ঢাকা: দেশের ব্যাংক খাতে কোটিপতি গ্রাহকদের আমানতের তুলনায় ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। অন্যদিকে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতার তুলনায় কোটিপতি আমানতকারী এবং ঋণগ্রহীতার সংখ্যা অতি নগণ্য। কিন্তু নগণ্য হলেও ব্যাংক খাতে মোট আমানতের প্রায় ৪১ শতাংশ এবং মোট ঋণ প্রবাহের ৭৬ শতাংশই কোটিপতিদের দখলে।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, গত আশির দশক পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে মাঝারি ও ক্ষুদ্র আমানতকারীদের একটা বিশেষ অবস্থান ছিল। পরবর্তীতে গত নব্বইয়ের দশক থেকে ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীদের আধিপত্য বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বিগত শেখ হাসিনা সরকার দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার আগমুহুর্তে গত ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৬৩ এবং তাদের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। এটি ব্যাংক খাতে মোট আমানতের ৩১ শতাংশ।
ওই সরকার ক্ষমতার তিনটি মেয়াদ পূর্ণ করার পর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কাছাকাছি সময় (জুন ২০২৪) পর্যন্ত দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ও আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪ জন এবং তাদের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। এটি ব্যাংক খাতে মোট আমানতের ৪২ শতাংশ।
সর্বশেষ পরবর্তী ৯ মাসে (জুলাই ২০২৪-মার্চ ২০২৫) দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ও আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২ জন এবং তাদের মোট আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। আমাতকারীর এ সংখ্যা ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর মাত্র দশমিক ০৭ শতাংশ এবং আমানতের পরিমাণ ব্যাংক খাতে মোট আমানতের ৪০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সে হিসাবে গত ১৬ বছরে ব্যাংক খাতে কোটিপতিদের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ১০ শতাংশ।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সাধারণ আমানতকারীদের অধিকাংশই ব্যাংকে টাকা রাখেন সঞ্চয়ের জন্য। অন্যদিকে কোটিপতি গ্রাহকদের মধ্যে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বেশি।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটি টাকার ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন এবং তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। এটি ছিল ব্যাংক খাতে ওই সময়ে মোট ঋণ প্রবাহের সাড়ে ৬২ শতাংশ।
বিগত শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির প্রাক্কালে (জুন ২০২৫) দেশে কোটি টাকার ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার ৫৯০ জন এবং তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ২ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। এটি ছিল ব্যাংক খাতে মোট ঋণ গ্রহীতার ১ দশমিক ২ শতাংশ এবং মোট বিতরণকৃত ঋণের ৭৫ দশমিক ৩২ শতাংশ।
সর্বশেষ গত ৯ মাসে (জুলাই ২০২৪-মার্চ ২০২৫) ব্যাংক খাতে কোটি টাকার ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন এবং তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। এটি ব্যাংক খাতে মোট ঋণ গ্রহীতার ১ দশমিক ২১ শতাংশ এবং মোট বিতরণকৃত ঋণের ৭৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। সে হিসাবে ব্যাংক খাতে গত ১৬ বছরে ব্যাংক খাতে কোটিপতিদের ঋণের পরিমাণ ১৪ শতাংশ বেড়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে দেশে ১ কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ছিল মাত্র ২১২ জন। ১৯৯০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ১২৫ জনে এবং গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণ প্রবাহের ৩৮ শতাংশ। জুন ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের শেষে কোটি টাকা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪ হাজার ৫২৬ জন এবং ৮ হাজার ৮৪৪ জনে। আর আলোচ্য দুই বছরে গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণ প্রবাহের যথাক্রমে ৪৪ শতাংশ এবং প্রায় ৫২ শতাংশ। ২০০৭ সালে কোটি টাকা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২১ হাজার ২১৫ জন এবং গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণ প্রবাহের সাড়ে ৬০ শতাংশ।