Saturday 28 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন
বিএনপি ছাড়া সবাই একমঞ্চে

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ জুন ২০২৫ ২২:৪৯ | আপডেট: ২৮ জুন ২০২৫ ২৩:৪৮

বিএনপি ও অন্যান্য দল। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি ছাড়া মোটামুটি সবাইকে একমঞ্চে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন এই দলটি শনিবার (২৮ জুন) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে মহাসমাবেশ করেছে, সেখানে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ‘হালের ক্রেজ’ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এবং গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। ইসলামী আন্দোলনের সুরে সুর মিলিয়ে তারাও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

এদিন দুপুর ২ টায় মহাসমাবেশ শুরুর পর একে একে মঞ্চে আসেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এবং মাওলানা আব্দুল হালিম, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মূসা বিন ইজহার, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমাদ আবদুল কাদের, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি, এনসিপির সদস্য সচিব মুহাম্মদ আখতার হোসাইন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানি, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক, বোধিজ্ঞান ভাবনা কেন্দ্রের সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে যোগ দিয়ে পিআর পদ্ধিতে নির্বাচনের দাবির পক্ষে তাদের অবস্থান জানান দেন।

অর্থাৎ জুলাই আন্দোলনের প্রায় সব স্টেকহোল্ডার মহাসমাবেশ মঞ্চে এসে ইসলামী আন্দোলনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের যৌক্তিকতা প্রমাণের চেষ্টা করেছে। কিন্তু, স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই মহাসমাবেশে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। সংস্কার, বিচার এবং পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আয়োজিত ওই মহাসমাবেশ মঞ্চ ছিল বিএনপিশূন্য!!

দলীয় সূত্রমতে, বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী, ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, মুজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবপি পার্টি) এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট নেজামে ইসলামী পার্টিকে নিয়ে স্বতন্ত্র ইসলামী মোর্চা গঠনের যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন, তারই একটা মহড়া ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশ। অধিকন্তু, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির পক্ষে বিএনপি যেহেতু একমত নয়, সেহেতু তাদের আর ডাকা হয়নি মহাসমাবেশে।

জানা গেছে, আওয়ামী বিরোধী রাজনীতিতে ইসলামিস্টদের সঙ্গে কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে কাজ করলেও মৌলিক কতকগুলো জায়গায় বিএনপির সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন এবং জামায়াতের বিস্তর মতভেদ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পিআর পদ্ধতি এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন।

বিএনপি চায় যতদ্রুত সম্ভব বিদ্যমান পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন। ইসলামী আন্দোলন এবং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ চায় পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন। বিএনপি চায় আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তারপর স্থানীয় নির্বাচন। ইসলামী আন্দোলন এবং জামায়াতে ইসলামী চায় আগে স্থানীয় নির্বাচন পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মৌলিক এই জায়গায় মতভেদ থাকার কারণে মহাসমাবেশে দাওয়াত দেওয়া হয়নি বিএনপিকে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের প্রচার ও দাওয়া বিষয়ক সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি যেহেতু পিআর পদ্ধতির সঙ্গে একমত না, সেহেতু মহাসমাবেশে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সঙ্গে একমত, কেবল তাদেরকেই মহাসমাবেশে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।’

‘তাছাড়া, আমরা একসঙ্গে আওয়ামীবিরোধী আন্দোলন করলেও মৌলিক কিছু ক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে মতবিরোধ আছে। এরই মধ্যে বিএনপিবিরোধী একটা বলয় তৈরি হয়েছে, সেই বলয়ে যারা আছেন, তাদেরকেই মহাসমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল’— বলেন ফজলুল করীম মারুফ।

এদিকে পিআর পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক মিত্রদের এই ইউটার্ন নিয়ে প্রশ্ন করলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন তারা চায়, সেটা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে চাইতেই পারে। কিন্তু, বাংলাদেশে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের কোনো ইতিহাস নাই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটা নতুন আইডিয়া।’

‘আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা যারা বলছেন, তাদের একটা উদ্দেশ্য আছে। যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চায়, তাদেরও একটা উদ্দেশ্য আছে। হয় নির্বাচন বিলম্বিত করা, না হয় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে না দেওয়া— এ ধরনের উদ্দেশ্য তাদের থাকতে পারে। তবে, আমরা জনগণকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আছি’- বলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি আমরা অনেক আগেই প্রত্যাখান করেছি। পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য কখনো উপযুক্ত নয়।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ জাতীয় নাগরিক পার্টি জামায়াত নির্বাচন পিআর পদ্ধতি বিএনপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর