ঢাকা: স্টোর রেন্টের (কন্টেইনার রাখার জন্য ভাড়া) ৫০ কোটি টাকা ফাঁকি দিতে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিই জাল করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানিকৃত মূল্যবান যন্ত্রপাতি খালাস করা প্রতারক চক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য জানান।
গ্রেফতার মো. তৌহিদুল ইসলাম শুভ (৩০) নিজেকে সামরিক বাহিনীর মেজর পরিচয় দিতেন। এ সময় তার কাছ থেকে সামরিক পোশাক পরা মেজর পদের ভুয়া পরিচয়পত্র, মেজর পদের ভিজিটিং কার্ড, আটটি মোবাইল ফোন, ১০টি মিম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই এবং একটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কন্টেইনারগুলো রাখার তিন দিন পর থেকে ভাড়া দিতে হয়। সেই অনুযায়ী গত জানুয়ারি পর্যন্ত ৪০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে। আর সেটি জরিমানা হিসেবে ধরা হয় আরও ৫২ কোটি টাকা। সেই হিসেবে মোট ৯২ কোটি টাকার বকেয়া স্টোর রেন্টের এভারেজে ৫০ কোটি টাকা ফাঁকি হিসেবে ধরা হয়েছে।’
জসীম উদ্দিন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘তৌহিদুল ইসলামকে রাজধানীর সোবহানবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে সামরিক পোশাকপরা মেজর পদের ভুয়া পরিচয়পত্র ও ভিজিটিং কার্ড জব্দ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল কোম্পানী লিমিটেড মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপনের জন্য বিশেষ সুবিধায় বিভিন্ন সময় আনা প্রায় ১৩৯টি কন্টেইনারে মূল্যবান যন্ত্রপাতি আমদানি করে। কিন্তু ঠিক সময়ে খালাস না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে বসুন্ধরা কোম্পানির স্টোর রেন্ট বকেয়া পড়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল কোম্পানি লিমিটেড স্টোর রেন্ট মওকুফের জন্য নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন থাকাকালীন বসুন্ধরা গ্রপ অব কোম্পানিজের সিনিয়র ম্যানেজার ফয়েজুর রহমান একটি স্টোর রেন্ট মওকুফপত্র গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য আবু হানিফার (৩৩) কাছ থেকে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর হতে যন্ত্রপাতি খালাসের চেষ্টা করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্টোর রেন্ট মওকুফ পত্রের বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষকে জানালে পত্রটি জাল ও ভুয়া মর্মে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানায়। স্টোর রেন্ট মওকুফের জাল পত্রের বিষয়টি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়ে সদর থানায় মামলা করে। মামলাটি সিআইডি চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রোর ওপর তদন্তভার দেওয়া হয়। পরে অভিযুক্ত মো. তৌহিদুল ইসলাম শুভকে গ্রেফতার করা হয়। কথিত মেজর তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী জেলাধীন গোয়ালন্দ ঘাট থানায় প্রতারণাসহ দুটি এবং আরএমপি বোয়ালিয়া থানায় প্রতারণার দুটি মামলার তথ্য পাওয়া যায়।’
সিআইডির এই কর্মকতা বলেন, ‘এর আগে বিভিন্ন সময়ে প্রতারক চক্রের মো. ফয়েজুর রহমান (৪২), মোহাম্মদ আবু হানিফা (৩৩), মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম আমিন (৪১), মো. রনি রাজ হোসেনকে (২৯) গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে মোহাম্মদ আবু হানিফা ও আমিনুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।’
৫০ কোটি স্টোর রেন্ট ফাঁকির মামলাটি বর্তমানে সিআইডির চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রোতে তদন্তনাধীন। প্রতারক চক্রের অন্যান্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।