ঢাকা: রাজধানীসহ সারাদেশে আজ থেকে শুরু হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা নিজেদের আগামীর দিকে এগিয়ে নিতে আজকে অনেকেই স্বপ্নপুরণের নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।
কিন্তু এ নতুন পথচলাতে আক্ষেপ জুলাইয়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের। কারণ আজকের এইচএসসি পরীক্ষায় তারা নেই, তাদের জায়গাটা আজ শূন্য। বেঁচে থাকলে তারাও আজ পরীক্ষায় অংশ নিতো। জীবনের নতুন পথচলায় নতুন স্বপ্ন নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতো আগামীর সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনায়। কিন্তু তারা আজ নেই।
গত বছরের জুলাইয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দাবিতে অভ্যুত্থান চলাকালে আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়েছেন অনেকেই। আর শহিদদের সেই তালিকায় মাঝে ছিলেন কয়েকজন এইচএসসি শিক্ষার্থীও। তাদের একজন আবদুল্লাহ বিন জাহিদ নেই। শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। গত বছরের ৫ আগস্ট রাতে উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। বেঁচে থাকলে আজ পরীক্ষার খাতায় ভবিষ্যতের নতুন স্বপ্ন বুনতেন তিনি।
আবদুল্লাহর মতো আরেকজন পরীক্ষার্থী ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ডাকনাম ফাইয়াজ। ফেসবুকে তার নাম ছিল ‘ফারহান ফাইয়াজ’। সেই নাম এখন হয়ে উঠেছে জুলাই অভ্যুত্থানের এক প্রতীক। ১৮ জুলাই আন্দোলনের সময় তার বুকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মারা যান ঘটনাস্থলেই।
মারুফ হোসেন ২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় তাকে গ্রেফতার করেছিল ডিবি। সেই থেকেই তাকে নিয়ে পরিবার ছিল শঙ্কিত। এরপর বরিশালে নানা বাড়িতে রাখা হয়। কাজীরহাট একতা ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার তার এইচএসসি পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। কিন্তু গত ১৯ জুলাই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন তিনি। তার মরদেহ পাওয়া যায় তিন দিন পর, অর্ধগলিত অবস্থায়।
এদিকে, আফিকুল ইসলাম সাদ (১৮) ছিলেন সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। ৫ আগস্ট ধামরাইয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ৮ আগস্ট মৃত্যু হয় তার। ফ্রিল্যান্সিং করে পরিবারের জন্য কিছু করতে চাওয়া সাদ ছিল গ্রাফিক ডিজাইনে পারদর্শী। মৃত্যুর আগের দিন, ৪ আগস্ট তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘যে দেশের ইতিহাস রক্ত দিয়ে শুরু হয়েছে, ওই ইতিহাস আবার লিখতে রক্তই লাগবে।’
সাদ, আবদুল্লাহ, মারুফদের মতো আরও নাম না জানা অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যারা জুলাই অভ্যুত্থানে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। তারা সবাই আজ পরীক্ষার হলে না থাকলেও তারা হাজারো অশ্রুতে আর রক্তাক্ত ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।