ঢাকা: শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও মিয়ারমার রাজি থাকলেই রাখাইনে মানবিক করিডর সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস। তিনি বলেছেন, রাখাইনে মানবিক করিডর হবে কিনা সেটা নির্ভর করবে বাংলাদেশ ও মিয়ামারের সরকারের ওপর। এ বিষয়ে জাতিসংঘ কোনো সিদ্ধান্ত কারও ওপর চাপিয়ে দেবে না।
বুধবার (৪ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’ অংশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিকাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে গোয়েন লুইস বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতিসংঘ টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিতে আগ্রহী। তবে নির্বাচন কখন হবে, সেটা বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ ঠিক করবে। এ বিষয়ে জাতিসংঘ কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।’
গোয়েন লুইস বলেন, ‘জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তার লক্ষ্যে রাখাইনে প্রবেশ এখন অনেক কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। এ বিষয়ে আমরা সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন লুইস বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই। এই সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধান আশা করি। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অপরীসম সহায়তা দিয়ে আসছে। বর্তমানে এটা শুধু বাংলাদেশের ইস্যু নয়, এটা গ্লোবাল ইস্যু। তবে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের জীবনরক্ষায় নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে।’
গোয়েন লুইস বলেন, ‘জাতিসংঘ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন করে। তবে কোনো কোনো বিষয়ে সংস্কার করা হবে, সেটা সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। জাতিসংঘ আশা করে গত জুলাই আগস্টের মতো ঘটনা আর বাংলাদেশে ঘটবে না।’
বাংলাদেশে জাতিসংঘ আগে নির্বাচন চায়, না আগে সংস্কার চায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের বিষয় নয়। এটা সরকার ও জনগণের বিষয়।’

ডিক্যাব আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’ বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসসহ অন্যান্যরা। ছবি: সারাবাংলা
জাতিসংঘ বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চায়। এর অর্থ রাজনৈতিক দলের অন্তভুর্ক্তি? এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন লুইস বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে, রাজনৈতিক দলের অন্তভুর্ক্তি নয়। সব জনগণ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষের অন্তর্ভুক্তি।’
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে সব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহনের মাধ্যমে নির্বানে আয়োজনের সুপারিশ ছিল কিন্তু রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে আপনার মন্তব্য কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে গোয়েন লুইস বলেন, ‘এই প্রশ্ন আমার জন্য নয়, এটা সরকারের বিষয়। পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে সরকারকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক অফিস স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন লুইস বলেন, ‘এই অফিস খোলার বিষয়টি চূড়ান্ত। খুব দ্রুত ছোট আকারে এটা চালু হবে।’
জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, ‘জাতিসংঘ বাংলাদেশের বিভিন্নখাতে একযোগে কাজ করছে। বিশেষ করে গ্রিন টেকনোলজি, মানবাধিকার, পোশাকখাত, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, জেন্ডার পলিসি ইত্যাদি ইস্যুতে সহযোগিতা দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদশের শান্তিরক্ষীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে লাইবেরিয়া ও কঙ্গোর মতো দেশে কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা কাজ করছে। এটা খুব প্রশংসনীয়।’