টাঙ্গাইল: যমুনা সেতু ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। ফলে ঈদকে সামনে রেখে এই মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে চালক ও যাত্রীদের মাঝে। বিগত তিন মাসে এই মহাসড়কে একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সংঘবদ্ধ চক্র যাত্রীবাহী বাস জিম্মি করে লুটে নিচ্ছে নগদ অর্থ আর মালামাল। একইসঙ্গে নারী যাত্রীরা শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় ঈদযাত্রায় রাতের মহাসড়ক এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। যদিও বারবার ডাকাতির ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে টাঙ্গাইল পুলিশ প্রশাসন।
জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনাসেতু মহাসড়কে যানজট আর সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা আগের তুলনায় কমে এসেছে। টাঙ্গাইলের প্রায় ৬৫ কিলোমিটার সড়কে চারলেনের সুবিধা পাচ্ছে দূরপাল্লার যাত্রীরা। কিন্তু বারবার ডাকাতির ঘটনায় চালক আর যাত্রীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করেছে। এতে পুলিশ প্রশাসন রয়েছে অস্বস্তির মধ্যে। ঈদযাত্রায় রাতের মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে দূরপাল্লার যাত্রী ও চালকরা।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ মে আব্দুল্লাহপুর থেকে ১০ নারীসহ ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে রংপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে একটি বাস। মধ্যরাতে যমুনাসেতু পূর্বপ্রান্তে পৌঁছলে যাত্রীবেশি ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এর পর রাতভর যাত্রীদের জিম্মি করে নগদ টাকা ও মোবাইলসহ মালামাল লুট করে নেয়। এ সময় নারী যাত্রীরা শ্লীলতহানির শিকার হন। ভোরে বাসটি টাঙ্গাইল শহরবাইপাস এলাকায় রেখে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
এ ছাড়া, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে আরও একটি বাস ডাকাতের কবলে পড়ে। গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী বাসটি টাঙ্গাইলের সোহাগপাড়া পৌঁছলে যাত্রীবেশি ছয়/সাত জন ডাকাত যাত্রীদের জিম্মি করে। অস্ত্রের মুখে নগদ প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকাসহ মালামাল লুট করে নেয়। এ সময় শ্লীলতাহানির শিকার হন নারীরা। এর আট দিনের মাথায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সড়কে গাছ ফেলে স্কুলের শিক্ষা সফরের চারটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সব ঘটনায় নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। গত তিন মাসে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের অন্তত ৮০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
উত্তরবঙ্গের বাসচালক খালেক মন্ডল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডাকাতরা যাত্রী বেশে বাসে ওঠে। কে ডাকাত ও সাধারণ যাত্রী তা বোঝা যায় না। মহাসড়ক ফাঁকা পেলেই ডাকাতি শুরু হয়। সব মিলিয়ে আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ করে রাতে পুলিশি টহল আরও বাড়াতে হবে।’ বাসচালক নিয়ামত আলী বলেন, ‘এ পর্যন্ত দুই/তিনবার ডাকাতের কবলে পড়েছি। কিন্তু কৌশলে পার পেয়ে গেছি।’
দূরপাল্লার বাসযাত্রী আলী হোসেন সারাবাংলাকে জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গগামী লোকাল বাসগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এ সব বাস সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী ওঠায়। আর যাত্রীবেশি ডাকাতরা চলন্ত বাসে ডাকাতি করছে।
নারী যাত্রী রোকেয়া বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাতের বেলায় বাসে উঠলে গন্তব্যে না ফেরা পর্যন্ত আতঙ্কে থাকি। পরিবারের সদস্যরাও উৎকণ্ঠায় থাকে।’ বাসযাত্রী কামাল হোসেন বলেন, ‘ঈদে ডাকাত আতঙ্ক ও যানজটমুক্তভাবে আমরা যেন নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছাতে এবং ফিরে আসতে পারি এজন্য যা করার তার সবকিছুই করতে হবে সরকারকে।’
জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহাসড়কের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে গোলচত্বর পর্যন্ত এবং মির্জাপুরের পাকুল্যা থেকে টাঙ্গাইল শহরের রাবনা বাইপাস পর্যন্ত ডাকাতি হচ্ছে। দু’টি স্থান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ডাকাতি রুখতে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।’
তিনি আর বলেন, ‘ডাকাতি প্রতিরোধে প্রতিটি বাসের যাত্রীদের ছবি তুলে রাখার জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ভিডিও বা ছবিগুলো ডাকাত ধরার ক্ষেত্রে কাজে আসবে।’
গোড়াই হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ডাকাতি প্রতিরোধে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের টহল কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। আগের তুলনায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। রাতে যেসব এলাকায় আলো কম থাকে, সেসব স্থানে টহল জোরদার করা হয়েছে।’
জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসন্ন ঈদে মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিগত দিনে মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির ঘটনায় অন্তত ৮০ জনকে গ্রেফতার এবং লুণ্ঠিত অর্থ ও মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের অনেকগুলো টিম এ ব্যপারে গোপনে কাজ করে যাচ্ছে।’
ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে বলে জানান তিনি।