ঢাকা: প্রতি বছর ১২ জুন বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এই দিবসটি চালু করে, যার উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের শ্রমে নিযুক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা এবং তাদের জন্য নিরাপদ, আনন্দময় ও শিক্ষামূলক শৈশব নিশ্চিত করা।
দিবসটির মূল উদ্দেশ্য-
- এই দিবসটি পালনের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো-
- শিশু শ্রম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা
- শিশুদের শিক্ষা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা
- সরকারের পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি স্তরকে শিশু শ্রম নির্মূলে কার্যকর ভূমিকা রাখতে উদ্বুদ্ধ করা
বিশ্বব্যাপী বাস্তবতা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে এখনও প্রায় ১৬ কোটি শিশু শ্রমে নিযুক্ত, যাদের একটি বড় অংশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত রয়েছে। এই শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না, খেলতে পারে না, এমনকি সঠিকভাবে খেতে বা ঘুমাতেও পারে না।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশেও শিশু শ্রম একটি বড় সামাজিক সমস্যা। বিশেষ করে গৃহকর্ম, ইটভাটা, চা-বাগান, পোশাকশিল্প এবং পরিবহন খাতে হাজার হাজার শিশু শ্রমিক কাজ করছে। যদিও সরকার বিভিন্ন আইন ও কর্মসূচির মাধ্যমে শিশু শ্রম বন্ধে কাজ করছে, তবুও বাস্তবতার মুখে এই প্রচেষ্টা অনেক সময় ব্যাহত হয়।
যেখানে থাকার কথা বইয়ের ব্যাগ, সেখানে ভারী যন্ত্র
বিশ্বের নানা দেশে শিশুশ্রমকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল অনেক দেশে এটি এক কঠিন বাস্তবতা। শহরের অলিগলি বা গ্রামের হাট-বাজারে তাকালেই দেখা যায়, ৮-১২ বছরের শিশুরা বোঝা টানছে, বাসন মেজে দিচ্ছে, কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ যন্ত্রপাতির সঙ্গে কাজ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুশ্রম শুধু শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বাধা দেয় না, বরং একটি দেশের ভবিষ্যৎকেও দুর্বল করে তোলে। যারা শৈশবে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, তারা ভবিষ্যতে দক্ষ শ্রমিক বা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।
আমাদের করণীয়-
- শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিবাদ গড়ে তোলা
- দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা
- স্থানীয় প্রশাসন ও এনজিওদের সঙ্গে সমন্বয় করে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা
- গৃহকর্মে শিশু ব্যবহার না করা এবং অন্যকেও নিরুৎসাহিত করা
আলোর দিশা কোথায়?
সরকার শিশু শ্রম নিরসনে আইন করেছে, আছে জাতীয় শিশু নীতিমালাও। বিভিন্ন এনজিও ও সামাজিক সংগঠন শিশুশ্রম বন্ধে কাজ করছে। তবুও বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, শুধু আইন নয় প্রয়োজন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধ।
শিশু শ্রম সমাজের জন্য একটি লজ্জার বিষয়। একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার শিশুদের উপর। তাই শিশুদের সুরক্ষা ও উন্নয়নে আমাদের সবারই দায়িত্ব রয়েছে। ১২ জুন শুধু একটি দিন নয়, এটি আমাদের উপলব্ধি করার সময়, যে প্রতিটি শিশুর হাসি আমাদের সমাজের এক টুকরো আয়না।