ঢাকা: আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার বেড়েছে। তবে বাস্তবায়ন হার বাড়লেও অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২৪-মার্চ ২০২৫) বাজেট বাস্তবায়নের হার অর্ধেকেরও কম। আলোচ্য সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মূল বাজেটের ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের ৫২ দশমিক ০২ শতাংশ। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল মূল বাজেটের ৪৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ ও সংশোধিত বাজেটের ৪৬ দশমিক ৩২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত: বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর বিপরীতে নয় মাসে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ১২০ কোটি টাকা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা।
বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট প্রাপ্তির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে উভয় লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে যথাক্রমে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর বিপরীতে বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এনবিআর-এর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮২ কোটি টাকা। এটি মূল লক্ষ্যমাত্রার ৫৩ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৫৯ শতাংশ। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এনবিআর-এর আওতাধীন মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই ২০২৪-মে ২০২৫) মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। তবে এটি সাময়িক হিসাব। এর মধ্যে শুল্ক খাতে সাড়ে ৯২ হাজার কোটি টাকা, ভ্যাট খাতে ১ লাখ সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা এবং আয়কর খাতে ১ লাখ ৪ হাজার ৪১৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে।
বাজেট উপাত্ত অনুযায়ী, সংশোধিত বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর বিপরীতে বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আদায় হয়েছে যথাক্রমে ৬ হাজার ২১৩ কোটি টাকা এবং ৪৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
বাজেট উপাত্ত অনুযায়ী, সংশোধিত বাজেটে সার্বিক ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ৯ মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৭ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ১ দশমিক ৪ শতাংশ। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৪ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা (এটি ছিল জিডিপি’র দশমিক ৯ শতাংশ)। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরের ৯ মাসে ঘাটতি কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে বিদায়ী অর্থবছরের নয় মাসে বৈদেশিক উৎস থেকে ১৬ হাজার ২২৯ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৮৫ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। সংশোধিত বাজেটে এ দুই খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে যথাক্রমে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা এবং ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বৈদেশিক উৎস থেকে ২৭ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৯৭ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)-এর আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কাটছাঁট করে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর বিপরীতে ৯ মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ৬৮ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে মূল এডিপি’র প্রায় ২৬ শতাংশ ও সংশোধিত এডিপি’র ৩১ দশমিক ৫৩ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল মূল এডিপি’র ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও সংশোধিত এডিপি’র ৩১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ওই অর্থবছরের ৯ মাসে মোট এডিপি ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা।