোকাদ্দেসুর রহমান সান এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানের আবহ ছিল শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান পঞ্চগড়ের পাঁচ তরুণ। তাদের পরিচয় যেন শুধুই পরিসংখ্যান নয়—প্রতিটি নামের পেছনে রয়েছে একটি পরিবার, একটি স্বপ্ন, আর একটি অসমাপ্ত গল্প।

আবু ছায়েদ জেলার বোদা উপজেলার প্রধান হাটের মুদি দোকানদার। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ১৯ জুলাই, ঢাকার মোহাম্মদপুর বছিলায়। শাহাবুল ইসলাম শাওনের বাড়ি দেবীগঞ্জ উপজেলার কাঁচামাল ব্যবসায়ী। নিহত হন ৪ আগস্ট গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে। সাগর ইসলামের বাড়ি চাকলাহাট ইউনিয়নে। তিনি ছিলেন ইন্টারনেট কর্মী। প্রাণ হারান ৫ আগস্ট ঢাকার মেরুল বাড্ডায়।

অন্যদিকে শহিদ সুমন ইসলাম ছিলেন পোশাক শ্রমিক ও ছাত্র। জেলার বোদা উপজেলা সাকোয়া ইউনিয়নের আমিননগর গ্রামের সন্তান। নিহত হন একই দিনে ঢাকার আশুলিয়ায়। সাজু ইসলাম টেক্সটাইল কর্মী। চিলাহাটি ইউনিয়নের টোকরাভাসা গ্রামের এই তরুণ বিজিবির গুলিতে আহত হয়ে ১২ আগস্ট মারা যান ময়মনসিংহ মেডিকেলে।

বিজ্ঞাপন

জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, ‘এই তরুণরা জীবন দিয়েছেন একটি সমতার সমাজ গড়ার দাবিতে। আজ আমরা তাদের পরিবারকে ক্ষণিকের সম্মান জানাচ্ছি। এই সঞ্চয়পত্র শুধু অর্থমূল্যের নয়, এটি আমাদের জাতির দায়বদ্ধতার প্রতীক।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ফজলে রাব্বি বললেন, ‘তারা চোখ খুলে দিয়েছিল—কে বঞ্চিত, কে নিপীড়িত, তা দেখিয়ে গেছেন নিজেদের জীবন দিয়ে। আজকের এই সম্মান তাদের আত্মত্যাগের মূল্য নয়, বরং একটি প্রেরণার স্বীকৃতি।’

যারা হারিয়েছেন ভাই, ছেলে, স্বামী বা বন্ধুকে—তাদের কাছে এই ক্ষত এখনও কাঁচা। তবু এই সঞ্চয়পত্র যেন এক ধরনের স্বীকৃতি—রাষ্ট্র তাদের কথা ভুলে যায়নি, তাদের আত্মত্যাগ মূল্যহীন হয়নি।

সারাবাংলা/এইচআই

আত্মত্যাগ জুলাই আন্দোলন জুলাই শহিদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর