Tuesday 10 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্যাস ও জ্বালানিতে ভর্তুকি কমছে, বাড়ছে কৃষি ও খাদ্য খাতে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৯ মে ২০২৫ ১৪:১০ | আপডেট: ২৯ মে ২০২৫ ১৪:২৬

ঢাকা: দাতাগোষ্ঠীর চাপ ও রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি বিবেচনায় আসন্ন বাজেটে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি কমছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে ১ লাখ ২০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। আগামী বাজেটে এটি কমিয়ে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মতে, চলতি অর্থবছরে বন্ড ইস্যু করে এবং সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বকেয়া ভর্তুকির বড় অংশই পরিশোধ করা হয়েছে। বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধে সংশোধিত বাজেটে এ দুই খাতে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি নতুন সংযোগ ও বাড়তি লোডের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কিছুটা কমবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে সার, জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে। রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমানও স্থিতিশীল থাকবে। এসব বিবেচনায় ভর্তুকি কিছুটা কমানো হচ্ছে। তবে কৃষি খাতে ভর্তুকি কমানো হবে না। অন্যদিকে গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি কমলেও আগামী অর্থবছরে এর দাম বাড়ানো হবে না বলে ইতোমধ্যে অর্থ উপদেষ্টা বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, প্রতিমাসে বিদ্যুৎ খাতে গড় ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। সে বিবেচনায় বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

এদিকে গ্যাসের চাহিদা পূরণে আগামী বছরে এলএনজি আমদানি আরও বাড়বে। এমতাবস্থায় আমদানি কমিয়ে আনতে আগামী অর্থবছরে পাঁচটি নতুন কূপ খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে এটি কমিয়ে ৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে।

সূত্র মতে, আগামী বাজেটে রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রণোদনা খাতে ভর্তুকি কমছে না। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে ১৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে রফতানি প্রণোদনা বাবদ ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ও রেমিট্যান্স প্রণোদনা বাবদ ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গেলে এ খাতে বাড়তি ব্যয়ের প্রয়োজন হবে। এর বাইরে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পৃথক প্রণোদনা দেওয়া হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর রফতানিতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না। এ প্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছর থেকেই পর্যায়ক্রমে রফতানি প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত ছিল পূর্ববর্তী সরকারের। সে অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে রফতানি প্রণোদনার হার কমানো হয়েছে। তবে চলমান বৈশ্বিক বাণিজ্যিক পরিস্থিতিতে রফতানি ব্যাহত হতে পারে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় না অন্তর্বর্তী সরকার।

এদিকে এসব ভর্তুকির বাইরেও সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নগদ ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকে, যা ভর্তুকি হিসেবে দেখানো হয়। এ খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আগামী অর্থবছরের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কৃষির এ ভর্তুকি মূলত সার আমদানিতে দিয়ে থাকে সরকার। কোনো কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়ে গেলে বা টাকার অবমূল্যায়ন হলে এ খাতে প্রয়োজন অনুযায়ী ভর্তুকি বাড়াবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এছাড়া আগামী অর্থবছরে সারের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে আগামী বাজেটে খাদ্য সহায়তা খাতে ভর্তুকি বাড়তে পারে। চলতি অর্থবছরে খাদ্য ভর্তুকি খাতে ৭ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এবার এটি বাড়িয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। তবে টিসিবির ভর্তুকি অপরিবর্তিত থাকছে। চলতি অর্থবছরে টিসিবি’র জন্য ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সারাবাংলা/আরএস

বাজেট ভর্তুকি ও প্রণোদনা