Sunday 25 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ মে ২০২৫ ২১:৪৩ | আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ ২১:৫৪

ঢাকা: বিস্তারিত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করেছে বাংলা একাডেমি।

রোববার (১১ই জ্যৈষ্ঠ) সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি ও বাংলা একাডেমিতে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

সকাল সাড়ে ৬ টায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের নেতৃত্বে জাতীয় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

বিকাল ৪ টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে নজরুল বিষয়ক সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।

‘নন্দনের ‘বাঁশরী ও তূর্য’ অথবা নজরুলের সাহিত্য—চিন্তার কয়েক দিক’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারি টাঙ্গাইলের করটিয়া সরকারি সাদত কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জগলুল আসাদ।

আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির খণ্ডকালীন শিক্ষক ও ‘বাঙ্গালা গবেষণা’র পরিচালক আফজালুল বাসার। সভা প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘‘নজরুল আমাদের জাতীয় চেতনার উদ্বোধনে অবিকল্প ভূমিকা পালন করেছেন; এটা ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যেমন সত্য তেমনি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে সমান সত্য। নজরুল ব্যক্তিগত নিভৃতির জায়গা থেকে বাংলা কবিতাকে জনযুদ্ধের অগ্নিগর্ভ আবেদনে নিয়ে এসেছেন।’’

তিনি বলেন, ‘‘নজরুলজয়ন্তীতে আমরা নিশ্চয়ই তাঁর সাহিত্যকে একমাত্রিক বলয় থেকে বেরিয়ে নানা নন্দনতাত্ত্বিক পরিসরে পাঠ করা শুরু করব।’’

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক জগলুল আসাদ বলেন, ‘‘নজরুলের সাহিত্য তাঁর অভিজ্ঞতার বিস্তৃত জমিন থেকে উৎসারিত। খণ্ড খণ্ড নজরুল অখণ্ড নজরুলের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। প্রত্যেকেরই আছে টুকরো টুকরো নজরুল, যে নজরুলকে ভার বহন করতে হয় বিবিধ মতাদর্শের ও প্রেমাকুতির। কবি নজরুল তাঁর জীবনকে করেছিলেন বেদনার মতো টলোমলো, আনন্দের মতো চঞ্চলা ও অনিশ্চিত। নজরুলের বিশিষ্টতা হচ্ছে, তাঁকে আমরা কাজে লাগাতে পারি। মিছিলে বিক্ষোভে ও প্রতিবাদে।’’

তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমা নন্দনতত্ত্বকে গন্তব্য না করেই নজরুল নির্মাণ করেছিলেন তাঁর নিজস্ব শিল্পভুবন। বাংলাভাষার রমণীয় গীতিময়তার মধ্যে তিনি যোগ করেছেন পৌরুষ। কবিতায় তার ব্যক্তিগত হাহাকারও হয়েছে সকলের। নজরুলে দীর্ঘশ্বাস আছে, প্রার্থনার মত আকুল পঙ্ ক্তি আছে, বিক্ষুব্ধ স্বর আছে, দ্রোহের অগ্নিও আছে, ভাষার তুর্কি নাচন আছে, ছন্দের গীতল ভঙ্গিও আছে। নজরুলে ‘উন্নত শির’ আছে, প্রেয়সীর কাছে ‘নতশির’ সমর্পণ’ও আছে। নজরুল ময়দানের শ্লোগানেও ব্যবহার্য, ব্যক্তিগত নিভৃতিতেও সে সমান চিত্তহারী। একটুকরো অসাম্প্রদায়িক নজরুলকে অনুসন্ধান করবার অভীপ্সা এখনো হাজির প্রথাবদ্ধ—বন্ধ্যা কলমে। বহুমাত্রিক নজরুলের প্রত্যাশাও করে কাব্যমোদী।’’

আফজালুল বাসার বলেন, ‘‘নজরুলকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অবকাশ আছে। তাঁর সাহিত্য ও জীবনের বৈচিত্র্য মানুষের কাছে তাঁকে মূল্যায়নের বিভিন্ন সড়ক তৈরি করেছে। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে এটিই সবচেয়ে বড় সত্য যে তিনি মেহনতি মানুষের মুক্তির স্বপ্নকে সত্যি করতে সাহিত্যচর্চা করেছেন এবং লড়াইয়ের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।’’

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘‘নজরুল তাঁর সৃষ্টিশীল জীবনে কোনো অন্যায় বা অপশক্তির সঙ্গে আপস করেন নি। তিনি চেয়েছেন স্বদেশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। ঔপনিবেশিক বাস্তবতায় বসবাস করেও বিপ্লব বিদ্রোহের আগুনে সবসময় জ্বলন্ত ছিলেন তিনি। নিজের অন্তরের অগ্নি তিনি সম্প্রসারিত করেছেন বাংলা কবিতায় এবং স্বাধীনতাকামী মানুষের মনের ময়দানে।’’

সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল নূর হোসেন রানার নির্দেশনা ও পরিচালনায় গীতিনাট্য ‘দেখব এবার জগৎটাকে’। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী লিজা চৌধুরী ও শামীমা চৌধুরী। নজরুলগীতি পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ, সুমন মজুমদার, আজগর আলীম, ফারাহ দিবা খান লাবণ্য।

নজরুল পুরস্কার ২০২৫

বাংলা একাডেমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সৃষ্টি নিয়ে গবেষণায় বিশিষ্ট নজরুল গবেষক অধ্যাপক আনোয়ারুল হক এবং নজরুলসংগীত চর্চায় প্রখ্যাত নজরুল সংগীতশিল্পী শবনম মুশতারীকে নজরুল পুরস্কার ২০২৫—এ ভূষিত করেছে। পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষক অধ্যাপক আনোয়ারুল হক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় শিল্পী শবনম মুশতারীর পক্ষে তাঁর কন্যা শামারুখ মাহজাবীন টোড়ীর হাতে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট এবং পুরস্কারের অর্থমূল্য (প্রতিটি) ১,০০,০০০/- (এক লাখ) টাকার চেক তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি এবং মহাপরিচালক।

পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যাক্ত করে অধ্যাপক আনোয়ারুল হক বলেন, নজরুল গবেষণা মানেই আমাদের সামগ্রিক শুভবোধ ও মঙ্গলচিন্তার চর্চা। বাংলা একাডেমির এই স্বীকৃতি নজরুল গবেষণায় আমাকে এবং আমার মতো বহু গবেষককে প্রাণিত করবে বলে বিশ্বাস করি।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সায়েরা হাবীব এবং ড. মাহবুবা রহমান।

সারাবাংলা/এজেড/এসআর

উদযাপন কাজী নজরুল ইসলাম জন্মবার্ষিকী জাতীয় কবি বাংলা একাডেমি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর