Wednesday 18 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাগরস্নানে বাড়ছে ঝুঁকি
১০ বছরে মারা গেছে ৬০ জন, জীবিত উদ্ধার ৭৭৩

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৮ জুন ২০২৫ ০৮:১০ | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৫ ১১:৩৭

কক্সবাজারে সমুদ্রস্নানে মেতেছে পর্যটকরা। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার: সমুদ্রকন্যা কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণের জায়গা সাগরস্নান। তবে এই অপরূপ সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে অজানা এক মৃত্যুঝুঁকি। পর্যটকদের মধ্যে অতি উৎসাহী অনেকে লাল পতাকার নির্দেশনা না মেনে সাগরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যান। আর এতেই ঘটে মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনা।

সী-সেইফ লাইফগার্ডের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ১০ বছরে সমুদ্র সৈকতে সাগরে ভেসে যাওয়া পর্যটকদের মধ্যে মারা গেছে ৬০ জন। আর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৭৩ জনকে। সম্প্রতি কোরবানির ঈদে টানা ১০ দিনের ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটে কক্সবাজারে। এই সময়ে সাগরে ভেসে বাবা-ছেলেসহ মারা গেছেন ছয়জন।

বিজ্ঞাপন

১২০ কিলোমিটারের সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের ৯০ শতাংশই সাগরের নোনা জলে স্নান করেন। কিন্তু এই আনন্দঘন মুহূর্তের পেছনেই লুকিয়ে আছে মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর এক বিপদ। সাগরের নিচে সৃষ্টি হওয়া গুপ্ত খাল ও স্রোতের ফাঁদে পড়ে অনেকে তলিয়ে যায় সাগর তলে। তবে এই দুর্ঘটনায় বেশি পতিত হয় অসচেতন পর্যটক।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পর্যন্ত মাত্র ৫ কিলোমিটার জুড়ে কাজ করছেন সী-সেইফ লাইফ গার্ড নামে বেসরকারি একটি সংস্থার ২৭ জন উদ্ধারকর্মী। কিন্তু সমুদ্র সৈকতের বাকি ১১৫ কিলোমিটার সম্পূর্ণ অরক্ষিত। এইসব জায়গায় যদি কেউ নিখোঁজ হন তাহলে উদ্ধার কার্যক্রম প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এদিকে পর্যটকদের অনেকেই সুইমিং জোনসহ নিরাপদ গোসলের নির্দেশনা মানছেন না। ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সী-সেইফ লাইফ গার্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাগরে গোসল করতে নামা পর্যটকদের অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়। তাদের ওখান থেকে ফিরাতে চাইলে কথা শোনে না। অনেক সময় খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু পর্যটকরা আমাদের মেহমান হওয়ায় জোর করা যায় না। এতেই ঘটে বিপদ।’

সী-সেইফ লাইফ গার্ডের আরেক সদস্য জানান, ‘বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে লাখো পর্যটকের ঢল পড়ে। তখন চাইলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তার মধ্যে পর্যটকদের অনেকে লাল-হলুদ পতাকার নির্দেশনা মানতে চায় না। সুইমিং জোনের বাইরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় গিয়ে গোসল করে। তারা একটু সচেতন হলে এমন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।’

সী-সেইফ লাইফগার্ডের সদস্য। ছবি: সংগৃহীত

সী-সেইফ লাইফগার্ডের সদস্য। ছবি: সংগৃহীত

এসব দুর্ঘটনা এড়াতে সচেতনতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লোকবল, দক্ষতা ও নজরদারি বাড়ানোর কথা বলছেন বেড়াতে আসা পর্যটকরা। ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মোবারক হোসেন বাপ্পী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্রমণ করতে এসে কখনো অতি উৎসাহী হয়ে বিপদে পড়া যাবে না। নিজের জীবন রক্ষার্থে নিজেকেই সর্তক থাকতে হবে।’

সিলেট থেকে আসা রাব্বী চৌধুরী নামে আরেক পর্যটক সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সাগরস্নানে সর্তক হওয়া জরুরি। কারণ, ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অনেকে সাগরে গোসলে ঝুঁকির বিষয়ে কিছু জানেন না। এক্ষেত্রে প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব লোকবল বাড়ানো। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তারা দায়িত্ব এড়াতে পারে না।’

এ প্রসঙ্গে সী-সেইফ লাইফগার্ডের টিম ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘অতিরিক্ত ভিড়, অব্যবস্থাপনা আর পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে সমুদ্রস্নান অনেক সময় হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী। বছরের পর বছর ধরে চলছে এই অব্যবস্থাপনা। এ নিয়ে সম্মিলিতভাবে সকলের আন্তরিকভাবে কাজ করা দরকার। তবে বেড়াতে আসা পর্যটকদেরও সচেতন হতে হবে। লাল-হদুল পতাকা বুঝে বা সী সেইফ লাইফগার্ডদের নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করা উচিত।’

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্রমণরত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সবসময় মাঠে রয়েছে। বেশি পর্যটক সমাগম হলে বিভিন্ন পয়েন্টে টিম ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করা হয়। এ ছাড়া, লাইফগার্ড ও বীচ কর্মীরা মাঠে রয়েছে। তাদের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে প্রশাসন। তবে নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতে পর্যটকদেরও সচেতন হতে হবে।’

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য কক্সবাজারে বিলাসবহুল হোটেল-মোটেল হয়েছে অনেক। কিন্তু পর্যটকদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না?- এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।

সারাবাংলা/পিটিএম

জীবিত উদ্ধার ঝুঁকি মৃত্যু সাগরস্নান সী-সেইফ লাইফগার্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর