Monday 19 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এত জঞ্জাল অল্পদিনে দূর করা সম্ভব নয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ মে ২০২৫ ১৬:৩১ | আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ১৭:১৪

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশের সংস্কৃতি খাতে এত জঞ্জাল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বল্প সময়ে দূর করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তবে বিদায়ের আগে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে পরবর্তী সরকারের জন্য সমাধানের রাস্তা তৈরি করে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার (১৯ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলন সংস্কৃতি উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এ সময় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতি খাতের কিছু সমস্যা তুলে ধরে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আমাদের সকল আগ্রহ, শুধু সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় না, সকল মন্ত্রণালয়ের আগ্রহ, মানে আমাদের উন্নয়নের দর্শনই হচ্ছে- দালান বানাও, দালান বানাও, দালান বানাও। দালানের ভেতরে কী হবে, এটার কোনো খবর নেই। শিল্পকলা একাডেমি দেশের বহু জায়গায় ৬০০-৭০০ সিটের অডিটোরিয়াম বানিয়েছে, যেখানে ৫০ জন লোকও যায় না, মাসে পাঁচ-ছয়বারও ব্যবহার হয় না।’

শিল্পকলার পাঠ্যসূচি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আমাদের শিল্পকলাগুলো কবে একটা কী কারিকুলাম বানিয়ে দিয়ে গেছে, ওই কারিকুলামের মধ্যেই আমরা আটকে আছি। বাংলাদেশে সবচেয়ে পাওয়ারফুল হচ্ছে মিউজিক, গান। একেক অঞ্চলে গানের একেকরকম ভ্যারাইটি। আমাদের যে অ্যাসেট আছে, সেটাকে আমরা নিজেরাও ব্যবহার করিনি, বাইরের দুনিয়ায়ও প্রদর্শন করিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে মোস্ট পাওয়ারফুল হচ্ছে রক মিউজিক। বাংলাদেশের রক মিউজিক কিংবা যেটাকে আমরা ব্যান্ডসঙ্গীত বলি, এটাতে সবচেয়ে বড় অবদান চট্টগ্রামের রক মিউজিশিয়ানদের। কিন্তু চট্টগ্রামের শিল্পকলার সঙ্গে রক মিউজিকের কোনো সম্পর্ক নেই। কেন চট্টগ্রামের রক মিউজিশিয়ানরা শিল্পকলাকে তার আখড়া ভাবতে পারল না, এটা শিল্পকলার ব্যর্থতা, আমাদের ব্যর্থতা।’

বিজ্ঞাপন

দুই-তিন মাসের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সঙ্গীত বিষয়ে কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে উপদেষ্টা জানান। সংস্কৃতি খাতের সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, ‘আমাদের ক্যানসার কোথায়, এটা আমরা আইডেন্টিফাই করেছি। এ অনুযায়ী কিছু ব্লুপ্রিন্টও দেব। আমাদের এ সীমিত সময়ে সব সমস্যা আমরা চিহ্নিত করতে পারব না। তবে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের রাস্তা আমরা বলে যাব। এত যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে, আমাদের অল্পদিনে সেগুলো দূর করা সম্ভব নয়। তবে আমি যাবার আগে, আমরা একটা ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করছি যে, আগামী পাঁচ বছরে কী করা উচিত, দশ বছরে কী করা উচিত। আমরা যাওয়ার আগে আমি একটা প্রেস কনফারেন্স করব, সেখানে আমার পরে যিনি আসবেন এ দায়িত্বে, আমি আমার উপলব্ধিটা উনাকে দিয়ে যাব। উনি যদি ফিল করেন যে, এখান থেকে উনার নেওয়ার মতো কিছু আছে, তাহলে উনি নেবেন।’

বাংলাদেশ টেলিভিশনে আবারও ‘নতুন কুঁড়ি’ অনুষ্ঠান চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন কুঁড়ি চালুর বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মাহফুজ আলম রাজি। নতুন কুঁড়িটা অবশ্যই চালু করতে হবে। নতুন কুঁড়ি এমন এক ক্রেজ তৈরি করেছিল যে, সেখানে যাওয়ার জন্য একবছর কিংবা দুই বছর, তিন বছর আগে থেকে বাসায় টিচার রেখে বাচ্চাকে গান শেখানো শুরু করে দিত। তো, এই জায়গাটাতে যদি আমরা ফেরত না যাই, তাহলে বাচ্চাদের জন্য এটা খুব মুশকিলের জায়গা হবে।’

চট্টগ্রামে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর নিয়ে পরিকল্পনা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর আমরা পরিদর্শন করেছি। এটা গত ১৫-১৬ বছর অলমোস্ট ইনঅ্যাক্টিভ ছিল। এটা আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনেই একটা প্রতিষ্ঠান। ফলে এটা আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ জন্য মাস তিনেক আগে আমরা মন্ত্রণালয়ে একটা সভা করেছি এটা নিয়ে। সেই মিটিংয়ে প্রথম কাজটা আমরা করেছি যে, এটার যে বরাদ্দ ছিল সেটা আমরা দ্বিগুণ করেছি। এবার এখানে এসে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের পর আমরা যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি, শুধু বরাদ্দ বাড়ানোটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এটাকে একটা পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়ামে রূপান্তর করা।’

উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, ‘সেটা করার জন্য দরকার হচ্ছে প্রপার কিউরেটর, যারা বিষয়গুলো জানবেন এবং এটা শুধু চট্টগ্রামের বিষয় নয়, জিয়াউর রহমানের পূর্ণাঙ্গ জীবন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে শুরু করে উনার পূর্ণাঙ্গ জীবনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় উনি কী কী সিগনিফিকেন্ট কাজ করেছেন, সবগুলো জিনিস যেন আসে। এ জিনিগুলো কীভাবে প্রপারলি অডিয়েন্সের কাছে রিপ্রেজেন্ট করা যায়, এজন্য একটা কিউরেটর টিম লাগবে, সেই টিমটা আমরা তৈরি করছি।’

জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি গবেষণা টিমও তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, ‘পাশাপাশি কিউরেটর টিমকে হেল্প করার জন্য একটা রিচার্স টিম প্রয়োজন, যারা জিয়াউর রহমানের ওপর রিচার্স করে জানাবে কী কী হাইলাইট হবে এবং পয়েন্টগুলো কী কী। এটা আশা করি আমরা আগামী মাসখানেকের মধ্যে করতে পারব। তারপর আমরা মিউজিয়ামের আধুনিকীকরণের কাজ শুরু করব। কতদিন লাগবে সেটা আমি এই মুহূর্তে প্রেডিক্ট করতে পারছি না, তবে কাজটা আমরা হাতে নিয়েছি এবং কাজটা আমরা শুরু করছি।’

এর আগে, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মুসলিম ইনস্টিটিউট, জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর ও জিয়া স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

জঞ্জাল টপ নিউজ মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সংস্কৃতি উপদেষ্টা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর