Friday 06 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্ব পরিবেশ দিবস
‘পরিবেশ শুধু প্রকৃতি নয়, আচরণও’

ফারহানা নীলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৫ জুন ২০২৫ ১০:০২

ঢাকা: ঢাকার বাতাস ভারী, শব্দের কোলাহলে মুখর শহর যেন প্রতিদিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আমরা প্রকৃতি থেকে কতটা দূরে সরে গেছি। অথচ একটিবার ঝড় উঠলে, একটুখানি বৃষ্টিতেই নগরজীবনের অচলাবস্থা বুঝিয়ে দেয়, প্রকৃতি এখনো তার শক্তি দেখাতে জানে।

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এটি এমন এক উপলক্ষ—যেখানে মানুষ, রাষ্ট্র ও সমাজ পরিবেশ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কাগজেই আটকে থাকে কিনা, সেটিই এখন ভাবনার বিষয়।

২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনিসময়’। যা বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ প্রতিদিন শুধু ঢাকাতেই কয়েক হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে, যার বড় একটি অংশ যায় নদী ও খালে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বব্যাংক এবং পরিবেশ অধিদফতরের এক যৌথ গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার প্রায় ৬০ শতাংশ উৎপন্ন হয় ঢাকা শহরেই। এই বিশাল পরিমাণ বর্জ্যের মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ রিসাইকেল হয়, আর বাকি অংশ গিয়ে পড়ে নদীতে, খালে, খোলা জায়গায় বা মাটির নিচে।

প্রধান সমস্যা তিনটি স্তরে বিস্তৃত:

১. শহুরে ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা: ঢাকা শহরের প্রতিটি বাজার, রাস্তা, স্কুল কিংবা পার্কে ছড়িয়ে আছে প্লাস্টিকের মোড়ক, পানির বোতল, খাবারের প্যাকেট। বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহারব্যবস্থা এখনও অপর্যাপ্ত।

২. প্লাস্টিকের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব: একটি সাধারণ প্লাস্টিক ব্যাগ ৪০০ থেকে ১,০০০ বছর পর্যন্ত মাটিতে অবিকৃত অবস্থায় থাকতে পারে। এই সময়ের মধ্যে এটি মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয়ে মাটি ও পানির মাধ্যমে প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে, যার প্রভাব পড়ছে মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও।

৩. নদী ও সাগরের দূষণ: বাংলাদেশের নদীগুলো—বিশেষত বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও কর্ণফুলী—ব্যাপকভাবে প্লাস্টিক দূষণে আক্রান্ত। গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি বছর অন্তত ২ লাখ টনের বেশি প্লাস্টিক নদী ও বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে, যা সামুদ্রিক প্রাণী ও জৈব বৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি:

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্লাস্টিক দূষণ শুধু একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা নয়—এটি একটি নীতিগত ও আচরণগত সংকট।

পরিবেশবিদ ও গবেষক মাহবুব সুমন বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণ এখন কেবল ভবিষ্যতের সমস্যা নয়, এটি বর্তমানে আমাদের জীবন, স্বাস্থ্য ও প্রকৃতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এই সংকট সমাধানে প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ—ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের। আজকের সচেতন সিদ্ধান্তই আগামী দিনের সবুজ পৃথিবীর ভিত্তি হতে পারে।’

‘একদিনের পরিবেশ দিবস নয়, দরকার প্রতিদিনের সচেতনতা’ — মাহবুব সুমন
পরিবেশবিদ ও গবেষক মাহবুব সুমন এই প্রসঙ্গে বলেন, “প্রতিবছর একটি দিবস এলেই আমরা পরিবেশ দূষণ নিয়ে মুখর হই। কখনো শুধুমাত্র পাহাড় ধ্বস নিয়ে আলোচনা করে যাই। কখনো সুন্দরবনের প্রকৃতি ধ্বংস নিয়ে আলোচনা করে যাই । অথচ বাস্তবে দেখা যায়, আমরাই সেখানে গিয়ে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে প্রকৃতির নিস্তব্ধতা নষ্ট করি।”

তার মতে, পরিবেশ রক্ষায় বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন—

১. পরিবেশ সংক্রান্ত শিক্ষা: পরিবেশ রক্ষার শিক্ষাটা থাকা উচিত মানুষের মধ্যে। যে শিক্ষাটা প্রাইমারি বা মাধ্যমিক লেভেলের পাঠ্য বইতে থাকবে বিষয়টা তা নয়।আচরণগত শিক্ষাটা বেশি জরুরী। পরিবেশ কীভাবে রক্ষা করা যায়। পরিবেশ নিজেরাই নষ্ট করবে না এই শিক্ষাটা জরুরী। পরিবেশ রক্ষার জন্য একটা উদ্যোগে নিয়ে সুন্সরবন গেলেন আর সেখানে গিয়ে নিজেরাই খাওয়া-দাওয়া করে প্লাস্টিকের বোতল বা কফি খাওয়ার প্লাস্টিকের কাপ ফেলে রেখে আসলেন, তাহলে পরিবেশ কিভাবে রক্ষা পাবে?

২. পরিবেশ আইনের বাস্তবায়ন: আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। সাধারণ মানুষ জানেও না, পরিবেশ দূষণের শাস্তি কী হতে পারে। আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া পরিবেশ রক্ষা সম্ভব নয়।

৩. ভার্চুয়াল কনটেন্ট তৈরি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার: জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। তথ্যবহুল কনটেন্ট বানিয়ে তা প্রচার করতে হবে, যেন মানুষ জানতে পারে পরিবেশের গুরুত্ব, আইন ও করণীয়। এসব কনটেন্ট যদি পরিবেশ মন্ত্রণালয় পর্যন্ত পৌঁছায়, তাহলে নীতিনির্ধারণেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়। এটি একটি দায়বদ্ধতার দিন—নিজের, সমাজের ও রাষ্ট্রের প্রতি। শুধু পাহাড়, বন বা নদী নয়, পরিবেশ মানে আমাদের প্রতিদিনের জীবনধারা, অভ্যাস ও আচরণ। সেই আচরণ যদি প্রকৃতি-সহায়ক না হয়, তবে ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবেই।প্রকৃতি আমাদের আশ্রয়, আমাদের সহযাত্রী। তাকে বাঁচানো মানে নিজেকেই রক্ষা করা। পরিবেশ দিবস হোক সেই উপলক্ষ—যেখান থেকে শুরু হবে প্রতিদিনের সচেতনতা, প্রতিদিনের দায়িত্ববোধ।

সারাবাংলা/এফএন/এমপি

পরিবেশ প্রকৃতি

বিজ্ঞাপন

পশু কোরবানির নিয়ম
৬ জুন ২০২৫ ১৮:৫৯

আরো

সম্পর্কিত খবর