ঢাকা: বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা প্রধানের উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইনি, এমনকি এখন পর্যন্তও চাচ্ছি না। উনার কাছে আমরা নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ দাবি করেছি।
শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘শাপলা চত্বর: শাহাদাতের রক্তে রাঙ্গা অবিনাশী চেতনা’ শীর্ষক কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র চাই এবং সাংবিধানিক অধিকার চাই। আর সেজন্যই আমরা বারবার নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছি। আর এটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা বিভিন্নভাবে বুঝতে পারছি যে, এই সরকারকে নানাভাবে ভুল বোঝানো হচ্ছে। আমাদের বিষয়ে বলা হচ্ছে যে, আমরা এই সরকারকে কাজ করতে দিতে চাচ্ছি না, এটা সঠিক নয়। আমরা বলেছি, এদেশের সেনাবাহিনীকে যেন বিতর্কিত না করা হয়। আমরা বলেছি, এদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে যেন কোনো প্রকার ছেলে খেলা না করা হয়। এ দেশের নিরাপত্তা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যেকোনো বিষয়ে যেন জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এই কথাগুলোই আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা এমন জঘন্য হত্যাকারী যে, সে রাতের অন্ধকারে সমস্ত আলো পানি নিভিয়ে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। জুলাই গণহত্যাসহ বাংলাদেশের সকল হত্যাকাণ্ড নিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) ন্যূনতম অনুশোচনা বোধ করে না। দোষ শিকার করে না, ক্ষমা প্রার্থনা করে না। উলটো অভ্যুত্থানকারীদের তারা অপরাধী তকমা দিচ্ছে। কত বড় সাহস তাদের।’
গণহত্যার বিচার করতে হলে আরও ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখন যে অবস্থায় আছি তাতে যদি সকল শহিদদের বিচার চাই তাহলে এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের মত আরও ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। তা না হলে দ্রুত এই বিচার কাজ সম্পন্ন করা যাবে না। তবে বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত কোনো বিচার কার্যত দৃশ্যমান নয়।’
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে এর শহিদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং দোষীদের বিচার করাসহ সাত দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আমির মাওলানা মামুনুল হক। এ সময় এসব দাবি আদায়ে তিনি কর্মসূচিও ঘোষণা করেন।
দাবিগুলো হলো- শাপলা চত্বরে শহিদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। শহিদ পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা এবং পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। বিশেষ করে শহিদ পরিবার ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের নিয়মিত ভাতা দিতে হবে; শাপলা চত্বরের ঘটনার ইতিহাস জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; জুলাই ঘোষণাপত্রে শাপলা চত্ত্বরের ঘটনাকে জাতীয় ট্রাজেডি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে; রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যাচাইকৃত শহিদ তালিকা প্রস্তুত করে তা জাতীয় নথিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনকারী এই গণহত্যার দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; হেফাজতে ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে; আইনজ্ঞ ও নিরপেক্ষ নাগরিকদের সমন্বয়ে ‘শাপলা গণহত্যা’ তদন্ত কমিশন গঠন ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের সুপারিশ প্রকাশ করতে হবে।
মামুনুল হকের ঘোষণা দেওয়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামী শনিবার (৩১ মে) শাপলা চত্বরের ঘটনায় যারা সংবাদ, প্রতিবেদন ও গবেষণা, সাহিত্য-রচনা, চিকিৎসা সহায়তা, আইনগত লড়াই কিংবা স্মৃতিসংরক্ষণমূলক উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের সম্মাননা প্রদানের জন্য একটি সম্মিলনীর আযোজন করা হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা বশিরউল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ, এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মো দিদারুল আহমেদ, মাওলানা রুহুল আমিন সালেহ, গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নূর, হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডে নিহত পরিবারের সদস্যরা।