ঢাকা: অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে পেজ খুলে প্রতারণার অভিযোগে প্রতারক চক্রের আটজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
বুধবার (২৮ মে) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ফেসবুকে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর অনলাইন শপ’, ‘চাঁদপুর ইলিশ বাজার’, ‘চাঁদপুর ইলিশ ঘাট’ ইত্যাদি নামে পেজ খুলে অনলাইনে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলো একটি প্রতারক চক্র। এই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২৫টি মোবাইল ফোন ও ৭০টি অবৈধ সিমসহ আট জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি।
গ্রেফতাররা হলেন- আনাছ শেখ (২১), কামাল শেখ (২১), ইয়ানুর মোল্লা (২১), জোবায়ের হোসেন (২৩), রুবেল শেখ (২৯), সাগর হোসেন (২৩), মো. আলীনূর ইসলাম (১৮), শরিফুল ইসলাম (২১)।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার খুলনা, নড়াইল ও যশোরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। এ সময় তাদের হেফাজত হতে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২৫টি মোবাইল ফোন ও ৭০টি ভুয়া রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম জব্দ করা হয়।
ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, গত ২০ নভেম্বর ভুক্তভোগী মো. মাসুম বিল্লাহ ‘চাঁদপুর ইলিশ বাজার’নামক ফেসবুক পেজে সুলভমূল্যে ইলিশ মাছ বিক্রির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেখে ইলিশ অর্ডার দেন এবং তাদের দেওয়া একটি বিকাশ নম্বরে ১৫ হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করেন। কিন্তু অর্ডারের প্রেক্ষিতে তিনি কোনো ইলিশ পাননি।
এ ঘটনায় মো. মাসুম বিল্লাহের অভিযোগের প্রেক্ষিতে খিলগাঁও থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলাটি পরবর্তীতে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তাধীন এই মামলায় তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে ডিবি। পরবর্তীতে সোমবার ও মঙ্গলবার খুলনা, নড়াইল ও যশোরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি-সাইবার সূত্রে জানা যায়, প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন শপের ছবি ব্যবহার করে পেজ খুলে চাঁদপুরের তাজা ইলিশ সুলভমূল্যে সরবরাহের বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল। তারা ইলিশ সরবরাহের অর্ডার নিয়ে অগ্রিম টাকা গ্রহণ করতো। টাকা নেওয়ার পর তারা গ্রাহকদের ইলিশ মাছ বুঝিয়ে দিতো না এবং কোন যোগাযোগ রাখতো না। চক্রটির মূলহোতা আনাছ শেখ ও শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে তারা বিভিন্ন ব্যক্তির এনআইডি সংগ্রহ করে মোবাইল কোম্পানি, বিকাশ ও নগদের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় ভুয়া সিম ও অ্যাকাউন্ট খুলে এই অভিনব প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। তারা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে এই অভিনব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। তাদের প্রতারণার শিকার অসংখ্য ভুক্তভোগী ডিএমপির বিভিন্ন থানায় সাধারণ ডায়েরি ও অভিযোগ করেছেন, যার অনেকগুলো ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগে তদন্তাধীন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। চক্রটির সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে ডিবির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য এবং অপরিচিত পেজ থেকে কেনাকাটার প্রেক্ষিতে অগ্রিম টাকা প্রদানের আগে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ভালোভাবে যাচাই করার জন্য সম্মানিত নগরবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছে ডিএমপি।