রাশিয়ার চারটি সামরিক ঘাঁটিতে বড়ধরনের ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। রোববার (১ জুন) ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা (এসবিইউ) এই হামলা চালায়। এতে রাশিয়ার ৪০টির বেশি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
ইউক্রেনের এই দাবি সত্য হয়ে থাকলে, এটিই হবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রুশ সামরিক ঘাঁটিতে চালানো হামলার মধ্যে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক। আর এটি অবশ্যই মস্কোর জন্য এক বড় ধাক্কা।
নিজেদের ভূখণ্ড থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার বিষয়টি যাচাই করা যায়নি। তবে ড্রোনগুলো ইউক্রেন থেকে ছোড়া হয়নি। বরং নিশানায় থাকা রুশ সেনাঘাঁটির আশপাশের এলাকা থেকে ছোড়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ইউক্রেন এর আগে এমন হামলা চালালেও তার মাত্রা এত ব্যাপক ছিল না।
এদিকে সোমবার (২ জুন) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে পূর্বনির্ধারিত শান্তি আলোচনার আগমুহূর্তে এ হামলাকে উসকানি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
অপরদিকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে ইউক্রেনের ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘রণক্ষেত্র (ফ্রন্টলাইন) থেকে অনেক দূরে অবস্থিত শত্রুঘাঁটিতে হামলার লক্ষ্য নিয়ে বড়ধরনের বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী।’ নিশানায় থাকা সাইবেরিয়ার বেলায়া বিমানঘাঁটিতে আগুন ধরেছে বলেও জানান তিনি।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, রাশিয়ার যে ৪০টির বেশি বোমারু বিমান ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো টিইউ-৯৫ ও টিইউ-২২ কৌশলগত বোমারু বিমান। এসব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছিল রাশিয়া।
একটি ছবিতে কাঠের তৈরি ছোট কেবিনের ছাদে অনেকগুলো ড্রোন বসিয়ে রাখতে দেখা গেছে। বলা হচ্ছে এসব ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে। যেখান থেকে হামলা চালানো হয়েছে, ট্রাকে করে ড্রোনগুলো সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ড্রোনগুলো হামলার নিশানায় থাকা রাশিয়ার অনেক ভেতরের সেনাঘাঁটিগুলোর কাছাকাছি জায়গায় ট্রাকে (লরিতে) করে নিয়ে রাখা হয়। লরি থেকেই ড্রোনগুলো ছোড়া হয়।
ইউক্রেনের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ইউক্রেইনস্কা প্রাভদা জানায়, এই অভিযানের সাংকেতিক নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্পাইডারওয়েব’। ১৮ মাসের বেশি সময় নিয়ে এই অভিযানের প্রস্তুতি চলেছে। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথমে ড্রোনগুলো রাশিয়ার ভেতরে পাঠানো হয়। পরে ছোট কাঠের ঘর বা কাঠামোর ছাদের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। এ অবস্থাতেই ড্রোনগুলো লরিতে তোলা হয়েছিল।
রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থার সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেল ‘ম্যাশ’ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে সাইবেরিয়ার ইরকুতস্ক অঞ্চলে কয়েকজনকে ট্রাকের ওপর উঠে ড্রোনের উৎক্ষেপণ থামাতে চেষ্টা করতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে রাশিয়া। এই যুদ্ধের শুরুতে সামরিক শক্তিতে রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেন অনেক কম শক্তিশালী ছিল। তার পরও তারা দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং বড় আকারের একটি আক্রমণাত্মক ড্রোন বাহিনী গড়ে তুলেছে, যা রাশিয়ার সেনাবাহিনী ও জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর আঘাত হানছে।