Friday 06 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাড়ে ৪ লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট আড়তদারদের, দুশ্চিন্তা ‘মৌসুমীদের’ নিয়ে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ জুন ২০২৫ ১৬:৪৭ | আপডেট: ৬ জুন ২০২৫ ১৭:০১

কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করছেন আড়তদাররা। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এবার সাড়ে চার লাখ কোরাবনির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা। সংগ্রহ করা চামড়া সংরক্ষণের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে নগরীর আতুরার ডিপোর আড়তগুলোতে। এছাড়া গত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় ‘আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’ও এক লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে।

তবে আড়তদারদের দুশ্চিন্তা বরাবরের মতো মৌসুমী সংগ্রহকারী কিংবা ফড়িয়াদের নিয়ে। তারা সরকার নির্ধারিত দর হিসেব করে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করলে আড়তদাররা সেই দামে কিনতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।

চট্টগ্রামে ছোট-বড় ২২৫টি আড়তে চামড়া সংরক্ষণ হয়। আড়তদারেরা জানিয়েছেন, গত বছর তারা তিন লাখ ৬০ হাজার ৯৫০টি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন। এর মধ্যে তিন লাখের মতো ছিল গরুর চামড়া। এবার কোরবানি কিছু বেশি হবে ধরে নিয়ে তারা সাড়ে চার লাখের মতো কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে সাড়ে তিন লাখের মতো গরুর চামড়া হতে পারে বলে তাদের ধারণা।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মুসলিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চার থেকে সাড়ে চার লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের টার্গেট নিয়েছি। আমাদের সমিতিতে আড়তদার আছেন ১১২ জন। এর মধ্যে আমরা ৩০ জনের মতো আছি যারা চামড়া সংগ্রহ করবো। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে আরও ২০ জনের মতো আছেন যারা চামড়া সংগ্রহ করে স্থানীয়ভাবে লবণ দেবেন। পরে তাদের চামড়াগুলোও আমাদের আড়তে নিয়ে আসা হবে।’

‘আড়তগুলো আমরা রেডি করেছি। শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত লবণ সংগ্রহ করা হয়েছে। একটি চামড়ার জন্য ১০ কেজির মতো লবণ লাগতে পারে। সে হিসেবে আমরা লবণ কিনেছি।’

আড়তদারেরা জানালেন, এবছর লবণের দামও সস্তা। গত বছর প্রতি বস্তা (৭৪ কেজি) লবণের দাম ছিল ৯৩০ টাকা। এবার ৮০০ টাকায় সেই লবণ তারা কিনতে পেরেছেন।

প্রতিবছরের মতো সরকার এবারও কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এতে গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দর অনুযায়ী, ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। গত বছর দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।

ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। গতবছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে। গতবছর ছিল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। আর বকরির চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম ২০ থেকে ২২ টাকা। গতবার ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা।

আড়তদার মুসলিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাড়া-মহল্লায় যারা মৌসুমী সংগ্রহকারী আছেন, ফড়িয়া আছেন তাদের নিয়ে আমাদের সমস্যা হয়। সরকার যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছে সেটা লবণযুক্ত চামড়ার দর। কিন্তু তারা লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন সেই দরে। তাদের কাছ থেকে সেই দামে চামড়া কিনলে তো আমাদের লস হবে, কারণ সেটাতে লবণ দেয়ার খরচ আমাদের দিতে হবে। সেজন্য তাদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন সরকারি দর হিসেব করে চামড়া না কিনেন।’

‘আরেকটা বিষয় হচ্ছে, তারা চামড়া সংগ্রহ করে ফেলে রাখে। দাম কিছু বেশি পাবার আশায় দরদাম করতে করতে সময় নষ্ট করে। কাঁচা চামড়া বেশিক্ষণ রাখলে পচন ধরে। ফলে আমরা সেগুলো আর নিতে পারি না। এজন্য কাঁচা চামড়া সংগ্রহের পর বেশিক্ষণ যাতে আড়তের বাইরে না রাখা হয়, সেটা আমাদের পরামর্শ।’

মুসলিম আরও বলেন, ‘লোকসানের কারণে আমাদের অধিকাংশ আড়তদার ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। চট্টগ্রামে ২২টি ট্যানারি থেকে এখন মাত্র একটা ট্যানারি আছে। এই ট্যানারিতে আমরা মাত্র ৪০ হাজার চামড়া বিক্রি করতে পারি। বাকি চামড়া ঢাকার ট্যানারির কাছে আমাদের দিতে হয়। সেখানে আমাদের পাওনা বকেয়া থেকে যায় বছরের পর বছর। সুতরাং হিসেব করে চামড়া না কিনলে আমাদের লোকসান হবে।’

চট্টগ্রামে কোরবানির কাঁচা চামড়ার বাজার প্রতিবছর ‘চার হাত চক্রে’ নিয়ন্ত্রণ হতো। কোরবানি দাতাদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করতেন এলাকার উঠতি তরুণ-যুবকরা, যাদের মৌসুমী সংগ্রহকারী বলা হয়। তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে নিতেন বড়-মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা, যারা শুধু কোরবানির সময়ই চামড়া কিনতে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন এবং সেই চামড়া বিক্রি করেন আড়তদারের কাছে। সেই ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া বিক্রি করতেন আড়তদারের প্রতিনিধির কাছে। প্রতিনিধির কাছ থেকে চামড়া যেত আড়তদারের ডিপোতে।

তবে সেই ‘চার হাত চক্র’ ২০২০ সাল থেকে ভেঙ্গে যায়। ২০১৯ সালে আড়তদার ও তাদের প্রতিনিধিরা ‘অস্বাভাবিক দরপতন’ ঘটিয়ে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনা বন্ধ রেখেছিলেন। এতে কাঁচা চামড়া সড়কে ফেলে দিয়ে তাদের বিদায় নিতে হয়েছিল। ২০২০ সালে মৌসুমী সংগ্রহকারীর সংখ্যা অর্ধেকেরও কমে নেমে আসে। এরপর তিন বছর কার্যত মাঠ থেকে ‘আউট’ হয়ে যান মৌসুমী সংগ্রহকারীরা। এর ফলে কাঁচা চামড়ার বাজারের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন আড়তদার ও তাদের প্রতিনিধিরা।

কিন্তু ২০২২ সালে এসে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও কেনাবেচার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে ‘আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’। তাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা নগরী থেকে গ্রামগঞ্জে পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন। এর ফলে গত তিন বছর ধরে কাঁচা চামড়া সংগ্রহে শৃঙ্খলা ফেরে।

এবারও এক লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ‘আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মোট ২০০ গাড়ি নিয়ে গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা মাঠপর্যায় থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবেন। এর মধ্যে ১০০ গাড়ি থাকবে নগরীতে। বাকিগুলো উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে চামড়া সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হবে।

‘আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে কাঁচা চামড়া বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। নগরীতে যেসব চামড়া সংগ্রহ হবে সেগুলো হাজী মোহাম্মদ আলী, যিনি প্রতিবছর আমাদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন, তাকে দেয়া হবে। উত্তরেরগুলো আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণ করবো। দক্ষিণেরগুলো আরেকজনকে দেব।’

আড়তদারের নির্ধারিত স্থানে সংগ্রহ করা কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার।

সারাবাংলা/আরডি/এমপি

আড়তদার চামড়া শিল্প

বিজ্ঞাপন

আজ পবিত্র ঈদুল আজহা
৭ জুন ২০২৫ ০০:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর