Tuesday 24 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুলিশ হঠাৎ গ্রেফতারে সরব!

উজ্জল জিসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৪ জুন ২০২৫ ১০:১৬

বাংলাদেশ পুলিশ। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: হঠাৎ করেই পুলিশ আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে সরব হয়ে উঠেছে। এক রাতেই রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের আট নেতাকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি। গ্রেফতার করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনকে। এ ছাড়া, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নুরুল হুদা ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুল মাওলাকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। যদিও পুলিশ বলছে, গ্রেফতার প্রক্রিয়া আগে থেকেই চলমান ছিল।

পুলিশ সূত্র বলছে, সামনে জুলাই-আগস্ট মাস। ৩৬ জুলাইয়ের বর্ষপূর্তির আয়োজন চলছে। এ উপলক্ষ্যে আওয়ামী রেজিম নানাভাবে ষড়যন্ত্র করতে পারে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জুলাই উপলক্ষ্যে সক্রিয় হওয়ার জন্য সবধরণের কার্যক্রম শুরু করেছে। তাই আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মীদের নামে মামলা রয়েছে এবং যারা পলাতক আসামি কেবলমাত্র তাদেরকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। এজন্য হঠাৎ গ্রেফতার অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ডিএমপি বলছে, গত ২২ জুন সকালে রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় দিনের ভোট রাতে করার অভিযোগে সাবেক তিনি সিইসিসহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ মোট ২৪ জনের নামে মামলা করে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান। এরপর রাতের বেলা অভিযান শুরু করে থানা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এই মামলার আসামিদের ধরতে ডিবির অন্তত ডজনখানেক টিম অভিযানে নামে।

যদিও তার আগেই রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে গ্রেফতার করে। এর পর তাকে ডিবির হাতে তুলে দেওয়া হয়। ডিবির আরেকটি টিম গভীর রাতে ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আরেক সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়। কিন্তু ডিবির অভিযান টের পেয়ে তিনি পালিয়ে যান। তবে ওই অভিযানে ডিবির জালে আটকা পড়েন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল মাওলা।

সেইসঙ্গে অভিযান চালানো হয় সাবেক সিইসি রকিব উদ্দিনের বাসায়ও। তাকেও পায়নি ডিবি পুলিশের টিম। এরকম বেশ কয়েকটি অভিযানে ডিবির জালে আটকা পড়ে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। ডিএমপি জানিয়েছে, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতার হওয়া অন্যরা হলেন, মুন্সিগঞ্জ -৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব (৫৫), বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য মো. তরিকুল ইসলাম (৩৮), ঢাকা মহানগর ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওহায়াব (৫৮), লালবাগ থানা ২৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বাবু (৪৩) ও আওয়ামী লীগের ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের সহ-দফতর সম্পাদক জাকির হোসেন আলী (৬১)। গ্রেফতার এসব নেতাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হঠাৎ করে কেন গ্রেফতার অভিযান জোরদার করা হলো? জানতে চাইলে ডিএমপির একজন যুগ্ম কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রাজধানীসহ সারাদেশে গ্রেফতার অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সামনে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে আওয়ামী রেজিম। আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীরা এরই মধ্যে গোপন বৈঠক করে সারাদেশে লোকজন সেটাপ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, দেশে যাতে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি করা যায় সেজন্য পরিকল্পনা ঠিক করেছেও বলে সূত্র জানিয়েছে। তারা বিপুল অংকের টাকাও বিনিয়োগ করেছে বলে জানা গেছে।’ এজন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান জোরদার করা হয়েছে বলে জানান ডিএমপির এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ তালেবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে যেসব অভিযান হচ্ছে তা নিয়মিত অভিযানের অংশ। তবে ২২ জুন রাতে একসঙ্গে সব টিম মুভ করেছিল। এটি মাঝেমধ্যেই করা হয়ে থাকে। সামনে অভিযান আরও জোরদার হবে। জুলাই-আগস্টে দেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে পারে একটি চক্র। সেজন্য অভিযান জোরদার করার নির্দেশনা রয়েছে। কারণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখাই পুলিশের কাজ।’

অভিযান শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক না কি সারাদেশে চালানো হচ্ছে? জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের সহাকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর সারাবাংলাকে বলেন, ‘অভিযানের পর সারাদেশের প্রতিদিনের চিত্র কতজন গ্রেফতার হলো, কারা গ্রেফতার হলো এর সবকিছু চার্ট আকারে গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য পাঠানো হচ্ছে। তবে সম্প্রতি জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এটি শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশেও অভিযান জোরদার হবে।’

পুলিশের একজন অতিরিক্ত আইজিপি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসছে জুলাইতে যাতে কেউ দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেজন্য অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, অথচ পলাতক রয়েছেন- তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এ ছাড়া, যারা যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।’

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীরা যারা দেশে-বিদেশে রয়েছেন তাদের প্রত্যেকেই জুলাই-আগস্টের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, মব সৃষ্টিসহ নানাভাবে দেশকে একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্র করতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তারা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মিটিং করছে, ঝটিকা মিছিল করছে। জুলাইতে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নিয়েছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে ঠিক থাকে সেজন্য অভিযান জোরদারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ সবাইকে সার্বক্ষণিক মাঠে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে সেটা তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সেখানে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালাবে।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

আওয়ামী লীগ গ্রেফতার নেতাকর্মী সরব হঠাৎ