Saturday 31 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সার্কিট হাউজ অভিমুখী গাড়ি আটকে পুলিশ বলল— রাষ্ট্রপতি শাহাদাৎবরণ করেছেন

রমেন দাশ ‍গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ মে ২০২৫ ০৭:৫৯ | আপডেট: ৩০ মে ২০২৫ ১৩:৩২

চট্টগ্রাম ব্যুরো : ১৯৮১ সালের ২৯ মে। সেদিন চট্টগ্রামের আকাশে ছিল কালো মেঘ, দিনভর অঝোর বর্ষণে ভিজেছে বন্দরনগরী। রাতও ছিল বর্ষণমুখর। আর সেই রাতেই বৃটিশের নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে গড়া চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের মেঝে ভিজেছিল দেশের একজন রাষ্ট্রপতির তাজা রক্তে। একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নির্মম খুনের শিকার হয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।

সেই বৃষ্টিস্নাত দিনটিতেই চট্টগ্রামে সরকারি সফরে এসেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সরকারি ও সাংগঠনিক একাধিক সভায় ব্যস্ত সময় কাটান। সর্বশেষ রাত ২টার দিকে চট্টগ্রাম শহর বিএনপির তৎকালীন সভাপতি সলিমুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে বিদায় দিয়ে ঘুমোতে যান। ভোর ৪টার দিকে জাহাঙ্গীর আলমের বাসার টেলিফোন বেজে ওঠে। ফোন করেছেন বিএনপি নেত্রী রোজী কবির, জানালেন- সার্কিট হাউজে গোলাগুলি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

জাহাঙ্গীর আলম তৎক্ষণাৎ বাসা থেকে বেরিয়ে সলিমুল্লাহ আর যুবদল নেতা একরামুল করিমকে নিয়ে টেক্সিতে রওনা দেন সার্কিট হাউজের উদ্দেশে। কিন্তু সার্কিট হাউজের অদূরে কাজির দেউড়ির মোড়ে তাদের আটকে দেয় ট্রাফিক সার্জেন্ট। তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শাহাদাৎবরণ করেছেন। বিএনপি নেতাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল ! তারা দেখলেন, সার্কিট হাউজ ঘিরে রেখেছে সেনাসদস্যরা, শহরজুড়ে চলছে সেনা টহল।

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সামনে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সামনে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল। ছবি: সারাবাংলা

প্রায় ৪৫ বছর আগের সেই মর্মন্তুদ ঘটনার সাক্ষীদের অনেকেই কালের স্রোতে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন জাহাঙ্গীর আলম। স্মৃতিতে এখনও জ্বলজ্বল দেশের জনপ্রিয় শাসক জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিক চিরবিদায়ের কথা, যা তুলে ধরেছেন সারাবাংলা’র কাছে।

বিজ্ঞাপন

‘সাংগঠনিক বিরোধ মেটাতে নয়, সরকারি সফরে এসেছিলেন জিয়া’

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আরোহণের পর জিয়াউর রহমান এক পর্যায়ে রাজনীতিতে আসেন। প্রথমে জাগদল এবং পরবর্তীতে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানের আহ্বানে বিএনপিতে যোগ দেন জাহাঙ্গীর আলম। সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে শুরুতেই নজরে পড়ে যান জিয়াউর রহমানের। প্রথমে চট্টগ্রাম শহর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়, এরপর সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে একটি প্রচারণা ছিল যে, চট্টগ্রামে বিএনপি নেতাদের মধ্যে সাংগঠনিক বিরোধ মেটাতে এসে তিনি খুন হয়েছেন। এ প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এটা ডাহা মিথ্যা কথা, কমপ্লিটলি মিথ্যা কথা। সাংগঠনিক বিরোধের কোনো কথাই সেখানে হয়নি। যদি বিরোধের বিষয় থাকতো, তাহলে জামাল উদ্দিন সাহেব (মন্ত্রী) চট্টগ্রামে থাকতেন, সুলতান আহমদ চৌধুরী সাহেব (স্পিকার) চট্টগ্রামে থাকতেন। উনারা চট্টগ্রামে নেই, তাহলে বিরোধটা কার সঙ্গে হলো? জিয়াউর রহমানকে যারা হত্যা করেছে, তারা এই প্রচারণাটা চালিয়েছে।’

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে গড়ে ওঠা জিয়া স্মৃতি জাদুঘর। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে গড়ে ওঠা জিয়া স্মৃতি জাদুঘর। ছবি: সারাবাংলা

