ঢাকা: ঘটনা যাই ঘটুক, নেতার নাম উচ্চকিত করা,, নিজের নামটা ফলাও করে প্রচার করে এবং দলের ব্যানারটা সবার উপরে তুলে ধারার মধ্যেই যেন রাজনৈতিক সফলতা— এমন সব আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনা এবং আত্মপ্রচারের চিরায়ত অভ্যাসের কারণে যে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশের মঞ্চ সজ্জায় নেতা-নেত্রীর নামের ভীড় এবং ঘনঘটায় ‘ব্যাক ব্যানার’, ডিসপ্লে বোর্ড, ডায়াস ডিজাইনে চোখ রাখা দায় হয়ে যায়।
কে প্রধান অতিথি, কে বিশেষ অতিথি, কে প্রধান বক্তা, কে বিশেষ বক্তা, কে সভাপতিত্ব করবেন, কে সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করবে, সমাবেশে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কী, সমাবেশের টাইটেল, আমন্ত্রিত অতিথি কারা?— এসব দিয়ে সমাবেশ মঞ্চটাকে রীতিমতো খবরের কাগজে পরিণত করা হয়। নানা রঙের ব্যবহার মঞ্চটাকে করে তোলে যাত্রাপালার রঙ্গমঞ্চ।
কিন্তু এবার এক ব্যতিক্রম উদাহরণ তৈরি করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। কয়েক ঘণ্টা পর শুরু হতে যাওয়া তাদের ঐতিহ্যাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশ মঞ্চে এসবের বালাই নেই। নেই দলের নামটিও। বিশাল মঞ্চের ব্যাক ব্যানারটা পুরোই সাদা। সেখানে কেবল দলীয় প্রতীক ‘পাখা’ শোভা পাচ্ছে। মঞ্চের বাউন্ডারি বর্ডার, বেজমেন্ট, সাইডের জানায়ান্ট স্ক্রিনের স্কয়ার বর্ডারে গোলাপী মোড়ক দেওয়া হয়েছে, যার ফলে এক অনন্য সৌন্দর্যের দ্যূতি তৈরি হয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ডাকা এই মহাসমাবেশে দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম সভাপতিত্ব করবেন। বক্তব্য দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ছাড়াও ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে একমত— এমন সব দলের নেতারাও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন। সে কারণে, মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতারা নাম মঞ্চের ব্যাক ব্যানারে সাঁটিয়ে হীনম্যন্বতার পরিচয় দিতে চায়নি ইসলামী আন্দোলনের নীতিনির্ধারকেরা।
তাদের এই অভূতপূর্ব ইতিবাচক মনোভাব বিমোহিত করেছে দলের সাধারণ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের। মো. কাউসার সেখ নামের কর্মী মঞ্চের কয়েকটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মঞ্চে এবার নেই কোনো ব্যক্তির নাম, নেই অতিথির তালিকা। শুধু একটিই প্রতীক, একটিই বার্তা। এই ব্যতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের মনে করিয়ে দেয় ব্যক্তি নয়, আদর্শই মুখ্য। নেতৃত্বের পরিচয় ব্যক্তি নয়, চিন্তা ও মূল্যবোধে। এভাবেই একটি প্রতীক হয়ে ওঠে একটি জাতির সম্ভাবনার মুখপাত্র। যারা নাম নিয়ে রাজনীতি করে তারা সাবধান হোন! পরিকল্পনার এই পরিণত ভাবনা সত্যিই প্রশংসনীয় ও সময়োপযোগী। এটাই হলো আদর্শের প্রতি অঙ্গীকারের আধুনিক উপস্থাপন।’’
জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের প্রচার ও দাওয়া বিষয়ক সম্পাদক মেখ ফজলুল করীম মারুফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘‘দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) শাহ ইফতেখার তারিক এই মঞ্চ ডিজাইন করেছেন আর মজলিশে আমেলা এটা অনুমোদন করেছে।’’
মূলত, ‘ব্যক্তি’র চেয়ে ‘প্রতীক’কে বড় করে তোলার চিন্তা থেকেই মঞ্চে কেবল ‘প্রতীক’ রাখা হয়েছে। আমাদের নির্বাচনী পোস্টারেও নেতার ছবি থাকে না, থাকে কেবল প্রতীকের ছবি’’— বলে শেখ ফজলুল করীম মারুফ।
তিনি আরও জানান, ‘‘কিছু ক্ষণের মধ্যেই এক লাখ নেতা-কর্মী শুধু দলীয় প্রতীকের ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশ স্থলে প্রবেশ করবে। সেখানেও কোনো নেতার নাম ও ছবি থাকবে না।’’