Wednesday 25 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বামপন্থীদের রোডমার্চ: চট্টগ্রামবাসীকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ জুন ২০২৫ ১৮:১৪ | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৫ ১৯:৩৯

সংবাদ সম্মেলনে বাম নেতারা। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা ও রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোর দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম ‘সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’। এতে রোডমার্চের সমাপনী দিনে আগামী শনিবার (২৮ জুন) চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনতাকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানানো হয়।

বুধবার (২৫ জুন) নগরীর চেরাগী পাহাড়ে ‘বৈঠকখানা মিলনায়তনে’ এ সংবাদ সম্মেলনে বাম নেতারা রোডমার্চ কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

আগামী শুক্রবার (২৭ জুন) ঢাকা থেকে রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু হবে। পথে পথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে সমাবেশের পর রোডমার্চের বহর শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামে প্রবেশ করবে। এদিন বিকেল ৩টায় নগরীর বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে পদযাত্রা করে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের সামনে গিয়ে সমাপনী সমাবেশের মধ্য দিয়ে দুই দিনের কর্মসূচি শেষ হবে।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা কমিউনিস্ট পার্টির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নূরুচ্ছাফা ভূঁইয়া বলেন, ‘সক্ষমতার বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে প্রমাণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল একটি আধুনিক টার্মিনাল। কিন্তু ২০২৪ সালে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার সেটিকে আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে লিজ চুক্তির আলোচনা শুরু করে।’

সংবাদ সম্মেলনে বাম নেতারা। ছবি: সারাবাংলা

‘স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার যা বাস্তবায়ন করতে পারেনি, বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি বিনোয়োগের কথা বলে আওয়ামী লীগের সেই দেশ বিরোধী চুক্তি বাস্তবায়ন করার নতুন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে হাজার কোটি টাকা খরচ করে স্বয়ংসম্পূর্ণ নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নতুন করে কোনো বিনিয়োগের সুযোগ নেই এবং এটি সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের অংশ বলেও আমরা মনে করি।’

লিখিত বক্তব্যে নুরুচ্ছাফা আরও বলেন, রাখাইনের জন্য কথিত মানবিক করিডোর বা ত্রাণ চ্যানেল দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেখানে জান্তা সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। এ ধরনের করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে যুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার মত ভূরাজনৈতিক চক্রান্ত।

মানবিক করিডোরের নামে কিংবা ত্রাণ চ্যানেল যাই হোক সামরিক শিল্প কিংবা বন্দর বিদেশিদের লিজ দেওয়ার মতো এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে বিরত রাখতে রোডমার্চ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই, আপনারা শনিবার রাজপথে নেমে আসুন। চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া এবং করিডোরের নামে ভূরাজনৈতিক চক্রান্ত রুখে দিতে আপনারা প্রতিবাদে শামিল হোন।’

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা বলেন, ‘এ সরকার তো কোনো স্থায়ী সরকার না। জাতীয় কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয়ে অগ্রসর হতে হলে এ ধরনের অস্থায়ী সরকার কোনো মৌলিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা সেটা ভাবার বিষয়। জনগণের কোনো অংশের সাথে আলোচনা না করে হঠাৎ করে সরকারের উচ্চ মহল থেকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর কোথায় কে আছে, তাদের ডেকে আনেন… তারা আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর ঠিক করে দেবে। কথাটা শুনতে যত সহজ, ভেতরের বিষয়টা তত সহজ না।’

তিনি বলেন, ‘ভূ-রাজনীতি নানা ধরনের জটিলতায় পড়ে গেছে। কখন বাংলাদেশ কোনো জটিলতায় পড়ে যায়, কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশ জড়িয়ে যায় কী না এসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেয়া এবং রাখাইনের কথিত মানবিক করিডোর এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে জনগণের প্রতিনিধিদের। জনগণ যাদের ম্যান্ডেট দিবে তারাই জনগণের হয়ে এ ধরনের কাজ করা উচিৎ।’

‘আমরা দেশের উন্নতি চাই। আমাদের দেশবাসী ভালো থাকুক, আমরা চাই। কিন্তু বিদেশি কোনো চত্রান্তের গহ্বরে আমাদের জাতীয় জীবন পড়ে যায় কি না এটা আমাদের দেখতে হবে। বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গেছে, কিন্তু সে দেশের কোনো লাভ হয়নি। শেষ বিচারে ক্ষতিই করেছে।’

অশোক সাহা আরও বলেন, ‘১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কর্ণফুলীর মোহনায় মার্কিন প্রতিষ্ঠান এসএসএকে বেসরকারি পোর্ট করতে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা বামপন্থীরা বড় আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় আন্দোলনকারীরা জয়ী হয়েছিল।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক শফি উদ্দীন কবির আবিদ, বাসদের জেলা ইনচার্জ আল কাদেরি জয়, গণমুক্তি ইউনিয়নের নেতা রাজা মিয়া ও সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতা শাহিন মঞ্জুর উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

বামপন্থী রোডমার্চ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর