Friday 23 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে কোরবানির হাট
বিক্রির অপেক্ষায় সাড়ে ৮ লাখ পশু, ঘাটতি ৩৫ হাজার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ মে ২০২৫ ১০:০৬

চট্টগ্রামের কোরবানির পশুর হাট। ফাইল ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে কোরবানির হাটে গরু, মহিষ, ছাগল মিলিয়ে বিক্রির অপেক্ষায় প্রস্তুত সাড়ে আট লাখের বেশি পশু। তবে এরপরও বন্দরনগরীতে কোরবানিদাতার চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩৫ হাজার পশুর ঘাটতি আছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেছেন, উত্তরবঙ্গের গরু দিয়ে চট্টগ্রামের চাহিদা সহজেই মেটানো যাবে।

আর খামারিরা জোর দিচ্ছেন চোরাচালানের মাধ্যমে কোনো গরু যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে, যাতে তাদের বিক্রিতে কোনো প্রভাব না পড়ে। চট্টগ্রামে এবারের ঈদুল আজহায় কী পরিমাণ পশুর চাহিদা হতে পারে, কী পরিমাণ গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া মজুত আছে তা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের উপজেলা ও থানা কার্যালয়ের জরিপ অনুযায়ী, এবার চট্টগ্রামে কোরবানিদাতার সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজারের মতো বাড়তে পারে। সে হিসেবে পশুর চাহিদা নয় লাখের মতো হবে। জরিপমতে, চট্টগ্রামের খামারে এবং ‍গৃহস্থের কাছেই সাড়ে আট লাখের বেশি পশু আছে। ঘাটতি থাকছে ৩৫ হাজারের মতো কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি। প্রতিবছর কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ থেকে প্রচুর গরু চট্টগ্রামে আসে। এবারও আসবে। সুতরাং ঘাটতি নিয়ে চিন্তার কিছু আছে বলে মনে করি না।’

সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জেলার ১৫ উপজেলা এবং সিটি করপোরেশনের ৪১ ওয়ার্ড মিলিয়ে চট্টগ্রামে গত বছর কোরবানি হয়েছে ৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৬৮টি পশু। জরিপ করে এবার চাহিদা হিসাব করা হয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। অর্থাৎ এবার চাহিদা বেড়েছে ৬৭ হাজার ২৯৭টি পশুর।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে খামারে এবং গৃহপালিত মিলিয়ে এবার মোট পশু আছে ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি। তাহলে চাহিদার অনুপাতে ঘাটতি থাকছে ৩৫ হাজার ৪৪৭টি। মজুত ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি পশুর মধ্যে গরু-মহিষ আছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩টি। এর মধ্যে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ২৯টি ষাঁড়, ১ লাখ ২১ হাজার ৬৭০টি বলদ, ৪৯ হাজার ১১৪টি গাভী এবং মহিষ ৬৪ হাজার ১৬৩টি। এছাড়া গয়াল আছে ৩৫টি। ছাগল মজুত আছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৭৪টি ও ভেড়া আছে ৫৫ হাজার ৬৯৭টি।

চট্টগ্রামের কোরবানির পশুর হাট। ফাইল ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রামের কোরবানির পশুর হাট। ফাইল ছবি: সারাবাংলা

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় মধ্যে পশু মজুত আছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৭০৫টি। এর মধ্যে মীরসরাইয়ে ৫৮ হাজার ৭৮০টি, সীতাকুণ্ডে ৫৬ হাজার ৮৫০টি, সন্দ্বীপে ৮৫ হাজার ২৫০টি, ফটিকছড়িতে ৬৯ হাজার ৪১৯টি, হাটহাজারীতে ৪৪ হাজার ৮৯০টি, রাউজানে ৩৪ হাজার ৩০২টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৫০ হাজার, বোয়ালখালীতে ২৯ হাজার ৭৪২টি, পটিয়ায় ৭০ হাজার ১৮০টি, কর্ণফুলীতে ৩৩ হাজার ৫৩৩টি, আনোয়ারায় ৬৩ হাজার ৪২৮টি, চন্দনাইশে ৪৭ হাজার ৪টি, সাতকানিয়ায় ৪৫ হাজার ৩৭১টি, , লোহাগাড়ায় ৩৮ হাজার ৫৯টি এবং বাঁশখালীতে ৫৯ হাজার ৪০৪টি পশু মজুত আছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে পশু মজুত আছে এক লাখ ৯ হাজার ৭৫৭টি। এর মধ্যে নগরীর ডবলমুরিং এলাকায় ৩৭ হাজার ৫০০টি, কোতোয়ালিতে ৩০ হাজার ৬৯৮টি এবং পাঁচলাইশে ৪১ হাজার ৫৫৯টি পশুর মজুত আছে। এছাড়া, আরও প্রায় দুই লাখ পশু বিভিন্ন অস্থায়ী খামার ও গৃহস্থের কাছে আছে বলে তথ্য প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের একটা রীতি হচ্ছে, এখানকার গরু জেলার বাইরে যায় না বা বিক্রির জন্য নেওয়া হয় না। সাধারণত চট্টগ্রামের কোরবানিদাতাদের মধ্যেই সেগুলো বিক্রি হয়ে যায়। বরং উত্তরাঞ্চল থেকে প্রতিবছর লাখ খানেক গরু এখানে বিক্রির জন্য আনা হয়। এ হিসাবে আমরা বলতে পারি যে, বাজারে পশুর কোনো সংকট হবে না, কিংবা কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম নিয়ে কারসাজির সুযোগও এবার হবে না।’

চট্টগ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪ হাজার ২৫৮টি খামার আছে। এর বাইরে নগরী ও জেলায় মৌসুমি খামার অর্থাৎ যেগুলো শুধুমাত্র কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চালু করা হয়, এমন আছে শতাধিক। খামারিরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের কোরবানিদাতাদের চাহিদা অনুযায়ী পশু বিশেষ করে গরু সরবরাহে তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে চোরাই পথে গরু বাজারে এলে খামারিদের লোকসানে পড়তে হবে। বিশেষ করে প্রান্তিক খামারি ও চাষীদের বেশি ক্ষতি হবে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের খামারে পর্যাপ্ত গরু আছে। কোরবানির হাটে গরু বিক্রির জন্য আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত আছি। তবে চোরাই পথে গরু আসা বন্ধ হতে হবে। না হলে খামারিরা বড় ঝুঁকিতে পড়বে।’

প্রতিবছরের মতো এবারও চট্টগ্রাম নগরীতে সিটি করপোরেশন কোরবানির পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। জানা গেছে, নগরীতে এবার ১১টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হবে। এগুলো হলো- কর্নেলহাট, আতুরার ডিপো, পলিটেকনিক মোড়, আমবাগান, সাগরিকা, সিডিএ মার্কেট ও ইপিজেড মাঠ।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

খামারি চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় পশুর হাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর