Tuesday 20 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিস্তার পানি বেড়ে ভাঙছে নদী, তলিয়ে যাচ্ছে ফসল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২০ মে ২০২৫ ১৮:৪৯ | আপডেট: ২০ মে ২০২৫ ২১:৫৫

তিস্তা নদীর পানি বেড়ে পাড় ভাঙন শুরু হয়েছে।

রংপুর: রংপুর বিভাগে গত কয়েকদিন ধরে চলা মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতে বিভাগের বিভিন্ন খাল-বিল, নদী-নালা-পুকুর পানিতে পরিপূর্ণ হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে তিস্তা নদীর পানি; শুরু হয়েছে ভাঙন। এরই মধ্যে বসতভিটাসহ ডুবতে শুরু করেছে চরের বুকে চাষ করা বিভিন্ন ফসল।

রংপুরের বিভিন্ন এলাকার সবজিখেতে পানি জমে পচে গেছে গ্রীষ্মকালীন শস্য। কৃষকরা বলছেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বড় লোকসানের মুখে পড়বেন তারা। এদিকে, চাষিদের খেত থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। আর আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী ২৩ মে পর্যন্ত এ ধরনের আবহাওয়া বিরাজমান থাকতে পারে।

বিজ্ঞাপন

রংপুরের আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। রংপুর বিভাগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। রংপুর বিভাগে দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। আগামী ২৩ মে পর্যন্ত এ ধরনের আবহাওয়া বিরাজমান থাকতে পারে।

হটাৎ করেই ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সোমবার (২০ মে) সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার এক মিটার এবং ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

জানা গেছে, তিস্তা নদী নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এর দৈর্ঘ্য ১১৫ কিলোমিটার। এই নদীর ৪৫ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কমপক্ষে ১০ পয়েন্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

সবজিখেতে পানি জমায় বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকরা।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, আগামী দুদিন রংপুর বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বর্তমানে তা বিপদসীমার নিচে রয়েছে।

এদিকে পানি বৃদ্ধি পাশাপাশি তিস্তা এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় ১০টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের আশঙ্কা, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে তিস্তা রুদ্রমূর্তি ধারণ করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।

জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহ এলাকার বাসিন্দা তহর উদ্দিন, আব্দুর রশীদ, ফরিদ মিয়া, আলিমুদ্দিন, রবিউল ইসলামসহ ১০ জনের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে নদী তীরবর্তী মানুষের জীবিকার অবলম্বন ভুট্টা, বাদাম, মিষ্টি কুমড়ারখেত নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। তিস্তা নদী ভাঙতে ভাঙতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গড়ে তোলা বালুর গ্রাম রক্ষা বাঁধের কাছাকাছি চলে এসেছে। বর্ষায় উজানের ঢলে এ বাঁধ ভেঙে গেলে তিস্তা সেতু ও রংপুর-লালমনিরহাট সড়ক ভাঙনের হুমকিতে পড়বে। এ ছাড়া পানি বৃদ্ধির ফলে কাউনিয়া উপজেলার বেশ কিছু বাদামখেত তলিয়ে গেছে।

টেপামদূপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম জানান, তার এলাকায় বেশ কিছু বাদামের খেত তলিয়ে গেছে। কয়েক বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।

কাউনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার জানান, তিস্তার পানি বাড়ায় ১৫ একর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। তবে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তারপরও খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধ দ্রুত সংস্কার করা না হলে বর্ষায় বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান মৃধা বলেন, ‘ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে।’

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ‘তিস্তার প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব এলাকার বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে।’

এদিকে বৃষ্টির কারণে রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় সবজিসহ গ্রীষ্মকালীন শস্যের বেশ ক্ষতি হয়েছে। গত দুইদিনের বৃষ্টিতে রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্কুরনী ইউনিয়ন ও মিঠাপুকুরের রানীপুকুর ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হেক্টর জমি হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষকরা বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে করলা, ঝিঙেসহ প্রায় সব ধরনের ফসলই তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া ৭০ শতাংশ ফসলই নষ্ট হয়ে যাবে।’ আর কৃষি বিভাগ বলছে, ‘গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রংপুরের একশ হেক্টর বেশি জমির সবজিখেত ক্ষতি হয়েছে।’

রংপুরের মিঠাপুকুরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোসফিকুর রহমান বলেন, ‘কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতি কমাতে ডুবে যাওয়া ক্ষেত থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে আরও পানি জমলে ফসল বাঁচানো মুশকিল হবে।’

সারাবাংলা/এইচআই

তিস্তা নদী ভাঙন বৃষ্টি রংপুর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর