Wednesday 04 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পোশাক শিল্পে উৎসে কর অপরিবর্তিত রাখার উদ্যোগকে বিজিএমইএ’র সাধুবাদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ জুন ২০২৫ ২১:৩১ | আপডেট: ২ জুন ২০২৫ ২৩:৫২

ঢাকা: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে পোশাক শিল্পে রফতানির বিপরীতে উৎসে কর ও শিল্পে করপোরেট কর অপরিবর্তিত রাখার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

সোমবার (২ জুন) অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর বিজিএমইএ এর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন এক প্রতিক্রিয়ায় এ তথ্য জানান। সম্প্রতি সংগঠনটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও নতুন কমিটি এখনও দায়িত্ব নেয়নি। সংগঠনটি এখনও সরকারের প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএ জানায়, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয় শীর্ষক ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এ রকম একটি প্রেক্ষাপটে বাজেট প্রস্তাবনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন বিজিএমইএ এর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন। ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে লক্ষ্যবিলাষী ধারণা থেকে সরে এসে সামগ্রিক উন্নয়ন, বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, নাগরিক সুবিধা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তোরণ প্রভৃতির উপর জোর দেয়া হয়েছে। বিজিএমইএ মনে করে, এগুলো বাজেটের অনন্য দিক। ’

বিজ্ঞাপন

বিজিএমইএ বলেছে, ‘এবারের বাজেট পোশাক শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রত্যাশাপূর্ণ। কারণ বর্তমানে বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের মুখে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল, উচ্চ ব্যাংক সুদ, মজুরি বৃদ্ধি এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘন ঘন মূল্য বৃদ্ধির চাপে শিল্পটি পিষ্ট। আবার অন্যদিকে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হচ্ছে। এতে করে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে রফতানিতে ৮৪ শতাংশ অবদান রাখা পোশাক শিল্প। এ প্রেক্ষিতে বর্তমানে শিল্পের বিরাজমান সমস্যাগুলো মোকাবেলা এবং গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখার বিজিএমইএ এর পক্ষ থেকে বেশ কিছু বাজেট প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। ঘোষিত বাজেটে রফতানির বিপরীতে উৎসে কর এবং শিল্পে করপোরেট কর অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বিজিএমইএ একে সাধুবাদ জানায়।’

বিজিএমইএ’র বেশ কিছু প্রস্তাবনা বাজেটে আমলে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘বিজিএমইএ এর অনুরোধে আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া এবং বন্ড ব্যবস্থাকে সহজীকরণ ও ব্যবসাবান্ধব করার উদ্দেশ্যে নিম্নোল্লেখিত সংশোধনীগুলো আনা হয়েছে যা তৈরি পোশাক রফতানি বাণিজ্যকে আরও গতিশীল করবে। এরমধ্যে মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আরজেএসসি বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক অনুমোদনের অনধিক ২ মাসের মধ্যে বন্ড কমিশনারেটে আবেদন দাখিল করতে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৩ বছরের মধ্যে ২ বছর এর নিরীক্ষা সম্পন্ন থাকলে ৩ বছর মেয়াদি জেনারেল বন্ড নবায়ন করা যাবে। এফওসি ভিত্তিতে রিভলভিং পদ্ধতিতে কাঁচামাল আমদানির কার্যক্রম সহজীকরণে কিছু শর্ত বাদ ও সংশোধন করা হয়েছে। এ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের পরিবর্তে রাজস্ব কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে মেশিনের উৎপাদন ক্ষমতা জরিপের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ন্যায়নির্ণয়, শুল্কায়ন, গোয়েন্দা কার্যক্রমসহ নানাবিধ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে কমিশনার অব কাস্টমস এর উপর অর্পিত দায়িত্ব তার স্বীয় অধিক্ষেত্রে অন্য যে কোন কাস্টমস কর্মকর্তার উপর অর্পণ করতে পারবে মর্মে আইন সংশোধন করা হয়েছে। আমদানিকৃত চালানের পণ্য মূল্য ২ (দুই) হাজার টাকার পরিবর্তে ৪ (চার) হাজার টাকা পর্যন্ত হলে তার বিপরীতে কোন শুল্ককর আরোপ বা আদায় করা হবে না। কার্গো ঘোষণা বা আইজিএম দাখিলে ভুল হলে ন্যূনতম ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার কিন্তু অনধিক ২ (দুই) লাখ টাকা জরিমানার পরিবর্তে শুধুমাত্র অনধিক ১ (এক) লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন পণ্যের এইচ.এস. কোড নির্ধারনে অগ্রিম রুলিং জারী হওয়ার তারিখ হতে ১৮ (আঠার) মাসের পরিবর্তে ৩৬ (ছত্রিশ) মাস পর্যন্ত কার্যকর রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

একইসঙ্গে বেশ কিছু প্রস্তাবনা বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পোশাক শিল্পের সুরক্ষায় বিজিএমইএ’র আরও কিছু প্রস্তাবনা ছিলো, যা ঘোষিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো-কারখানাকে আধুনিক, নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব এবং পরিচালনা ব্যয় সাশ্রয় করতে আরও তালিকার বাইরে থাকা কিছু যন্ত্রপাতি ও উপকরণসমূহ শুল্কমুক্ত/রেয়াতি হারে আমদানির অনুমোদন দেয়া। পোশাক খাতের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা। এইচ.এস.কোড সহজীকরণ, বন্ডেড প্রতিষ্ঠান হতে নন-বন্ড প্রতিষ্ঠানে পণ্য ও সেবা সরবরাহ, সাব-কন্ট্রাক্ট, স্থানীয় নন-বন্ড প্রতিষ্ঠানে পণ্য ও সেবা সরবরাহ, বার্ষিক প্রাপ্যতা সীমা নির্ধারন, কন্টিনিউয়াস বন্ড সংক্রান্ত কার্যক্রম সহজীকরণ। সার্কুলার ফ্যাশন ও রিসাইকেল পণ্যকে উৎসাহিত করতে রিসাইক্লিং শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সব প্রক্রিয়া, পণ্য ও সেবাকে শুল্ক ও ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা।
ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পসহ প্রত্যক্ষভাবে ১ কোটি লোক ও পরোক্ষভাবে ৫ কোটি লোকের জীবন-জীবিকা পোশাক শিল্পের উপর নির্ভরশীল। এ শিল্পকে ঘিরে সমগ্র অর্থনীতি আবর্তিত হচ্ছে। তাই, এ খাতটিকে নিবিড় সহায়তা দেয়া যৌক্তিক বলে বিজিএমইএ মনে করে। বিজিএমইএ আশা করে যে সরকার এ বিষয়গুলো বিবেচনা করবে।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/আরএস

২০২৫-২৬ বাজেট প্রতিক্রিয়া বিজিএমইএ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর