ঢাকা: করনেট বাড়াতে আয়করে বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে একজগুচ্ছ প্রস্তাব থাকতে পারে। বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে। নতুন করদাতাদের জন্য রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে নূন্যতম কর পাঁচ হাজার টাকার পরিবর্তে এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব থাকতে পারে। এছাড়া, ৩৯টি ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা ও ১২টি ক্ষেত্রে ‘রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ’ দাখিলের পরিবর্তে টিআইএন সার্টিফিকেট দাখিল করার বিধান করার প্রস্তাব থাকতে পারে। ৩০টিরও বেশি কৃষি ও নিত্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে উৎসে কর অর্ধেক করার প্রস্তাব থাকতে পারে।
কনভেনশন হল ও কনফারেন্স সেন্টারের সেবার ক্ষেত্রে উৎসে কর দ্বিগুণ করার প্রস্তাব থাকবে। বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত মোটরযানের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর বাড়ানোর প্রস্তাব থাকবে। ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে সরাচার্জ বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে এসব প্রস্তাব থাকতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩৯টি ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা ও ১২টি ক্ষেত্রে ‘রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ’ দাখিলের পরিবর্তে টিআইএন সার্টিফিকেট দাখিল করার বিধান করার প্রস্তাব থাকবে। কর রেয়াত প্রাপ্যতায় মোট আয় গণনায় ন্যূনতম কর প্রযোজ্য এরকম আয়ের জায়গায় অংশীদারি ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘ হতে প্রাপ্ত শেয়ার আয় এবং চূড়ান্ত করদায় সংক্রান্ত আয় বাদ দেওয়ার বিধান করার প্রস্তাব থাকতে পারে।
বাজেটে এবার বেশ কিছু নিত্যপণ্যে উৎসে করা কমানোর প্রস্তাব থাকতে পারে। বর্তমানে এসব পণ্যে এক শতাংশ উৎসে কর থাকলেও বাজেটে তা অর্ধেক করার প্রস্তাব থাকতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষি ও নিত্যপণ্যের মধ্যে ধান, ধানের কুড়া, চাল, গম, আলু, গবাদি পশু, মাছ, মাংস, পিঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, মসুর, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনি, বীজ, পাটকাঠি, সরিষা, তিল, কাঁচা চা-পাতা, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা এবং পাট ক্রয়ের জন্য খোলা বা কৃত স্থানীয় ঋণপত্র খোলা বা অন্য কোনো অর্থায়ন চুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক পরিশোধিত বা ঋণকৃত পরিমাণের ওপর ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে কর কর্তন করা প্রস্তাব থাকবে, যা আগে এক শতাংশ ছিল। এছাড়া, তুলা ও সুতা কেনার জন্য খোলা বা কৃত স্থানীয় ঋণপত্র খোলা বা অন্য কোনো অর্থায়ন চুক্তির ক্ষেত্রে পরিশোধিত বা ঋণকৃত পরিমাণের ওপর ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক এক শতাংশ হারে কর কর্তন করার প্রস্তাব থাকবে।
জানা গেছে, কোনো সেলুলার মোবাইল ফোন অপারেটরের ন্যায় টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পানি ইত্যাদি কর্তৃক পরিশোধিত আয় বণ্টন বা কোনো লাইসেন্স ফি বা অন্য কোনো ফি বা চার্জ হতে ২০ শতাংশ হারে কর কর্তনের প্রস্তাব থাকতে পারে। সিকিউরিটিজের সুদ হতে ৫ শতাংশ এর বদলে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাব থাকবে। এছাড়া, ভাড়া হতে ৫ শতাংশ এর বদলে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটার প্রস্তাব থাকবে। কনভেনশন হল, কনফারেন্স সেন্টার, ইত্যাদি হইতে সেবা দিতে পাঁচ শতাংশের বদলে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটার প্রস্তাব থাকবে। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিপরীতে ছয় শতাংশের বদলে চার শতাংশ হারে কর কর্তনের প্রস্তাব থাকতে পারে। বিদেশি ক্রেতার এজেন্টকে প্রদত্ত কমিশন বা পারিশ্রমিক হতে ১০ শতাংশের বদলে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর কাটার প্রস্তাব থাকতে পারে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, লভ্যাংশ থেকে কর কর্তনের ক্ষেত্রে ইউনিট হোল্ডারকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আরবিট্রেশন ফি, হজ বাবদ পাঠানো অর্থ ও প্রায়োরিটি পাস বাবদ অর্থ হিসাবে অনিবাসী বরাবর পাঠানো অর্থ রেমিটকালে উৎসে কর কর্তন প্রযোজ্য হবে না; বিষয়টি আইনের পরিবর্তে বিধিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব থাকতে পারে। ফ্রেইট ফরওয়ার্ড এজেন্ট কর্তৃক গৃহীত গ্রস বিল বা কমিশনসহ গ্রস বিল বিলের ওপর এক দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে কর সংগ্রহের প্রস্তাব থাকবে। সম্পত্তি হস্তান্তর, ইত্যাদি হতে কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে কাঠাপ্রতি ২০ লাখ টাকার পরিবর্তে শতাংশ প্রতি ১২ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব থাকতে পারে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির বা ফান্ডের স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার, ডিরেক্টর শেয়ারহোল্ডার বা প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডার কর্তৃক ধারণ করা ওই কোম্পানি বা ফান্ডের সিকিউরিটিজ হস্তান্তরকালে ১০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ হারে কর সংগ্রহ করা ও এক্ষেত্রে হস্তান্তর এর সংজ্ঞায় আপন ভাই অথবা আপন বোনকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব থাকবে। এছাড়া, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কাছে থেকে সিকিউরিটিজ লেনদেনের দাম পরিশোধের সময় শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশের বদলে শূন্য দশমিক শূন্য তিন শতাংশ হারে কর সংগ্রহের প্রস্তাব থাকতে পারে।
এবার বাজেটে গাড়িতে কর বাড়ছে। বাজেটে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত মোটরযানের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর বাড়ছে। এছাড়া কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তির একাধিক গাড়ি থাকলে একের অধিক যত গাড়ি থাকবে তার ওপরও সারচার্জ বাড়ানো হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৫২ সিটের অধিক আসন বিশিষ্ট বাসের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা, ৫২ সিটের কম আসনের বাসের ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা, ডাবল ডেকার বাসের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের মিনিবাস বা কোস্টারের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় এরুপ মিনিবাস বা কোস্টারের ক্ষেত্রে ১২ হাজার ৫০০ টাকা, প্রাইম মুভারে ৩৫ হাজার টাকা, ৫ টনের অধিক পেলোড ক্যাপাসিটি বিশিষ্ট ট্রাক, লরি ও ট্যাংক লরিতে ৩০ হাজার; দেড় টনের অধিক, তবে ৫ (পাঁচ) টনের অধিক নয় এমন পেলোড ক্যাপাসিটি বিশিষ্ট ট্রাক, লরি বা ট্যাংক লরিতে ১৫ হাজার; পিকআপ ভ্যান, হিউম্যান হলার, ম্যাক্সি বা অটোরিকশায় ৭ হাজার ৫০০; শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্যাক্সিক্যাব ১৫ হাজার; শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়, এমন ট্যাক্সিক্যাবে ৭ হাজার ৫০০ টাকা অগ্রিম কর আরোপের প্রস্তাব থাকবে।
এছাড়া, কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তির একাধিক গাড়ি থাকলে একের অধিক যত গাড়ি থাকবে তার ওপর সারচার্জ বাড়তে পারে। ১৫০০ সিসি পর্যন্ত প্রতিটি মোটর গাড়ির জন্য ২৫ হাজার টাকা, ১৫০০ সিসির অধিক কিন্তু ২০০০ সিসির বেশি নয়, এমন প্রতিটি মোটর গাড়ির জন্য ৫০ হাজার টাকা, ২০০০ সিসির বেশি কিন্তু ২৫০০ সিসির অধিক নয়, এমন প্রতিটি মোটর গাড়ির জন্য ৭৫ হাজার টাকা, ২৫০০ সিসির বেশি কিন্তু ৩০০০ সিসির অধিক নয়, এমন প্রতিটি মোটর গাড়ির জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩০০০ সিসির বেশি, কিন্তু ৩৫০০ সিসির অধিক নয়- এমন প্রতিটি মোটর গাড়ির জন্য ২ লাখ টাকা, ৩৫০০ সিসির অধিক এমন প্রতিটি মোটর গাড়ির জন্য ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা সারচার্জ আরোপ করার প্রস্তাব থাকতে পারে। তবে ইলেকট্রিক গাড়ির ক্ষেত্রে সারচার্জ আরোপ না করার প্রস্তাব করা হতে পারে।