বরিশাল: বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় কোরবানির পশু কেনাবেচায় ৩২৮টি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় রয়েছে ৭৯টি অস্থায়ী ও ১৪টি স্থায়ীসহ মোট ৯৩টি হাট। তবে পশুর সরবরাহ থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি কম। বিশেষ করে বড় গরুর বেচাকেনা এক প্রকার বন্ধই বলা চলে। এজন্য গরু ব্যবসায়ী ও খামারিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
গরুর হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ট্রলার, ট্রাক বা পায়ে হাঁটিয়ে একের পর এক পশু এনে বাঁধা হচ্ছে হাটে। শুধু এই অঞ্চলেরই নয় খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, যশোর, আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা আনছেন পশু। বিকেল হলেই দলে দলে ক্রেতা-বিক্রেতা আসছেন হাটে। পশু দেখে পছন্দ হলে দরদামের বচসায় মেতে উঠছেন। কিছু ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি হলেও বড় গরুতে ক্রেতার আগ্রহ নেই। গরুর দামও এ বছর অনেকটা কম।
পাইকারদের ধারণা, শহরের ক্রেতারা আগেভাগে কোরবানির গরু কিনে লালন-পালনের ঝামেলার কারণে শেষ সময়ে হাটে এসে গরু কেনেন। তাই শুক্রবার বেচাবিক্রি অনেকটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বরিশাল বিভাগের বেশ কয়েকটি পশুর হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার গবাদিপশুর আমদানি ভালো হলেও বিক্রি অনেক কম।
জেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাট বসে সদর উপজেলার চরমোনাই বাজারে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে ঈদ উল আজহার পূর্ব রাত পর্যন্ত বিক্রি চলবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে এ হাটে বিক্রির জন্য আসেন বিক্রেতারা। এছাড়াও আশে-পাশের খামার ও গৃহস্তের লালন-পালন করা গরু পাওয়া যায় এ হাটে।
ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, এ হাটে গরু কিনলে মাত্র একশ টাকা ও ছাগল কিনলে ৫০ টাকা করে খাজনা দিতে হয়।
এ হাটের গরু ব্যবসায়ী বশির হাওলাদার জানান, যোগাযোগের সুবিধার কারণে এ হাটে সবচেয়ে বেশি ক্রেতা সমাগম হয়। তাই এ হাটে প্রতি বছর গরু নিয়ে আসেন তিনি। এবার ৪০টি গরু নিয়ে এসেছেন, যেখানে দেড় লাখ থেকে তিন লাখ টাকার গরু রয়েছে। শুক্রবারের মধ্যে সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
নগরীর কালিজিরা, দপদপিয়া ব্রীজ ঢাল ও সোনামিয়ার পোল এলাকায় পশু হাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, পশুর হাট গরুতে সয়লাব কিন্তু ক্রেতা তুলনামূলক কম। ছোট ও মাঝারি গরুর কিছুটা চাহিদা থাকলেও বড় গরু এক রকম অবিক্রীতই থেকে যাচ্ছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় খামারিরা।

বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আনছেন কোরবানির পশু।
কালিজিরা হাটে গরু কিনতে এসেছেন ঝালকাঠি পৌরসভার লঞ্চঘাট এলাকার ক্রেতা আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছোট একটি গরু কেনার জন্য এসেছি। যাচাই করে স্থানীয় গরু কিনব।’
আরেক ক্রেতা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে হাটে অনেক গরু উঠেছে। গতবারের চেয়ে তুলনামূলক দাম কম। আমি একটি গরু কিনেছি। তবে ছোট গরুর চাহিদা বেশি।’
এ হাটে গরু বিক্রি করতে আসা নলছিটির রায়াপুর এলাকার বাসিন্দা সোহাগ জানান, একটি বড় গরু এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা দাম চেয়েছেন কিন্তু ক্রেতারা এক লাখ বলেই চলে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না, তাই লোকসানের শঙ্কায় আছেন তিনি।
আরেক বিক্রেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এইবার কী যে অইবে, কইতে পারি না। যে অবস্থা, হ্যাতে মোনে অয় চালান লইয়্যা বাড়ি যাইতে পারমু না।’
বরিশাল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বছর বরিশাল বিভাগে কোরবানির জন্য চাহিদা রয়েছে প্রায় চার লাখ ৩২ হাজার ৬১১টি পশুর। যা স্থানীয়ভাবে পূরণ সম্ভব এবং কিছু উদ্বৃত্তও থাকবে।
তিনি আরও বলেন, হাটে মানসম্মত পশু নিশ্চিত করতে দুটি হাটের জন্য একটি করে টিম এরইমধ্যে কাজ শুরু দিয়েছে।
বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুচিকান্ত হাজং জানিয়েছেন, হাটগুলো পশু, ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে জেলা এবং মহানগর পুলিশ। প্রতিটি হাটেই পুলিশের কট্রোল রুম খোলা হয়েছে।