Saturday 28 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কঙ্গো ও রুয়ান্ডার প্রতীক্ষিত শান্তিচুক্তি ওয়াশিংটনে সই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৮ জুন ২০২৫ ১১:২৬ | আপডেট: ২৮ জুন ২০২৫ ১৩:২৫

কঙ্গো ও রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: বিবিসি

ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) ও রুয়ান্ডা শুক্রবার (২৭ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে বহু প্রতীক্ষিত একটি শান্তিচুক্তি সই করেছে। কয়েক দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও সহিংসতা অবসানে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পাশাপাশি, চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রকে কঙ্গোর মূল্যবান খনিজসম্পদের ওপর প্রবেশাধিকার পেতে সহায়তা করতে পারে বলেও ধারণা বিশ্লেষকদের।

এই চুক্তিতে পূর্ব কঙ্গোতে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ‘নিরস্ত্রীকরণ, প্রত্যাহার এবং শর্তসাপেক্ষ সংহতকরণ’-এর বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও পুরো চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তারপরও এটি যুগান্তকারী হিসেবে দেখছেন যুক্তরাষ্ট্র ও কঙ্গোর নেতারা।

বিজ্ঞাপন

শান্তিচুক্তি সইয়ের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‘গৌরবময় বিজয়’ বলে অভিহিত করেন। হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে এক অনুষ্ঠানে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, কঙ্গো ও রুয়ান্ডার প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আজ এই সংঘাত ও ধ্বংসযজ্ঞের অবসান ঘটলো, এবং এই অঞ্চল আশার নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো।’

চুক্তিতে প্রথমে সই করেন আফ্রিকান দেশ দুটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পরে ট্রাম্প নিজেও এতে স্বাক্ষর করে মার্কিন সমর্থনের প্রতীক রূপে এটি ঘোষণা করেন।

চলতি বছরের শুরুতে কঙ্গো-রুয়ান্ডা উত্তেজনা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেলে কাতার তা নিরসনে সক্রিয় হয়। কাতারের মধ্যস্থতায় কঙ্গো ও রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্টরা দোহায় সাক্ষাৎ করেন এবং একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম২৩ সম্প্রতি পূর্ব কঙ্গোর বিশাল এলাকা গোমা, বুকাভু ও দুটি বিমানবন্দর দখলে নেয়। হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং কয়েক লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়। এই পরিস্থিতিতে কঙ্গো যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কামনা করে এবং তার বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।

রুয়ান্ডা সরকার এম২৩ গোষ্ঠীকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। বরং তারা বলছে, তারা নিজের প্রতিরক্ষার জন্যই সীমান্ত অঞ্চলে সৈন্য মোতায়েন করেছে, বিশেষত এফডিএলআর-এর মতো হুতু বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হুমকির কারণে। অপরদিকে, কঙ্গো সরকার দাবি করে, এম২৩-র পেছনে রয়েছে রুয়ান্ডার প্রত্যক্ষ সহায়তা।

চুক্তির এক খসড়া ফাঁস হওয়ার পরদিন রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভিয়ের এনডুহুংগিরেহে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘চুক্তি নিয়ে আলোচনা গোপন থাকার কথা ছিল, কিন্তু সেটা লঙ্ঘন হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তিপত্রে কোথাও রুয়ান্ডান সেনাবাহিনী, সেনা প্রত্যাহার বা রুয়ান্ডার বাহিনী শব্দগুলো নেই।’

তবে কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স চিসেকেদির কার্যালয় থেকে জানানো হয়, চুক্তিতে রুয়ান্ডার সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা না হলেও ‘বিচ্ছিন্নকরণ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে যা অনেক বিস্তৃত অর্থ বহন করে।

এই শান্তিচুক্তি এমন এক সময় হলো, যখন পূর্ব আফ্রিকার এই অঞ্চলে জ্বালানি, প্রযুক্তি ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে বিশ্বশক্তিগুলোর আগ্রহ বাড়ছে। ফলে এই চুক্তি কতটা টেকসই হয়, এবং বাস্তবে এর কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সারাবাংলা/এনজে

কঙ্গো রুয়ান্ডা শান্তিচুক্তি সই