Friday 06 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে শেষদিনে গরু বেশি-ক্রেতা কম, হতাশ অনেক বেপারি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ জুন ২০২৫ ১৮:২৪ | আপডেট: ৬ জুন ২০২৫ ২১:০২

-ছবি : শ্যামল নন্দী

চট্টগ্রাম ব্যুরো: রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। চট্টগ্রামে কোরবানির হাটের শেষদিনে বাজারে গরুর কমতি না থাকলেও ক্রেতার সমাগম কম। শেষদিনে আশানুরূপ বিক্রি করতে না পেরে হতাশার কথা জানিয়েছেন অনেক বেপারি। যত গরু নিয়ে বাজারে এসেছিলেন, সবগুলো বিক্রি করতে পারেননি অনেকে। রাতের মধ্যে বিক্রি না হলে শেষপর্যন্ত সেগুলো ফেরত ‍নিয়ে যেতে হবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে গত কয়েক বছরের কোরবানির বাজারের চিত্র অনুযায়ী, শেষদিনে কাস্টমার একটু কম থাকে। আগেরদিনের ১০ শতাংশ কাস্টমারও থাকে না। এবারও একই হয়েছে। কাস্টমার কম, তবে বাজারে গরুর কোনো সংকট নেই। বড় গরু তো আছেই, ছোট আর মাঝারি গরুও পর্যাপ্ত আছে। তবে বাজার যাচাই করে দেখা গেছে, গতকালের (বৃহস্পতিবার) চেয়ে মাঝারি আর ছোট গরু মানে ২-৩ মণ ওজনের গরুগুলোর দাম কিছুটা বেড়েছে।’

বিজ্ঞাপন

-ছবি : শ্যামল নন্দী

শুক্রবার (৬ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর বিবিরহাট বাজারে দেখা গেছে, গরুও কম, ক্রেতাও কম। বড় গরু একেবারে নেই বললেই চলে। ছোট আর মাঝারি গরু আছে। তবে ক্রেতা এসে দরদাম করছেন, বিক্রি তেমন নেই।

নগরীর চকবাজার থেকে গরু কিনতে যাওয়া মোহাম্মদ আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গরু কিনতে এসেছিলাম। বিবিরহাটে গরু কম। এটা কী কারণে বুঝতে পারছি না। গরু সরিয়ে রেখে দাম বাড়ানোর কৌশল হতে পারে। তবে কাস্টমারও নেই। আমরা এখন সাগরিকা বাজারে চলে যাচ্ছি।’

নগরীর বহদ্দারহাটের এক কিলোমিটার এলাকায় পশুর বাজারে ক্রেতার মোটামুটি সমাগম দেখা গেছে। সেখানে বড়, ছোট, মাঝারি মিলিয়ে গরুও প্রচুর দেখা গেছে।

-ছবি : শ্যামল নন্দী

সেই বাজারে গরু কিনতে যাওয়া একটি ইস্পাত কারখানার কর্মকর্তা এস এম আবু ইউসুফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল সাগরিকা বাজারে গিয়েছিলাম। আজ বিবিরহাট বাজার ঘুরে এখানে এসেছি। গতকাল ছোট গরু মোটামুটি লাখের মধ্যে ছিল। মাঝারি গরু দুই-আড়াই লাখের মধ্যে ছিল। গতকাল যেটার দাম এক লাখ টাকা দেখেছি, আজ একই গরুর দাম ১৫-২০ হাজার টাকা বেশি। আজ দাম বেশি। গতকাল গরু না কিনে শেষদিনের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি।’

নগরীর মইজ্জ্যারটেক, বিবিরহাট ঘুরে এক কিলোমিটার বাজারে যাওয়া আবুল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ বাজার একেবারে ডাউন। কাস্টমার নাই। কিন্তু বেপারিরা কী ‍বুঝে দাম ছাড়তেছেন না, বুঝতে পারছি না।

তবে মইজ্জ্যারটেক বাজারের ইজারাদার জসিম উদ্দিন বলেছেন, শেষদিনে ক্রেতা এবং বিক্রি কম হলেও গত দুইদিনে প্রচুর বিক্রি হয়েছে। মইজ্জ্যারটেক বাজার থেকে গরু, মহিষ মিলিয়ে তিন হাজারের ওপর পশু বিক্রি হয়েছে।

এক কিলোমিটার বাজারে চকরিয়া থেকে একটি বড় গরু নিয়ে বিক্রির জন্য এসেছেন শাহীন নামে এক যুবক। দাম চাচ্ছেন আট লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতার সাড়া পাচ্ছেন না।

শাহীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ঘরে পালা গরু। অনেক কষ্ট করে বড় করেছি। লালন-পালনে অনেক খরচ হয়েছে। কাস্টমার না পেলে গরু নিয়ে ফিরে যাব। তারপরও লস দিয়ে বিক্রি করবো না।’

-ছবি : শ্যামল নন্দী

কুমিল্লা থেকে বড়, ছোট, মাঝারি মিলিয়ে ৩০টি গরু নিয়ে একই বাজারে আসা মনির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ১৮টা বিক্রি করেছি। সবগুলোই মাঝারি গরু। আর ১২টা আছে। সেগুলোর মধ্যে ৮টা বড় গরু। দাম সাড়ে ৫ লাখের মধ্যে। মনে হচ্ছে, বড়গুলো আর বিক্রি করতে পারবো না। আজ কাস্টমার একেবারে নেই। সেগুলো ফেরত নিয়ে যেতে হবে। এবার লাভ-লস সমান হয়ে গেল।’

নাটোর থেকে ২২টি গরু নিয়ে সাগরিকা বাজারে আসা ইদ্রিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবগুলো বড় গরু এনেছিলাম। ১০টা বিক্রি করেছি। আজ তো কাস্টমার নেই সারাদিনে। দেখি আর ২-১টা বিক্রি করতে পারি কী না। না হলে ফেরত নিয়ে চলে যাব। এবার বড় গরু মানুষ কিনবে না, সেটা বুঝতে পারিনি।’

-ছবি : শ্যামল নন্দী

নগরীর মোহরার একটি খামার থেকে ১৩ লাখ টাকায় দুটি গরু কিনেছেন পাইকারি ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার গরু বিক্রি অন্যান্য বছরের তুলনায় কম বলে মনে হচ্ছে। মানুষের হাতে টাকার সংকট হতে পারে। আবার টাকা থাকলেও অনেকে ব্যক্তিগত নানা কারণে ছোট কিংবা মাঝারি গরু কিনছেন, যারা আগে ৮-১০ লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনতেন।’

তবে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলমগীরের মতে, এবার কোরবানির পশু বিক্রি মোটেও কম হয়নি। তবে বড় গরু বিক্রি আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। এবার চাহিদার চেয়ে বেশি গরু বাজারে থাকায় বিক্রি কম বলে মনে হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় এবার চট্টগ্রামে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি পশু কোরবানি হবে বলে সম্ভাব্য হিসেব দিয়েছে। আর মজুত পশুর হিসেব দিয়েছিল ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি। ৩০ থেকে ৪০ হাজার গরু বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রামে বিক্রির জন্য আনা হয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

চট্টগ্রামে এবার স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ২২৮টি কোরবানির হাটে পশু কেনাবেচা হয়েছে।

সারাবাংলা/আরএস/এসআর

বিজ্ঞাপন

আজ পবিত্র ঈদুল আজহা
৭ জুন ২০২৫ ০০:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর