নোয়াখালী: নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় পুরুষদের পাশাপাশি নারী ও শিশুদের অংশগ্রহণে পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৭ জুন) সকালে উপজেলার পোরকরা গ্রামে এই ব্যতিক্রমী ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে নারী ও শিশুর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,উপজেলার পোরকরা গ্রামের চাষীরহাট নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গত কয়েক বছর ধরে প্রতি ঈদেই এমন ব্যতিক্রমী জামাতের আয়োজন হয়ে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি, বরং গত ঈদুল ফিতরের চেয়ে এবার নারী মুসল্লিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
শুধুই সোনাইমুড়ী নয়, জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও কুমিল্লা থেকেও অসংখ্য মুসল্লি এই জামাতে অংশ নিতে আসেন। এতে নারী-শিশুদের জন্য ঈদের নামাজে অংশগ্রহণের এক দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদের জামাতের জন্য সকালে মুসল্লিরা ঈদগাহে আসছেন। নতুন পোশাকে সজ্জিত হয়ে পুরুষ মুসল্লিদের সঙ্গে তাদের স্ত্রী ও সন্তানরাও আসেন, জামাতে অংশ নেন।
ঈদগাহে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। নারীদের জন্য তিনপাশ কাপড় দিয়ে ঘিরে এবং ওপরে ছাউনি দিয়ে বিশেষ প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্যান্ডেলের ভেতরে বৈদ্যুতিক ফ্যান, খাবার পানি এবং আলাদা ওয়াশরুমের সুব্যবস্থা ছিল। নারীদের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য প্যান্ডেলের ভেতরে নারী স্বেচ্ছাসেবীও নিয়োজিত ছিলেন। এই সুব্যবস্থাগুলো নারী ও শিশুদের জন্য ঈদের নামাজকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলেছে।
নারী প্যান্ডেলের একজন স্বেচ্ছাসেবী তাসলিমা আক্তার। তার স্বামীর বাড়ি পোরকরা গ্রামেই। তিনি জানান, দুই বছর থেকে চাষীরহাট নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ঈদের জামাতের আয়োজন করা হচ্ছে। এখানে নারীদের নিরাপত্তা ও নামাজের সু-ব্যবস্থা থাকায় অনেকেই জামাতে নামাজ পড়তে আসেন। শিশু, কিশোরী, যুবতী, বৃদ্ধা সকল বয়সের নারীরাই এখানে আসছেন। অনেক মহিলারা জীবনে কখনো ঈদের নামজ পড়েনি। তারা এখানে এসে জামাতে নামাজ পড়তে পেরে অনেক খুশি।
সকাল ৮টা থেকে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ঈদগাহের মিম্বার থেকে খুতবা দেন ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তিনি মুসল্লিদের সামনে হজ্ব ও কোরবানির উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। হজ্বের বিষয়ে তিনি বলেন, বছরে একবার মুসলিম জাতি কাবার সামনে ঐক্যবদ্ধ হন। হজ্ব ঐক্যের শিক্ষা দেয়, ঐক্যবদ্ধ না হলে মুসলিম জাতি নির্যাতন থেকে বাঁচার আর কোনো পথ নাই।
কোরবানির উদ্দেশ্যে বলেন, কোরবানি হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের মাধ্যম। আল্লাহ বলেছেন, পশুর রক্ত-মাংস আল্লাহর কাছে পৌছায়না। পৌছায় তাকওয়া, খোদাভীতি। আসল কোরবানি আখেরী নবী মোহাম্মদ (স.) আমাদের দেখিয়ে গিয়েছেন। তারা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য রণাঙ্গনে শহিদ হয়েছেন। সুদ, ঘুষ, অর্থ পাচার, ধাপ্পাবাজি করে পশু জবাই দিলেই কোরবানি হয় না। নিজের ভেতরের পশুত্বটাকে কোরবানি দিতে হবে। ওটাকে কোরবানি দিলেই প্রকৃত কোরবানি হবে।
ঈদের নামাজ শেষে মুসলিম জাতির ঐক্য ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করা হয়। নামাজ শেষে মুসল্লিদের কোলাকুলি, শিশুদের কোলাহলে এক আনন্দঘর পরিবেশের সৃষ্টি হয় ঈদগাহ জুড়ে। পরে মুসল্লিদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।