Saturday 07 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রকল্প কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতা
ঈদে বাসেদ-বাসিরনের অন্ধকার ঘর: এক মাসেও মেলেনি ত্রাণ সহায়তা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৭ জুন ২০২৫ ১৪:৩৮

গত ১১ মে ঝড়ে ঘর ভেঙে যাওয়া অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি আব্দুল বাসেদ ও বাসিরন -ছবি : সারাবাংলা

পঞ্চগড়: ঈদের আনন্দে সারাদেশের জনগণ যখন উল্লাসিত, তখন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নেট দর্জিপাড়া গ্রামে অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছেন বৃদ্ধ দম্পতি আব্দুল বাসেদ ও বাসিরন।

সম্প্রতি (১১ মে) প্রলয়ংকরী ঝড়ে তাদের একমাত্র ঘরটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে যায়। এরপর কেটে গেছে প্রায় একমাস। কিন্তু আজও মিলেনি কোনো সরকারি সহায়তা, মেলেনি মাথা গোঁজার স্থায়ী আশ্রয় কিংবা একমুঠো নিরাপদ খাদ্য।

বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই আব্দুল বাসেদ ছিলেন একজন পাথর শ্রমিক। বার্ধক্যের কারণে এখন আর কাজ করতে পারেন না। সংসার চলত কোনোমতে স্ত্রীর সহায়তায়। কিন্তু ঝড় তাদের একমাত্র ঘরটিও কেড়ে নিয়েছে। স্থানীয় কিছু যুবক চেষ্টা করে ভাঙা টিন আর বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী একটি ছাউনির ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু সেটা কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলেই ঘরে ঢুকে পড়ে পানি, আর রাত কাটে আতঙ্কে।

বিজ্ঞাপন

ঘরে নেই কোনো খাবার। নেই চাল, ডাল, তেল, লবণ ঈদের আগে যেগুলো প্রতিটি ঘরের ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা। ঈদের দিন যেখানে সবার ঘরে থাকে খুশির আমেজ, সেখানে বাসেদ-বাসিরনের ঘরে শুধুই নীরবতা আর দীর্ঘশ্বাস।

আব্দুল বাসেদ বলেন, “ঘর ভাঙার পর অনেক কষ্টে আছি। বৃষ্টিতে মানবতার জীবনযাপন করছি। উপজেলা অফিসে গিয়ে জানিয়েছি, কিন্তু কেউ কোনো সহায়তা দেয়নি। এখন ঈদ, ঘরে কিছুই নেই। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাই।”

বাসিরন বেগম কাঁপা গলায় বলেন, “স্বামী অসুস্থ, কোনো কাজ করতে পারে না। ঘরও নেই। ঝড়-বৃষ্টি হলেই আমরা ভয়ে থাকি। সরকার যদি একটু সাহায্য করত, অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁইটা হতো।”

প্রতিবেশীরা জানান, বহুবার প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় যুবক জাকির হোসেন বলেন, “আমরাই নিজেরা ভাঙা টিন দিয়ে একটু ঘরের মতো বানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু সরকার যেখানে এত সাহায্য দেয়, বাসেদের মতো মানুষ কেন বঞ্চিত হবে?”

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দায়িত্বহীনতার কারণে বহু ত্রাণসামগ্রী সময়মতো বিতরণ হয়নি। নিয়মিত অফিস না করায় ঢেউটিন ও শুকনো খাবার বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও তা দেয়া হয়নি।

জানা যায়,কয়েক লাখ টাকা শুকনো খাবারের ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ আসলেও সেই টাকা দিয়ে এখনো কোন খাদ্য কেনা হয়নি৷ বিতরণের সময় অতিবাহিত হলেও কোনো তাড়া নেই এই কর্মকর্তার৷ তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে টিআর,কাবিটা,কাবিখা প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে প্রকল্পের সভাপতিরা পিআইওকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে বিল উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘এটি আমাদের আগে জানা ছিল না। গত সপ্তাহে আমরা যখন জেনেছি, তখন ইউএনও স্যারসহ যাওয়ার কথা ছিল৷ পরে ইউএনও স্যারও বললো আগে দেবনগড়ের কাজটা শেষ করি। পরে ওখানে গিয়ে ব্যবস্থা নিব। পরে রাত হওয়াতে আর যাওয়া হয়নি। আশা করি ঈদের পর এসে, চেয়ারম্যানও অবশ্য কাগজপত্র দিয়েছে৷ যে দৌঁড়াদৌঁড়ি চলতেছে সেসময়তে সেখানে যাওয়ার সময় হয়নি।’

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, ‘তাকে আমরা টিন দিবো, টাকাও দিবো। পিআইও সাহেব দেখতে যেতে চেয়েছেন মাঝে পরে ভুলে গেছেন। এ কারনে আর দেয়া হয়নি। তবে আমরা তাকে সহযোগিতা করবো।’

সারাবাংলা/আরএস

ঈদ প্রলয়ংকরী ঝড় বৃদ্ধ দম্পতি