শেষ দিনটি যেভাবে কেটেছিল জিয়ার

১৯৮১ সালের ২৯ মে জিয়াউর রহমানের চট্টগ্রাম সফরের তিনদিন আগে ২৬ মে শহর বিএনপির সভাপতি সলিমউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে ঢাকায় ডেকে পাঠান। সেদিন তারা বঙ্গভবনে গিয়ে জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাদের জানান, তিনি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছার পর সেখানে কোনো ধরনের লোক সমাগম করা যাবে না। সার্কিট হাউজে পৌঁছার পর শুধুমাত্র ১০ জনের একটি দল তাকে রিসিভ করবেন।

জাহাঙ্গীর আলম জানান, ২৯ মে সকাল ১০টার দিকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সার্কিট হাউজে পৌঁছান। প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিবের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী সলিমউল্লাহ, আবদুল্লাহ আল নোমান, জাহাঙ্গীর আলম, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ ১০ জন নেতা সার্কিট হাউসে যান জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, মহিবুল হাসান ও একজন নারী নেত্রী।

জিয়া সার্কিট হাউজে ঢুকে প্রথমেই দলীয় নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে চা-চক্রে যোগ দেন। সেখানে নেতাদের সঙ্গে তিনি খুনসুটিতেও মেতে ওঠেন কিছুক্ষণ। হাসিমুখে বলেন, ‘চট্টগ্রামকে আমি খুব বেশি ভালবাসি। আমি এখানে একটি বাড়ি করব। তোমরা আমার জন্য একটি জায়গা দেখ।’ জাহাঙ্গীর আলমের উদ্দেশে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর, তোমাকে তো আমি বিএনপিতে রাখতে পারব না। আমি আইন করেছি, দুই সন্তানের বেশি নয়। তোমার তো তিন ছেলে, দুই মেয়ে।’ হেসে জাহাঙ্গীর জবাব দেন, ‘স্যার, আপনি আইন করার আগেই আমার পাঁচ সন্তানের জন্ম হয়েছে।’

চা চক্র শেষে জিয়া সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বসেন সর্বস্তরের পেশাজীবীদের সঙ্গে। সেখানে দলীয় নেতারাও ছিলেন।

বিএনপি নেতা জাহাঙ্গাীর আলম। ছবি: সারাবাংলা

বিএনপি নেতা জাহাঙ্গাীর আলম। ছবি: সারাবাংলা

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি পড়ছিল। পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে প্রেসিডেন্ট ওপরে (সার্কিট হাউজের দোতলায়) উঠে যান। বাইরে আমি, সলিমউল্লাহ ভাইসহ আরও কয়েকজন বসেছিলাম। রাত সাড়ে ১১টা থেকে জিয়াউর রহমান সাহেব আমাদের একজন করে ডেকে সাংগঠনিক বিষয়ে খোঁজখবর নিলেন। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কী অবস্থা সেটাও জানতে চাইলেন। আমাকে একটি অফিস দেখার জন্য বললেন, সেখানে ফিরোজ নুন এসে নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন বলে জানালেন।’

তিনি জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষ করে প্রেসিডেন্ট জিয়া তার জন্য নির্ধারিত ভিআইপি কক্ষে ঢুকে যান। হঠাৎ আবার বের হয়ে এসে করিডোরে বসা জাহাঙ্গীর আলমকে ডেকে নেন নিজ কক্ষে। এর মধ্যেই সার্কিট হাউজ ছেড়েছেন অন্য নেতারা, শুধু সলিমুল্লাহ ছিলেন। জিয়া ছয় জন কর্মীর নাম উল্লেখ করে তাদের আচরণ, কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের দলে রাখা যাবে না বলে জাহাঙ্গীর আলমকে জানান। জাহাঙ্গীর আলম একজন ষড়যন্ত্রের শিকার জানিয়ে বাকি পাঁচজনের বিষয়ে অনাপত্তি দেন।

এর পর জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে এলেন জিয়া। বৃষ্টি পড়ছে দেখে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, সলিমুল্লাহ ও জাহাঙ্গীর আলমের জন্য কোনো গাড়ির ব্যবস্থা করা যায় কি না। জেলা প্রশাসক একটি গাড়ির ব্যবস্থা করলে দুই নেতাকে এগিয়ে বিদায় দিয়ে জিয়া কক্ষে ঢুকে যান। এর পর তিনি আর কারও সঙ্গে সাক্ষা‍ৎ করেননি। রাত তখন প্রায় ২টা। জেলা প্রশাসকের দেওয়া গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছান সলিমুল্লাহ ও জাহাঙ্গীর আলম। ভোর ৪টা, রোজী কবিরের ফোন- সার্কিট হাউজে গোলাগুলি হচ্ছে।

বাসায় ফিরে জাহাঙ্গীর আলম ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর ৪টার দিকে টেলিফোনের শব্দে ধড়মড়িয়ে ওঠেন। টেলিফোনের অপরপ্রান্তে রোজী কবিরের কন্ঠ। চট্টগ্রামের ভাষায় তিনি বললেন, ‘বদ্দা, সার্কিট হাউজত বলে গোলাগুলি অর (বড়ভাই, সার্কিট হাউজে নাকি গোলাগুলি হচ্ছে)। এরপর শহরের বাগমনিরাম ওয়ার্ডের তৎকালীন কমিশনার আব্দুল মান্নান ফোন করে তাকে সার্কিট হাউজে গোলাগুলির খবর দেন।

তৎক্ষণাৎ একটি টেক্সি ডেকে বেরিয়ে পড়েন জাহাঙ্গীর আলম। প্রথমে যান শহরের পুরাতন গির্জায় তৎকালীন সংসদ সদস্য সিরাজুল আলমের বাসায়। কিন্তু তিনি বাসায় ছিলেন না। এরপর যান সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বাসায়, তিনিও ছিলেন না। সলিমুল্লাহকে টেক্সিতে নেন। ততক্ষণে তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন যুবদল নেতা একরামুল করিমও। তারা পৌঁছেন সার্কিট হাউজের অদূরে কাজির দেউড়ির মোড়ে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সেখানে ট্রাফিক সার্জেন্ট আমাদের টেক্সি আটকে দেয়। বলে, আপনারা কোথায় যাচ্ছেন ? আমরা সার্কিট হাউজে যাবার কথা বললাম। সার্জেন্ট বললেন- ওখানে যেতে পারবেন না, প্রেসিডেন্ট শাহাদাৎ বরণ করেছেন। আর্মির লোকজন এসেছে, লাশ নিয়ে যাবে একটু পর। ততক্ষণে বৃষ্টি থেমেছে। সারা শহর তখন থমথমে। জেনারেল মঞ্জুরের (জিয়ার হত্যাকারী) সমর্থক আর্মি সারা শহরে ঘুরছে। আমরা বিক্ষিপ্তভাবে ওই এলাকায় অবস্থান নিই। দেখলাম, আর্মির গাড়িতে লাশ বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খবর পেলাম, আর্মি আমাকে আর সলিমুল্লাহকে খুঁজছে। আমরা খাতুনগঞ্জে গিয়ে আত্মগোপন করে থাকি।’

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ। ছবি: সারাবাংলা

‘জেনারেল মঞ্জুরের নির্দেশে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত জিয়ার লাশ গুম করে ফেলে। আমরা কেউই জানতাম না, লাশ কোথায়। তিনদিন পর জানা গেল, রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড়ি জায়গায় জঙ্গলের ভেতর লাশ পাওয়া গেছে। তখন ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ গিয়ে জিয়াউর রহমানের লাশ উদ্ধার করলেন। ক্যান্টনমেন্টে লাশের গোসল দিয়ে সেটা ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হলো। লাশ যখন পাওয়া গেল, তিনদিন পর আমরা লালদিঘীর মাঠে গায়েবানা জানাজা পড়লাম। বুলেটিন, লিফলেট বের করে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাই। মিছিল-মিটিংও করি।’

জিয়া ষড়যন্ত্রের বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিলেন

সার্কিট হাউজে একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যার মতো চাঞ্চল্যকর একটি ষড়যন্ত্রের ছক আঁকা হচ্ছে- এমন বিষয়ে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতারা কিছুই আগে থেকে আঁচ করতে পারেননি বলে জানালেন জাহাঙ্গীর আলম। তবে ঘটনার দিন রাষ্ট্রপতির সামরিক একান্ত সহকারী (পিএস) কর্নেল মাহফুজের আচরণ তার কাছে রহস্যজনক ঠেকেছিল। জাহাঙ্গীরের ধারণা, কিছু একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে সেটা সম্ভবত জিয়াউর রহমান আঁচ করতে পেরেছিলেন।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এত বড় একটা ঘটনা ঘটে যাবে, এটা আমরা আগে থেকে ঘূর্ণাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারিনি। তবে উনি (জিয়াউর রহমান) করতে পেরেছিলেন বলে আমার ধারণা। না হলে, তিনি আমাদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে বিমানবন্দরে, সার্কিট হাউজে লোক সমাগম করতে নিষেধ করেছিলেন কেন ? যতটুকু জানি, এসবি-এনএসআই থেকে উনাকে বলা হয়েছিল নট টু গো। তারপরও উনি শোনেননি। আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, উনার কেউ ক্ষতি করবেন না।’

‘তবে একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছিলাম সেদিন, প্রেসিডেন্টের মিলিটারি পিএস কর্নেল মাহফুজের কাছে বেশি করে ফোন আসছিল। আমি মাহফুজকে বলেছিলাম, আপনার টেলিফোনের জ্বালায় তো আমরা বসতে পারছি না। তিনি বললেন, টেলিফোন এলে আমাকে ওপরে লাইন দিয়ে দিয়েন। এটা আমি অবজার্ভ করেছি, তার কাছে এত টেলিফোন কেন আসছে। এই কর্নেল মাহফুজই হচ্ছে ষড়যন্ত্রের মূল নায়ক। পরে তো তার ফাঁসি হল।’

এ হত্যাকাণ্ডের নির্মোহ তদন্ত হওয়া উচিত ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটা বিএনপির ব্যর্থতা যে, তারা সরকারে থাকাকালীন এটার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হয়নি। বিএনপি করেনি, কিন্তু কেন করেনি সেটা বিএনপিই ভালো জানে। একটা হত্যাকাণ্ডের তো বেসামরিক তদন্ত হওয়া দরকার ছিল। এখানে আর্মি জড়িত আছে ঠিক আছে, কিন্তু এখানে আরও অনেক ফ্যাক্টর থাকতে পারে, ওটা তদন্ত করে বের করা উচিত ছিল।’

জিয়া বলেছিলেন- বিএনপি নেতাকর্মীরা হবে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার সিপাহশালার

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় এলেন, তখন দেশের অর্থনীতি তেমন সবল ছিল না। উনি এমন একজন রাষ্ট্রপ্রধান, তিনি দেশের সম্পদের ওপর জোর দিলেন। খাল খনন করলেন, কৃষিজমি চাষ করা, পোল্ট্রি শিল্প, বৃক্ষরোপণ, গার্মেন্টস শিল্প- সব তো উনার আমলেই শুরু। এর পর তিনি সমুদ্রে আমাদের যে অফুরন্ত সম্পদ আছে, সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করেছিলেন। চট্টগ্রামে একটা সি রিসোর্স ইনস্টিটিউট করারও পরিকল্পনা করেছিলেন।’

‘তিনি আমাদের বলেছিলেন, আমাদের সমুদ্রে এত সম্পদ আছে, এটা নিয়ে আমাদের সাথে প্রতিবেশি দেশের ঝামেলা হতে পারে, সেটা ভারত হতে পারে, বার্মা হতে পারে। এখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। একেকজন বিএনপি নেতাকর্মী হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার একেকজন সিপাহশালার। আমি কাউকে নেতা, কাউকে মন্ত্রী, কাউকে এমপি বানানোর জন্য বিএনপি গঠন করিনি। বিএনপির নেতাকর্মীদের দায়িত্ব হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সিপাহশালারের ভূমিকা পালন করা।’

জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকলে অর্থনৈতিক দিকে বাংলাদেশ অনেক আগেই সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যেত বলে মন্তব্য জাহাঙ্গীর আলমের। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে হারানোর পর দেশটা চলে গেল লুটেরাদের দখলে। ব্যাংক লুটেরা, গত ১৬ বছরে ব্যাংকগুলো লুট করে খালি করে ফেলেছে। বাজারে সিন্ডিকেট। একবার চালের দাম সামান্য বেড়ে যাবার পর জিয়াউর রহমানের নির্দেশে আমরা খাতুনগঞ্জে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মিছিল করেছিলাম। এখন কী আর সেই রাজনীতি আছে! রাজনীতিতে নীতি-আদর্শ বলতে কিছু নেই। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা জিয়াউর রহমানকে অকালে হারিয়ে ফেলেছি।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ জিয়াউর রহমান ষড়যন্ত্র হত্যাকাণ্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর