ঢাকা: সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা নিয়ে ধারণা পেলেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে- বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের যে সময়েই নির্বাচন হোক না কেন, নির্বাচনের সেই প্রস্তুতি রয়েছে।
রোববার (১৫ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
সিইসি বলেন, ইসি কর্মকর্তাদের বলেছি যে, কোনো দলীয় স্বার্থে নয়, নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে হোক বা এপ্রিলের হোক- জাতীয় নির্বাচন যখনই হোক, আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। পাশাপাশি জাতির উদ্দেশে বলতে চাই- কেউ যদি মনে করেন যে, ব্যালট বাক্স লুট করে নিয়ে যাবেন, কেন্দ্র দখল করে জিতে যাবেন, তাহলে তারা দিবাস্বপ্নে আছেন। এটা এবার হতে দেব না ইনশাআল্লাহ। সবাই সুন্দর নির্বাচন চায়। তবে কিছু লোক আছে যারা মতলববাজ, নির্বাচন এলে পথ থেকে ভোটারদের সরিয়ে দেবে, ভোট বাক্স লুট করে নিয়ে যাবে, সেই সুযোগ এবার পাবে না। এটার আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “আমরা এখনও প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। সরকারের সাথে আমাদের যখন কথাবার্তা হবে, কী ধরনের চিন্তা-ভাবনা করছে, তখন আমরা ধারণা পাব, তখন সিদ্ধান্তে আসতে পারবো। তারিখ নিয়ে, অমুক দিন অমুক তারিখে ইলেকশন হবে- এ মুহুর্তে আমি এমন ঘোষণা দিতে পারবো না।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লন্ডনে যে ঘোষণাটা এসেছে, অন্যদের মতো মিডিয়া থেকে যেটুকু জানা, এর বাইরে কিছু নেই। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারবো না। ভেতরে কী আলাপ হয়েছে। শুধু যৌথ বিবৃতি যেটা দিয়েছে সেটা তো আন-সাইনড; এটাই বা কতটুকু জেনুইন তা-ও তো জানি না। কারো স্বাক্ষর থাকলে বুঝতাম এটা সরকারের পক্ষ থেকে একজন স্বাক্ষর করেছেন, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে একজন স্বাক্ষর করেছেন। তাহলে বুঝতাম এটা অফিশিয়াল ডকুমেন্ট।
তিনি বলেন, “অফিশিয়ালি কোনো কিছু না এলে কিছু করা যাবে না। ইতিহাসের পেছনেও ইতিহাস থাকে, আলাপের পেছনেও আলাপ থাকে। ঘোষণা একটা হয়েছে, নিশ্চয়ই ভেতরে অনেক আলাপ হয়েছে।…সেগুলোও আমাদের জানতে হবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।
নিরাপত্তা উপদেষ্টার প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, “নিরাপত্তা উপদেষ্টা একটা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ইসি হয়ত একটা তারিখ ঘোষণা করবেন।…এটা একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে।
বিশেষ ধরনের সরকার, বিশেষ ধরনের পরিস্থিতি, একদিকে সরকার বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করছে; সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করছে। বিচারটা বিচারকের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, তবে তরান্বিত করার বিষয় রয়েছে, এটি নিয়ে আলোচনা চলছে।
তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা ঐতিহাসিক নির্বাচন উপহার দেওয়ার কথা বলেছেন। এ নির্বাচনটা করবে নির্বাচন কমিশন। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সবাইকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনটি করতে চাচ্ছেন।
“আমাদের বুঝতে হবে, পরিস্থিতিটা বিশেষ পরিস্থিতি। সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে। আমি তো একটা জয়েন্ট স্টেটমেন্ট দেখেছি; রমজানের আগেও ইলেকশন হতে পারে ‘যদি’। এটাকে ফরমাল বা অফিশিয়াল ওয়েতে ভাবতে পারছি না “
“সিইসি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে তারিখ ঘোষণা করেন। দশ মাস আগে তারিখ ঘোষণা করে এমন দেখেছেন কোনো? আমরা এখনও কোনো টার্গেট ফিক্সড করি নি। সরকারের সাথে যখন এক্সচেঞ্জ অব আইডিয়া হবে, তারিখ নিয়ে যত আলাপ আলোচনা সরকারই করেছে। আমরা তো করি নি। সরকারের পরিবর্তিত কোনো চিন্তাভাবনা আছে কিনা,।”
এ সময় ভোটের ৫০-৬০ দিন আগে শিডিউল ঘোষণার আভাস দেন সিইসি।
“যেদিন শিডিউল ঘোষণা করবো তখন ভোটার তালিকা রেডি থাকতে হবে। যে তারিখে আমি শিডিউল ঘোষণা করবো, যেদিন ইলেকশন ডেট হয় তার মাস দুয়েক আগে শিডিউল হয়।, ৫০-৬০ দিন আগে হবে।”
সামনের কাজগুলোর বিষয়ে সিইসি জানান, ভোটার তালিকা আইনে সংশোধন করা হবে, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত প্রায়। দল নিবন্ধন ও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের মতো বড় কাজ রয়েছে।
তফসিল কবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওয়ার ফুটিংয়ে নির্বাচনের প্রস্ততি বলেছি। যখন ভোটের তারিখটি নির্ধারিত হবে তা এখনও হয় নি। সরকারের সাথে আলোচনা করে ধারণা পওয়া যাবে। এতদিন তো সরকারই আলোচনা করেছে, আমরা তো আলোচনা করি নি। উনাদের পজিশনটা আমাদের বুঝতে হবে। বোঝার পরে যে দিন তারিখ ঠিক হবে, এরাউন্ড দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা হবে। ঐতিহাসিকভাবে তা-ই, ৫৫ থেকে ৬০ দিন আগে তফসিল; তখন আমরা ঘোষণা করবো।”