ঢাকা: সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব আমলে না নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে বলে অভিযোগ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। তাই ইসি পুনর্গঠনের দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে দলটি।
বুধবার (২১ মে) সকাল ১১টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের সামনে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে বলে জানিয়েছেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
মঙ্গলবার (২০ মে) রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত এনসিপির কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন বলেন, ‘অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, ২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবৈধ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকাই দায়ী বলে আমরা মনে করি। ‘ইশরাক হোসেন বনাম শেখ ফজলে নূর তাপস গং’ মামলার বিবাদী হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন নজিরবিহীনভাবে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি, যার ফলে একতরফা রায় দেওয়া হয়েছে। এমনকি রায়ের পরে তারা উচ্চ আদালতে প্রতিকার প্রার্থনা না করে মামলার বাদীকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এর আগেও আমরা দেখেছি, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ বজায় রাখার পরিবর্তে এমন সব বক্তব্য দিয়েছেন, যার সঙ্গে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অবস্থানের মিল রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই মামলায় রায় ঘোষণায় আগেই সংশ্লিষ্ট আইনের অধীন গত ১৯ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। ফলে পুরো মামলাটিই অকার্যকর হয়ে গেছে। রায় ঘোষণার পর গেজেট প্রকাশের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাইলেও, মতামত প্রদানের পূর্বেই তড়িঘড়ি করে রাতের আঁধারে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক ভূমিকা স্পষ্টতই পক্ষপাতমূলক।’
আখতার বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন অবৈধ ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২’ অনুযায়ী গঠিত, যা সে সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষ প্রত্যাখ্যান করেছিল। এতদ্বসত্ত্বেও, আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার আগেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ফলে বিদ্যমান নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার প্রতিফলন ঘটবে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। যেমন, পলাতক ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবকে নাকচ করেছে বিদ্যমান নির্বাচন কমিশন। এর ফলে এই কমিশনের ওপর আস্থা রাখা সম্ভব নয় বলেই আমরা মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি, জনপ্রতিনিধি না থাকায় নাগরিক সেবা দিতে মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে এবং সামাজিক সুরক্ষা উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ‘ইশরাক হোসেন বনাম শেখ ফজলে নূর তাপস গং’ মামলাকে নজির হিসেবে নিয়ে সারাদেশে অবৈধ নির্বাচনের প্রার্থীরা আদালতের শরণাপন্ন হয়ে এক জটিল ও সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি করছে। এ সংকট নিরসনে এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনই একমাত্র সমাধান। কিন্তু ফ্যাসিবাদী আইনে গঠিত বর্তমান পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম নয় বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। তাই, আমরা অনতিবিলম্বে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। এই দাবিতে আগামীকাল এনসিপি ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে সকাল ১১টায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।’