যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের উদ্দেশে রওনা হওয়া ত্রাণবাহী জাহাজ থেকে আটক হওয়া সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ফ্রান্সগামী একটি ফ্লাইটে করে ইসরায়েল ছেড়েছেন।
মঙ্গলবার (১০ জুন) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলা হয়েছে, গ্রেটা থুনবার্গ ফ্রান্স হয়ে সুইডেনগামী একটি ফ্লাইটে করে ইসরায়েল ছেড়েছেন। ওই পোস্টের সঙ্গে থুনবার্গের দুটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে থুনবার্গকে বিমানে উঠতে দেখা গেছে।
এর আগে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, যারা বিতাড়নসংক্রান্ত কাগজপত্রে সই করতে রাজি হবেন না এবং ইসরায়েল ছাড়তে চাবেন না, তাদের বিতাড়িত করার অনুমতি পেতে বিচারিক কর্তৃপক্ষের সামনে হাজির করা হবে।
২২ বছর বয়সী গ্রেটা থুনবার্গ সুইডেনের পরিবেশবিষয়ক আন্দোলনকর্মী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিমানে ভ্রমণ এড়িয়ে চলেছেন। ২০১৯ সালে নিউইয়র্কে একটি জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য সমুদ্রপথে যাত্রা করার মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন গ্রেটা।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বাহো বলেন, সোমবার ম্যাডলিন নামের জাহাজটি থেকে গ্রেটা থুনবার্গের সঙ্গে আটক হওয়া অন্তত পাঁচজন অধিকারকর্মী স্বেচ্ছায় ইসরায়েল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাদের বিতাড়িত করা হবে।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, ‘গত রাতে আমাদের কনসাল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাতে আটক ছয়জন ফরাসি নাগরিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হন। তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন স্বেচ্ছায় ইসরায়েল ছাড়তে সম্মত হয়েছেন এবং আজই দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অপর পাঁচজনকে বিতাড়িত করা হবে।’
২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এমন অবস্থায় অনাহারে ভুগে বেশ কয়েকটি শিশু মারা যায়। ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ‘ম্যাডলিন’ নামের এ জাহাজ ১ জুন ইতালির সিসিলির কাতানিয়া শহর থেকে যাত্রা শুরু করে।
ম্যাডলিন জাহাজে গ্রেটা থুনবার্গসহ বিভিন্ন দেশের মোট ১২ জন মানবাধিকারকর্মী ছিলেন। গ্রেটা থুনবার্গ ছাড়াও ফরাসি চিকিৎসক ও কর্মী বাপতিস্ত আন্দ্রে, আল জাজিরার সাংবাদিক ওমর ফায়াদ, ব্রাজিলিয়ান কর্মী ও ফ্রিডম ফ্লোটিলা ব্রাজিলের সমন্বয়ক থিয়াগো অ্যাভিলা, ফরাসি-ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের গ্রিন পার্টির সদস্য রিমা হাসান, তুর্কি মানবাধিকারকর্মী সুয়াইব ওর্দু। এছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের আরও কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং সমুদ্র সংরক্ষণকর্মীও ছিলেন এতে।
ম্যাডলিন জাহাজে আরও ছিলেন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান, জার্মানির ইয়াসেমিন আচার, ফ্রান্সের ব্যাপতিস্ত আন্দ্রে, ব্রাজিলের থিয়াগো আভিলা, ফ্রান্সের ওমর ফায়াদ, পাস্কাল মৌরিয়েরাস, ইয়ানিস মোহামদি, তুরস্কের সুলাইব ওর্দু, স্পেনের সার্জিও তোরিবিও, নেদারল্যান্ডসের মার্কো ফন রেনেস ও ফ্রান্সের রিভা ভিয়া।
জাহাজে আনা ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ছিল চিকিৎসার সরঞ্জাম, ময়দা, চাল, শিশুদের দুধ (বেবি ফর্মুলা), ডায়াপার, নারীদের স্যানিটারি পণ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ কিট, ক্রাচ ও শিশুদের কৃত্রিম অঙ্গ।